লন্ডন : ভারতে নগরবাসীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে ১০০টা স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে ভারত। কিন্তু এক দল গবেষক বলছেন, নগরায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলির ওপর বিশেষ নজর না দিলে স্মার্ট সিটি গড়ার এই পরিকল্পনা পরিবেশের পক্ষে সাংঘাতিক হতে পারে। এই পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো হল বিদ্যুৎ, জল, আবর্জনা ফেলার জায়গা ইত্যাদি।
যুক্তরাজ্যের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরিকল্পিত নগরায়নের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, এই স্মার্ট সিটিগুলিতে তিন তলা থেকে পাঁচ তলা বাড়ির জায়গা নিচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ তলার উঁচু অট্টালিকা।
গবেষকরা বলছেন, ২০১৫ সালে এই স্মার্ট সিটি গড়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করতে গিয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই পরিকল্পনা সুস্থায়ী, পরিবেশ-বান্ধব এবং ‘স্মার্ট’।
গবেষকরা বলছেন, ক্রমবর্ধিত জনঘনত্বের ফল হল বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরিষেবার চাহিদার অতিরিক্ত বৃদ্ধি। এই সবের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ, জল ইত্যাদি। পাশাপাশি বাড়ছে বর্জ্যপদার্থের পরিমাণ। বাড়ছে গ্রিন হাউজ গ্যাস, ধুলো নোংরা আর বাড়ছে নালানর্দমা। এই গবেষণায় তাঁরা তুলে ধরেছেন, মুম্বইয়ের ১৬.৫ একর আয়তন বিশিষ্ট ‘ভেন্ডি বাজার’ এলাকায় গড়ে তোলা ‘স্মার্ট সিটি’র উদাহরণ। তাঁরা বর্তমান শহরের সঙ্গে প্রস্তাবিত শহরের তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। তাতে বাড়ির সংখ্যা, তার উচ্চতা, জনসংখ্যা, সেখানে পার্কিং-এর ব্যবস্থা, খোলা জায়গা ইত্যাদি অনেক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তার থেকেই তাঁরা এই স্মার্ট সিটির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছেন।
বলেছেন, যেখানে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ, পানীয় ও প্রয়োজনীয় জলের অভাব, উপযুক্ত নিকাশি ও আবর্জনা ফেলার সুব্যবস্থার অভাব রয়েছে, সেখানে জনসংখ্যা আরও বাড়লে তার সাংঘাতিক কুপ্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপর।
গবেষক হিউ বিয়ার্ড বলেন, স্মার্ট সিটির লক্ষ্য হল বিশ্বমানের হওয়া, উন্নত, বাসযোগ্য, সবুজ আর ‘পরিবেশ-বান্ধব’ হওয়া। কিন্তু এখানে শহরের জনঘনত্ব ক্রমশ বাড়বে। পরিস্থিতি যা দাঁড়াবে তা বাস্তবিক পরিকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিহীন। এই পরিকল্পনায় এলাকার উন্নতির কথা বলা হলেও তা থেকে উদ্ভুত সমস্যাগুলোর সমাধান কী ভাবে হবে সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। তিনি বলেন, সেই দিকে নজর রেখেই মুম্বইয়ে স্মার্ট সিটি বানানোর এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করা যায় না।
এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে কনটেম্পোরারি আর্বান অ্যাফেয়ার্স পত্রিকায়।