মৌ বসু
ডায়াবেটিস, স্থুলতার মতো লাইফস্টাইল ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যা ভারতে বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক একটি সরকারি সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত প্রসেস করা খাবার ও মুখরোচক জাঙ্ক ফুড শুধু লাইফস্টাইল ডিজিজের জন্যই দায়ী নয়, এ সব খাবারের বিজ্ঞাপনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আমাদের শরীর ও মনের ওপর।
‘ফিফটি শেড্স অফ ফুড অ্যাডভার্টাইজিং’ (50 Shades of Food Advertising) নামে ওই গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নিউট্রিশন অ্যাডভোকেসি ইন পাবলিক ইন্টারেস্ট (Nutrition Advocacy in Public Interest) বা নাপি (NAPI) নামক সরকারি সংস্থা।
ওই গবেষণা রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, প্রচুর পরিমাণে নুন থাকা খাবার (হাই সল্ট ফুড প্রোডাক্ট) ও অতিরিক্ত প্রসেস করা খাবারের (আলট্রা প্রসেসড ফুড) বিজ্ঞাপন অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। এ সব বিজ্ঞাপন লোভের উদ্রেক করে, ঠকিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এ সব অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করার জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত বলে চালিয়ে আমজনতার বিশ্বাসকে ঠকিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়। আসল ফল ব্যবহার করা হয়েছে বলে মিথ্যে দাবি করা হয়। সেলিব্রিটিদের ব্যবহার করে ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানো হয়। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর খাবারকেও স্বাস্থ্যকর বলে চালানো হয়।
চলতি বছরে আইসিএমআর ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন যে খাবারের তালিকা প্রকাশ করেছিল তাতে স্পষ্টই উল্লেখ করেছিল এখন ভারতে এ সব অস্বাস্থ্যকর মুখরোচক জাঙ্ক ফুড খেয়ে ৫-১০ বছর বয়সি ১০% শিশু প্রি-ডায়াবেটিসের শিকার।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের আরও একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, জাঙ্ক ফুড খেলে ৩২ রকমের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কারণ, এ সব জাঙ্ক ফুডে এমন সব পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা সাধারণত বাড়ির খাবারে ব্যবহার করা হয় না। আইসক্রিম, সসেজ, চিপস, সোডা, কার্বোনেটেড ড্রিঙ্ক, ইনস্ট্যান্ট ফুড, অ্যালকোহলিক ড্রিঙ্কের শেলফ লাইফ বা বেশ কিছু দিন ঠিক রাখতে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভ, ইমালসিফায়ার, কৃত্রিম চিনি, কৃত্রিম রং ও ফ্লেভার ব্যবহার করা হয়, যা খেলে অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা ৫০% বাড়ে, ৪৮-৫৩% মানসিক সমস্যা ও উদ্বেগের সম্ভাবনা বাড়ে, ১২% টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, ২২% মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, ৬৬% ঘুমের সমস্যা বাড়ে এ সব জাঙ্ক ফুড খেলে।
এ ছাড়াও গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বেশি পরিমাণে জাঙ্ক ফুড খেলে হাঁপানির আশঙ্কা বাড়ে। রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় আর ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে গিয়ে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
আরও পড়ুন
ডায়াবেটিসে ভুগছেন? রোজ পেয়ারাপাতার চা খেয়ে দেখুন না!