ভালো-মন্দ দুই প্রভাবই রয়েছে আমিষ খাবারের। বেশ কিছু গবেষণায় আমিষ খাবার, বিশেষ করে রেড মিটকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, বেশি মাংস খাওয়া অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, কারণ এর ফলে ব্যাঘাত ঘটে মাইক্রোবায়োমে।
সম্প্রতি ই-বায়োমেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশি মাংস খেলে পাকস্থলীতে অবস্থিত নির্দিষ্ট ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া (মাইক্রোবায়োম) কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
কী এই অটোইমিউন

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) একটি অটোইমিউন রোগ, যাতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ প্রভাবিত। এই রোগের চিকিৎসায় একটা বড়ো অংশের অর্থ ব্যয় করে আমেরিকা। গবেষণায় প্রকাশ, মূলত এই রোগটি নির্দিষ্ট এলাকায়, বিশেষ করে উত্তর মধ্য অক্ষাংশ এলাকায় বেশি দেখা যায়। এটাও প্রমাণিত, ভৌগলিক অবস্থানও খাদ্য-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে দৈনন্দিন খাদ্যভ্যাস, অনাক্রম্যতা এবং অটোইমিউনের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগ এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি।
অটোইমিউন বা স্বতঃঅনাক্রম্য রোগ এমন এক ধরনের শারীরিক অবস্থা যা শরীরের একটি স্বাভাবিক অংশে অস্বাভাবিক অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ প্রকারের স্বতঃঅনাক্রম্য রোগ সম্পর্কে জানা গিয়েছে। শরীরের প্রায় সব অংশই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কী বলছে গবেষণা

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এতে বড়ো ভূমিকা রয়েছে ব্যাকটেরিয়ার। আবার আমাদের খাদ্যগ্রহণের উপর নির্ভর করে ব্যাকটেরিয়ার কাজকর্ম। গবেষকরা বলেছেন, অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে। মাইক্রোবায়োম, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, খাদ্য এবং রক্তের বিপাকীয় পদার্থ নিয়ে এই গবেষণাটি করেছেন ইউকন হেলথ স্কুলের ডা. ইয়াঞ্জিও এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. লারা পিক্কিও। সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৪৯ জন স্বেচ্ছাসেবক। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন অটোইমিউন রোগী এবং ২৪ জন সুস্থ।
গবেষকদের মতে, দেখা গিয়েছে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া, অটোইমিউন এবং এর তীব্রতার মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। রোগীদের মধ্যে অটোইমিউন মার্কার এবং সিগনেচার মেটাবোলাইটও বেশি পাওয়া গিয়েছে। তবে এগুলো কী ভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এতে খাবারের ভূমিকা কী, তা বেশ চমকপ্রদ।
এখনই উপসংহার নয়

গবেষকদের দাবি, খাদ্য, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম, ইমিউন সিস্টেম, বিপাক, প্যাথোজেনেসিস এবং অটোইমিউনের অগ্রগতির মধ্যে সমন্বিত সম্পর্ক খুঁজতে এটাই প্রথম কোনো গবেষণা। তবে এই জটিল প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র একটা বিষয়কে বিবেচনা করেই সিদ্ধান্তে আসতে চাননি তাঁরা।
তবে এ বিষয়ে, গবেষকরা বেশি মাংস খাওয়ার মধ্যেই অন্যতম কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, যাঁরা বেশি মাংস খেয়েছেন, তাঁদের পেটে ব্যাকটেরয়েড থিয়েটামাইক্রন কম ছিল। এই ব্যাকটেরিয়া শাকসবজিতে কার্বোহাইড্রেট হজমের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে গবেষণায় এখনই উপসংহার টানতে নারাজ গবেষকরা। তাঁরা আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর ভাবে এই গবেষণা চালিয়ে যেতে চান। তাঁদের আশা, তখনই হয়তো অটোইমিউন রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার একটা যুৎসই পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।
আরও পড়তে পারেন: কোভিড আবহে কেন জরুরি ভিটামিন ডি? ঘাটতি মেটাতে যা করতে হবে
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।