উৎসব
রাখিবন্ধন নিয়ে এই ঐতিহাসিক কাহিনি দু’টি কি জানেন?

খবরঅনলাইন ডেস্ক: পুরাণের পাতা ওলটালে যেমন রাখিবন্ধনের বেশ কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়, ঠিক তেমনই ইতিহাসের পাতা ওলটালেও রাখিবন্ধনের কিছু ঘটনার কথা জানা যায়। যেমন –
আলেকজান্ডার ও পুরুর ঘটনা –
৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেছিলেন, এই কথা সবাই জানি। এরই সঙ্গে রয়েছে আর একটি ঘটনাও। আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানার কাহিনি। রোজানা রাজা পুরুকে একটি পবিত্র সুতো পাঠিয়েছিলেন। এর পর তিনি পুরু রাজাকে আলেকজান্ডারের ক্ষতি করতে মানা করেছিলেন। হিন্দু রাজা পুরু। তিনি রাখির মাহাত্ম্য বোঝেন ও তাকে সম্মান করেন। তাই রোজানার কথা রাখতে আর সেই পবিত্র সুতোর বন্ধনকে সম্মান দিতে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি নিজে আলেকজান্ডারকে আঘাত করেননি।
রানি কর্ণবতী ও মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের কাহিনি –
ইতিহাসে আরও একটি কাহিনি পাওয়া যায় রাখিবন্ধনকে কেন্দ্র করে। ঘটনা ১৫৩৫ সালের। মুঘলসম্রাট হুমায়ুনকে একটি রাখি পাঠান চিতোরের রানি কর্ণবতী। গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহ এই সময় চিতোর আক্রমণ করেছিলেন। তাতে বিধবা রানি অসহায় বোধ করেছিলেন। সেই পরিস্থিতিতেই তিনি রাখি পাঠিয়েছিলেন সম্রাটকে ও সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।
হুমায়ুন এই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতেন। তাকে সম্মান জানিয়েই রানির সুরক্ষার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তাতে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে বাহাদুর শাহ চিতোর দখল করে নিয়েছিলেন। এই অবস্থায় নিজের সম্মান বাঁচাতে ১৩ হাজার পুর-নারীকে নিয়ে জহরব্রত পালন করেন রানি। তাঁরা ১৫৩৫ সালের ৮ মার্চ আগুনে আত্মহুতি দেন।
এর পর হুমায়ুন চিতোরে পৌঁছোন। তখন আর রানি নেই। শেষে বাহাদুর শাহকে চিতোর থেকে উৎখাত করে কর্ণবতীর পুত্র বিক্রমজিৎ সিংহকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করেন। কিন্তু এই ঘটনাটি নিয়ে মতপার্থক্য আছে। অনেক ঐতিহাসিকের লেখায় এর উল্লেখ পাওয়া যায় না। অথচ মধ্য সপ্তদশ শতকের রাজস্থানি লোকগাথায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
উৎসব
পৌরাণিক তথ্য অনুযায়ী ইনিই হলেন মহাগণপতি

খবরঅনলাইন ডেস্ক : গণপতির ৩২টি রূপের মধ্যে মহাগণপতি হল একটি বিশেষ রূপ। অনেক শাস্ত্রজ্ঞের মতে এটি তান্ত্রিক রূপ।
গণেশের অন্য রূপগুলির মতো মহাগণপতি রূপটিও গজানন অর্থাৎ হস্তিমস্তক বিশিষ্ট। তাঁর গায়ের রঙ সিঁদুর অথবা নবোদিত সূর্যের মতো লাল টকটকে। মহাগণপতির অধিকাংশ মূর্তিতেই কপালে তৃতীয় নেত্র, মাথায় অর্ধচন্দ্র ও দশটি হাত থাকে। এই দশটি হাতের এক একটি থাকে এক একটি সামগ্রী। এই দ্রব্যগুলি বিভিন্ন দেবতার দেওয়া উপহার। আবার অনেক ক্ষেত্রে মনে করা হয় গণপতি যে ওই দশ দেবতার সমান কর্মক্ষমতা রাখেন এটি তারই প্রতীক। হাতে থাকে পদ্ম, ডালিম, গদা, চক্র, তাঁর নিজেরই ভাঙা দাঁত, পাশ, একটি রত্নখচিত কলস, নীলপদ্ম, ধানের শিষ ও ধনুকাকার ইক্ষুদণ্ড।
এই বস্তুগুলি সমগ্র দেবমণ্ডলীর মধ্যে গণপতির শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। কোনো কোনো মূর্তিতে মহাগণপতির হাতে বহুবীজবিশিষ্ট একটি জামির দেখা যায়। জলের পাত্রের বদলে অমৃত কলস, ডালিমের পরিবর্তে আম, গদার পরিবর্তে শঙ্খ বা শাঁখ থাকে।
জামির সৃষ্টিকর্তা দেবতা শিবের রূপক। ধনুকাকার ইক্ষুদণ্ডটি প্রেমের দেবতা কামের রূপক। তীররূপী ধানের শিষটি পৃথিবীর দেবী ধরার রূপক। এই ইক্ষুদণ্ড ও ধানের শিষ প্রজননশক্তি ও উর্বরতার প্রতীকও। চক্র বিষ্ণুর প্রতীক। গদা বিষ্ণুর বরাহ অবতারের রূপক। রত্নখচিত কলসটি কোনো কোনো মূর্তিবর্ণনায় মহাগণপতির শুঁড়ে পাওয়া যায়। এটি সম্পদের দেবতা কুবেরের রূপক। মনে করা হয় মহাগণপতির কাছ থেকে পাওয়া সৌভাগ্য ও আশীর্বাদেরও প্রতীক এটি।
শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, মহাগণপতি পাঁচ শক্তিগণেশের অন্যতম। এই শক্তিগণেশ হল গণেশের সেই সব রূপ, যে রূপে গণেশের সঙ্গে একজন শক্তিদেবী অবস্থান করেন। এই শক্তি হলেন সংশ্লিষ্ট দেবতার স্ত্রী অথবা দিব্যসঙ্গিনীও হতে পারেন। মহাগণপতিরও বাঁ কোলে তেমনই একজন শ্বেতবর্ণা শক্তিদেবীকে দেখা যায়। এই শক্তিদেবীর ডান হাতে একটি পদ্ম থাকে এবং বাঁ হাত দিয়ে তিনি মহাগণপতিকে আলিঙ্গন করে থাকেন। এই পদ্ম পবিত্রতার প্রতীক। মথুরার দসবোদ্ধি গণেশ মন্দিরে মহাগণপতির শক্তিকে সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী অর্থাৎ মহালক্ষ্মী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অপর একটি ধর্মগ্রন্থ মতে এই শক্তি দেবীর নাম পুষ্টি। মহাগণপতির যে বাঁ হাতে নীল পদ্ম ধরা থাকে সেই হাতেই তিনি তাঁর শক্তিদেবীকে আলিঙ্গন করে থাকেন। এ ছাড়াও মহাগণপতিকে বিভিন্ন দেবদেবী ও অসুররা ঘিরে থাকেন।
উৎসব
ইঁদুর কেন গণেশের বাহন জানেন?

খবরঅনলাইন ডেস্ক : জগতে প্রাণী জীবজন্তুর অভাব নেই। তা হলে শেষমেশ একটি সামান্য পুঁচকে ইঁদুর কেন এত বিশালাকার গণেশের বাহন বলতে পারেন। বাহন মানে তো বহন করে নিয়ে যায় যে, তা হলে এই ছোট্টো ইঁদুরের পক্ষে কি সম্ভব গণপতিকে বহন করে নিয়ে যাওয়া। এর পেছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি।
স্বর্গে ইন্দ্রপুরীতে ইন্দ্রের সভায় গান গেয়ে সকলের মনোরঞ্জন করতেন ক্রঞ্চ নামে এক গন্ধর্ব। এক দিন বামদেব নামে এক ঋষি এসে উপস্থিত হন সেই সভায়। শুধু যে উপস্থিত হলেন তা-ই নয়, সেখানে তিনি তাঁর বেসুরো গলায় গান গাইতে শুরু করেন। সেই গান শুনে নিজের হাসি চাপতে পারেননি গন্ধর্ব ক্রঞ্চ। সেই হাসি দেখে ফেলেন বামদেব। আর যাবে কোথায় সঙ্গে সঙ্গে ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন বামদেব। তিনি ক্রঞ্চকে অভিশাপ দেন। অভিশাপের ফলে ক্রঞ্চ ইঁদুর হয়ে যান। মুনি শাপ দেন কোনো দিন আর গান গাইতে পারবেন না ক্রঞ্চ। তক্ষনি তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো ফল হয় না। তিনি ইঁদুর হয়ে যান এবং এসে পড়েন মর্ত্যের খোলা মাঠে। তবে মুনি বলেছিলেন কোনো দিন যদি গণেশ তাঁকে বাহন করেন তা হলে মুক্তি মিলবে।
যা-ই হোক, মাঠের কাছেই ছিল পরাশর মুনির কুটির। ইঁদুর ক্রঞ্চ সেখানেই নিজের খাদ্যের সন্ধানে হানা দিতে শুরু করেন। এ দিকে ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে ওঠে সেখানকার বাসিন্দারা।
এর পর এক দিন গণেশ সেই মুনির কুটিরে পৌঁছোন। জানতে পারেন ইঁদুরের কুকীর্তির কথা। তখন তাকে ধরতে উদ্যত হন গণেশ। অবশেষে ধরেও ফেলেন। কিন্তু ক্রঞ্চ নিজের পরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন গণেশকে। বলেন, বামদেব বলেছিলেন যে স্বয়ং গণপতি যদি তাকে তাঁর বাহন করেন, তবেই ঘুচবে তাঁর দুঃখ। এ কথা শুনে ইঁদুরকেই তিনি নিজের বাহন করে নেন।
উৎসব
জানেন গণেশের একটি দাঁত ভাঙা কেন?

খবরঅনলাইন ডেস্ক : গণেশের যে কোনো মূর্তি দেখলেই একটি বিষয় দেখা যায় যে, একটি দাঁত ভাঙা। এই দাঁত ভাঙার পেছনেও রয়েছে একাধিক গল্প।
‘মহাভারত’ অনুসারে এই মহাকাব্য মহর্ষি বেদব্যাস এবং গণেশের লেখা। পুরাণ অনুসারে, একটি শর্তেই এই মহাকাব্য বলা ও লেখার কাজ করা হয়েছিল। শর্ত ছিল, একটানা বলে যাবেন বেদব্যাস আর তা একটানা একটুও না থেমে লিখে যাবেন গণপতি। তবে শুধু লিখলেই হবে না। পুরোটা বুঝতেও হবে একই সঙ্গে। এই ভাবে মহাকাব্য ‘মহাভারত’ লেখা শেষ করতে তাঁদের দু’ জনের সময় লেগেছিল তিন বছর।
এই ভাবে টানা লিখতে লিখতে এক সময় হঠাৎই লেখার পালকটি ভেঙে যায়। তখন উপায়? থামা তো যাবে না। তা হলে? তখন গণপতি নিজের একটি দাঁত ভেঙে নিয়ে তা দিয়ে লেখা চালিয়ে যান।
এই গল্পটি ছাড়াও আরও একটি কাহিনি প্রচলিত আছে গণেশের দাঁতভাঙা নিয়ে। দ্বিতীয় কাহিনিটি হল গণেশ ও পরশুরামের। এক বার পরশুরাম দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর গৃহে যান। কিন্তু গণপতি দরজাতেই তাঁকে আটকে দেন। ভেতরে প্রবেশ করতে দেন না। কারণ সেই সময় মহাদেব ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। তখনই ক্রোধান্বিত হয়ে পরশুরাম গণপতির একটি দাঁত কট করে কেটে দেন।