ইংরেজিতে প্রবাদ আছে রোজ একটা করে আপেল খেলে অসুখবিসুখ দূরে থাকে। তেমন ভাবে বলা যায় রোজ একটা করে কমলালেবু খেলে মানসিক উদ্বেগ ও অবসাদকে ঠেকানো সম্ভব। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের ইনস্ট্রাক্টর ও ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রাজ মেহতা তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, রোজ একটা করে কমলালেবু খেলে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে ২০%। গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বায়োমেডসেন্ট্রাল নামক জার্নালে।
গবেষণায় দেখা গেছে, টক ভাবযুক্ত ফল কমলালেবু খেলে মানুষের অন্ত্রে থাকা ভালো ব্যাক্টেরিয়া ‘F. prausnitzii’ সক্রিয় হয়ে ওঠে যা নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন ডোপামিন ও সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। এই ২ হরমোন মন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। গবেষক রাজ মেহতা জানান, গোটা বিশ্বে ২৮ কোটি মানুষ মানসিক অবসাদগ্রস্ত। ৭০% রোগী প্রাথমিক ভাবে অবসাদের কথা জানেন না। সেইমতো প্রথম থেকে চিকিৎসার সুযোগ পাননি। এক্ষেত্রে ডায়েট বিশেষ ভূমিকা পালন করে মানসিক অবসাদ রুখতে। ‘
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়া মেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর ফাইবার যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সর্দিকাশির মতো নানান সংক্রামক অসুখ দূর করার আশ্চর্যজনক ক্ষমতা আছে কমলালেবুর। আস্ত কমলালেবুর চেয়েও বেশি উপকারী কমলালেবুর খোসা। রোগ প্রতিরোধ শক্তিতে ভরপুর ওপরের আস্তরণটি। শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, ভিটামিনে সমৃদ্ধ কমলালেবুর খোসা তাই ফেলে না দিয়ে খাওয়া উচিত।
আশ্চর্য হলেও সত্যি একটা আস্ত কমলালেবুতে যে পুষ্টি মেলে, তার ৪ গুণ বেশি পুষ্টি মেলে লেবুর খোসায়। আমরা জানি রসে টুইটম্বুর কমলালেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পলিফেনলে সমৃদ্ধ কমলালেবুর খোসা। আমাদের দৈনন্দিন যে পরিমাণ ভিটামিন সি’র প্রয়োজন তার ১৪% পাওয়া যায় মাত্র ১ চামচ (৬ গ্রাম) কমলালেবুর খোসায়। একটা গোটা ফলের থেকে যে পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়, তার ৩ গুণ মেলে মাত্র এক চামচ খোসা থেকে। ফলের চেয়েও ৪ গুণ বেশি ফাইবার পাওয়া যায় খোসায়। গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন সি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হার্ট ও ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পাচন ক্রিয়াকে ভালো রাখে। বিভিন্ন রকমের ক্যানসার রোধ করতেও সক্ষম। কমলালেবুর খোসায় আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোভিটামিন এ, ফোলেট, রাইবোফ্লেভিন, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬ আর ক্যালসিয়াম। এছাড়া আছে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল যা ডায়াবেটিস, স্থুলতা, অ্যালজাইমার্স প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গবেষণায় দেখা গেছে ফলের চেয়েও বেশি পলিফেনল আছে কমলালেবুর খোসায়।