মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির কাছে নলেন গুড়, আখের গুড়, পাটালি গুড়ের কদর থাকলেও তেমন ভাবে কদর নেই ভেলিগুড়ের। স্বাস্থ্য সচেতন বাঙালি এখন রান্নায় চিনির বদলে অনেক ক্ষেত্রে ভেলিগুড় ব্যবহার করে। কিন্তু সর্বগুণসম্পন্ন ভেলিগুড় শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে।
কতটা উপকারী ভেলিগুড়
(১) ভেলিগুড় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ভেলিগুড় শরীরে থাকা বিভিন্ন ডাইজেস্টিভ এঞ্জাইমকে সক্রিয় করে তোলে। বাওয়েল মুভমেন্টকে স্টিমিউলেট করে। খাবার খাওয়ার পর এক টুকরো ভেলিগুড় খেলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হতে শুরু করে।
(২) ভেলিগুড় হল প্রাকৃতিক বডি ক্লিনজার, যা প্রকারান্তরে লিভার বা যকৃতের ওপর কাজের চাপ কমায়। শরীর থেকে সব টক্সিন বের করে দিয়ে লিভার পরিষ্কার করে ভেলিগুড়। লিভারকে ভালো ভাবে ডিটক্সফাই করতে সক্ষম এক টুকরো ভেলিগুড়।
(৩) সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের মতো সমস্যা দূর করতে পারে ভেলিগুড়। উষ্ণ গরম জলে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে খেতে হবে ভেলিগুড়। চায়ের সঙ্গেও চিনির বদলে খান ভেলিগুড়। ভেলিগুড় আমাদের শরীরে গরম উত্তাপ তৈরি করে যা ঠান্ডার সময় একান্ত দরকার। তাই প্রবল শীতে সর্দি-কাশির সমস্যা এড়াতে বেশি করে খাওয়া দরকার ভেলিগুড়।
(৪) রক্তকে শুদ্ধ করে রোগমুক্ত রাখতে পারে ভেলিগুড়। তাই নিয়মিত যদি অল্প পরিমাণে প্রতি দিন ভেলিগুড় খাওয়া হয় তা হলে ভেতর থেকে রক্ত শুদ্ধ হয়। শরীর একেবারে সুস্থ থাকে। যে কোনো রকমের অসুখ থেকেও দূরে থাকা যায়।
(৫) দস্তা, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ আর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ ভেলিগুড় শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হতে দেয় না। সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় ভেলিগুড়।
(৬) শরীর থেকে সমস্ত অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দূর করতে নিয়মিত ভেলিগুড় খাওয়া উচিত। শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুস, অন্ত্র, পাকস্থলী, খাদ্যনালি পরিষ্কার রাখে ভেলিগুড়। বিশেষ করে কারখানা বা কয়লা খাদানের মতো দূষিত এলাকায় যারা কাজ করে তাদের ভেলিগুড় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
(৭) মাসিকের সময় অনেকেরই পেশিতে বিশেষ করে তলপেটের পেশিতে খামচে ধরে। সে ক্ষেত্রে পুষ্টিতে ভরপুর ভেলিগুড় খেলে সাময়িক ভাবে উপশম মেলে। মাসিকের ঠিক আগে অনেকেরই মুড সুইং হয়। এটাকে বলা হয় প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রম (পিএমএস)। তাই এ রকম সমস্যা থাকলে মাসিক শুরুর আগেই খান ভেলিগুড় যা এন্ডোরফিনস নিঃসারণে সাহায্য করবে। এই এন্ডোরফিন্স রিল্যাক্স করতে সাহায্য করবে।
(৮) লোহা আর ফোলেটে সমৃদ্ধ ভেলিগুড় অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করে। রক্তে লোহিত কণিকার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ভেলিগুড়। বিশেষত অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই দরকারি। ভেলিগুড় ইনস্ট্যান্ট এনার্জি জোগায়।
(৯) দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ভেলিগুড়। বিশেষ করে গরমকালে পেট ঠান্ডা রাখতে গুড় মেশানো বরফ ঠান্ডা শরবত খেতে বলা হয়।
(১০) ভেলিগুড়ে আছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম আর পটাসিয়াম যা শরীরে অ্যাসিডের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তচাপ যাতে স্বাভাবিক থাকে তা সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে ভেলিগুড়।
(১১) গাঁটে গাঁটে ব্যথা, হাতে পায়ের যন্ত্রণাও কমায় ভেলিগুড়। এক টুকরো আদা আর ভেলিগুড় খেলে কমে গাঁটে গাঁটে ব্যথা। প্রতি দিন এক গ্লাস দুধে ভেলিগুড় মিশিয়ে খেলে হাড় শক্ত হয়। হাড়ের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়।
(১২) ওজন কমাতে বিশেষ ভাবে কার্যকরী ভেলিগুড়। ভেলিগুড়ে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম যা শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য ঠিক রাখে, পেশির বৃদ্ধির জন্য খুবই দরকারি। মেটাবলিজম বাড়ায় পটাসিয়াম। তাই শরীরে জল জমা আটকায় ভেলিগুড়। ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
(১৩) চিনি হল সিম্পল কার্বোহাইড্রেট যা রক্তে মিশে গিয়ে তৎক্ষণাৎ এনার্জি দেয়। কিন্তু ভেলিগুড় কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত জোগায়। এর মানে ভেলিগুড় খেলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে না। ভেলিগুড় ক্লান্তিভাবও দূর করে।
(১৪) চিনি রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট ও সিম্পল সুগার হওয়ায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (৬৫) অত্যন্ত বেশি। দ্রুত রক্তে শোষিত হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। গুড় হোলসাম ও আনরিফাইন্ড হওয়ায় সুক্রোজের পরিমাণ তুলনামূলক কম ও কিছু ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকায় রক্তে ধীরে ধীরে শোষিত হয়।