
ঝাড়গ্রাম: সোমবার পালিত হল গরাম পুজো। এ রাজ্যের জঙ্গল মহল, ওড়িশার কেঁওঝোড় ও ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম তথা আদি জনজাতি কুড়মি অধ্যুষিত প্রতি গ্রামেই ১ মাঘ এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। গরাম হল গ্রাম রক্ষার দেবতা। ১ মাঘ এই জনজাতির কাছে বছরের নতুন দিন। এদের ভাষায় ‘আইখ্যান যাত্রা’ । গ্রামের লায়া হলেন পূজারি। প্রতি গ্রামের সীমান্তে প্রাচীন বৃক্ষের নিচে পোড়ামাটির হাতি, ঘোড়ার মূর্তি পুজো করা হয়। বলি প্রথাও চালু আছে।
গরাম দেবতা প্রাচীন গ্রাম্য ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। প্রাচীন কালে সালিশিতে মীমাংসা না হলে, এই দেবতার মাথায় হাত রেখে উভয় পক্ষকে সত্য পাঠ করতে বলা হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই দেবতার নাম শুনলেই অপরাধী দোষ কবুল করে নিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দেশের বিচার ব্যবস্থায় আদালতে গীতা বা কোরাণ ছুঁয়ে সত্য পাঠ এই নীতিরই অনুকরণ। গ্রামে অকাল মৃত্যু বা বসন্ত রোগ দেখা দিলে ওই গ্রামে পুজো বন্ধ থাকে। ১ মাঘ শুভ দিন হিসেবে ধরা হয়। এ ব্যাপারে ড. পশুপতি প্রসাদ মাহাত বলেন, গরাম পুজো খুবই প্রাচীন। বিভিন্ন সংস্কৃতির আগ্রাসনও তা বিনষ্ট করতে পারেনি। আদি জনজাতির কৃষি সভ্যতার এই পরম্পরা কুড়মি জনজাতির সংস্কৃতির হাত ধরে আজও স্বমহিমায় সর্বত্রই গরাম পুজো পালিত হচ্ছে।
আর এক বিশেষজ্ঞ ড. ক্ষিতিশচন্দ্র মাহাতর মতে, আদি জনজাতি জঙ্গল জীবন থেকে গ্রাম্য সভ্যতা গড়ে তোলে, তাঁরাই গ্রাম রক্ষার দেবতা হিসেবে গরাম পুজো পালন করে আসছেন।