অনেক চাকরিজীবীর কাছেই অফিসের কফি মেশিন হল জীবনের প্রাণভোমরা। হাজারো কাজের ব্যস্ততার মাঝে কফির কাপে চুমুক না দিলে ঠিকমতো শক্তি পাওয়া যায় না। বিশেষ করে যাঁরা রাতে নাইট শিফটে কাজ করেন তাঁরা ক্লান্তিভাব কাটাতে কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও অফিসের কফি মেশিন থেকে নিয়ে ঘন ঘন গরম পানীয়তে চুমুক দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, অফিসের কফি মেশিন আপনাকে শুধু কাজের ব্যস্ততার মধ্যে ক্লান্তিভাব কাটাতে সাহায্য করছে না। প্রকারান্তরে তা আপনার অজান্তেই আপনার রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়ে তুলছে।
সুইডেনের উপ্পসালা বিশ্ববিদ্যালয় ও চালমার্স ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষকরা দেখেন, অফিসে থাকা কফি মেশিন থেকে যে বিভিন্ন রকমের কফি খাওয়া হয় তাতে সাধারণ ফিল্টার কফির তুলনায় রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলার হরেক রকম পদার্থ মজুত আছে। গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে Nutrition, Metabolism & Cardiovascular Diseases নামক জার্নালে। প্রধান গবেষক ডেভিড ইগম্যান জানান, আমরা ১৪ রকমের কফি মেশিনের ওপর গবেষণা চালাই। আমরা দেখতে পেয়েছি সাধারণ রেগুলার ড্রিপ ফিল্টার কফি মেকারের তুলনায় অফিসে থাকা কফি মেশিনের কফিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলা পদার্থ অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে।
গবেষকরা দেখেন, কফিতে থাকে ডিটারপিনস, ক্যাফেস্টোল, কাহইয়ল নামক পদার্থ। কিন্তু বেশি মাত্রায় কফি খেলে এসব পদার্থ রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হার্টের অসুখ, স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। রেগুলার ড্রিপ ফিল্টার কফিতে পেপার ফিল্টার ব্যবহার করা হয় যা এসব ক্ষতিকর পদার্থ বেশিরভাগ সরিয়ে ফেলে। কিন্তু এসপ্রেসো, ফ্রেঞ্চ প্রেস, অফিসে থাকা কফি মেশিন থেকে যে সব রকমের কফি পাওয়া যায় তাতে উচ্চ মাত্রায় ডিটারপিন থাকে। গবেষকরা অফিসে থাকা আলাদা আলাদা রকমের কফি মেশিনে আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডের কফি ব্যবহার করে গবেষণা চালান। তাঁরা দেখেন আলাদা আলাদা কফি মেশিনে আলাদা আলাদা মাত্রায় ডিটারপিন পদার্থ তৈরি হচ্ছে। আবার একই কফি মেশিন থেকে আলাদা আলাদা সময় ডিটারপিনের মাত্রা আলাদা আলাদা হচ্ছে। গবেষকরা দেখেন, অফিসের কফি মেশিন থেকে তৈরি হওয়া কফিতে লিটারপিছু ১৭৬ মিলিগ্রাম ক্যাফেসল তৈরি হয় যা পেপার ফিল্টারড কফির তুলনায় ১৫ গুণ বেশি। তাই যাঁরা নিয়মিত অফিসের কফি মেশিন থেকে ৩ বা তার অধিক কাপ কফি খান তাঁরা নিজেদের অজান্তেই রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে ফেলছেন।