ভারতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে মারণ রোগ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআরের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। মঙ্গলবার আইসিএমআরের গবেষণা রিপোর্ট রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের লিখিত জবাব দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও যাদব। বিভিন্ন সূচকের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রস্তাবিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে সীসা, অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার পরিমাণ।
ক্যানসার প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতাপরাও যাদব রাজ্যসভায় জানান, দেশে ১৯টি স্টেট ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও ২০টি টারশিয়ারি কেয়ার ক্যানসার সেন্টার গড়ে তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানার ঝাঝরে ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও কলকাতায় চিত্তরঞ্জন ক্যানসার কেয়ার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হয়েছে। ২২টি নতুন গড়ে ওঠা এইমস হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ক্যানসার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মারণ রোগ ক্যানসারের নাম শুনলেই বুক কাঁপে সবার। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআরের আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে ভারতে বয়স্ক ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। ক্যানসারে মৃত্যুর আশঙ্কাও এঁদের সবচেয়ে বেশি। দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়া নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ বছর বা তার বেশি বয়স এমন ভারতীয়দের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ১০%-এর বেশি। মৃত্যুর আশঙ্কা ৭.৭%। মধ্যবয়সী বা ১৫-৪৯ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৮.৩% আর মৃত্যুর আশঙ্কা ৫.৫%। ভারতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ৭০% ক্ষেত্রে। তাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধ করার কথা বলা হয়েছে গবেষণাপত্রে।
আইসিএমআরের গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশকে সব বয়সিদের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রায় ২% বাড়বে। গত ২০ বছর ধরে গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি ও গ্লোবাল হেল্থ অবজারভেটরির ডেটাবেসের ওপর নির্ভর করে ভারতে বিভিন্ন বয়সিদের ওপর ৩৬ রকমের ক্যানসার নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে প্রতি ৫ জন ক্যানসার রোগীর মধ্যে ৩ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এরপরই রয়েছে কার্ভিক্যাল ক্যানসার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গোটা বিশ্বেই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে ব্রেস্ট ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। ২০৫০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বে ৩২ লাখ ব্রেস্ট ক্যানসার রোগী দাঁড়াবে। প্রতি বছর ১১ লাখ ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীর মৃত্যু হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের পর সবচেয়ে বেশি ক্যানসার রোগীর মৃত্যু হয় ভারতে।