স্ট্রোকের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে আমূল বদলে দিতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে আইআইটি কানপুর। ১২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্বের প্রথম ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI)-সমর্থিত রোবোটিক হ্যান্ড এক্সোস্কেলিটন, যা স্ট্রোক-পরবর্তী পুনর্বাসনকে আরও উন্নত ও কার্যকর করে তুলবে।
এই ডিভাইসটি তৈরি করতে ১৫ বছর ধরে নিরলস গবেষণা করেছেন আইআইটি কানপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আশীষ দত্ত। এই প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর (DST), UK India Education and Research Initiative (UKIERI), এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)।
কীভাবে কাজ করে এই ডিভাইস
রোবোটিক হ্যান্ড এক্সোস্কেলিটনটি একটি ক্লোজড-লুপ কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবহার করে যা থেরাপির সময় রোগীর মস্তিষ্কের সক্রিয় অংশগুলিকে জাগ্রত করে।
ডিভাইসটির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
- ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI): রোগীর মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স থেকে EEG সিগন্যাল গ্রহণ করে রোগীর হাত মুভমেন্টের ইচ্ছা নির্ধারণ করে।
- রোবোটিক হ্যান্ড এক্সোস্কেলিটন: থেরাপির জন্য রোগীর হাতের মুভমেন্ট পরিচালনা করে।
- সফটওয়্যার: মস্তিষ্কের সিগন্যাল এবং এক্সোস্কেলিটনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
অধ্যাপক আশীষ দত্তের বক্তব্য
অধ্যাপক আশীষ দত্ত বলেন, “স্ট্রোক পুনর্বাসন একটি দীর্ঘ এবং অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। আমাদের ডিভাইসটি মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটির ক্ষমতা সক্রিয় করে এবং ফিজিক্যাল থেরাপি, ব্রেন এনগেজমেন্ট ও ভিজ্যুয়াল ফিডব্যাকের মধ্যে একটি যোগসূত্র তৈরি করে। এটি বিশেষ করে সেই রোগীদের জন্য কার্যকর, যাদের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া থেমে গেছে।”
পরীক্ষা ও সাফল্য
এই ডিভাইসটি ভারত এবং যুক্তরাজ্যে পাইলট ক্লিনিকাল ট্রায়ালেও চমকপ্রদ ফলাফল দেখিয়েছে। আটজন রোগী, যাঁরা এক বা দুই বছর ধরে কোনো উন্নতি করতে পাচ্ছিলেন না, তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে অ্যাপোলো হাসপাতালের সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসবে।
এই যুগান্তকারী ডিভাইস স্ট্রোক পুনর্বাসনে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। বিশেষ করে যাঁরা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।