সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় এবার আরও উন্নত হার্ট চিকিৎসা সদ্যোজাতদের জন্য। প্রতি ১০ জন এক বছরের কমবয়সি শিশুর মধ্যে অন্তত ১ জনের মৃত্যুর কারণ জন্মগত হৃদরোগ। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলায় পিজি হাসপাতালে বসতে চলেছে এশিয়ার প্রথম সদ্যোজাতদের জন্য নির্দিষ্ট ক্যাথল্যাব।
প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক এই যন্ত্র বসানো হবে সদ্যোজাতদের জন্য তৈরি হওয়া পিজি-র নবনির্মিত পেরিনেটোলজি বিভাগের অষ্টম তলায়। হাসপাতালের গাইনি বিভাগের উল্টোদিকে তৈরি হচ্ছে এই নয়তলা ভবন। এখানেই হবে অপারেশন থিয়েটার ও ক্যাথল্যাব— পাশাপাশি।
পিজি-র পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ লোপামুদ্রা মিশ্র জানিয়েছেন, সদ্যোজাতদের হার্টের সমস্যায় সময় অত্যন্ত মূল্যবান। সাধারণত সদ্যোজাতদের মূল কার্ডিওলজি বিভাগে বড়দের জন্য থাকা ক্যাথল্যাবে নিয়ে যাওয়ার সময়ই ঘটে বিপত্তি। ইনকিউবেটরেই ব্রেন হেমারেজ, কোমা, এমনকি হৃদরোগজনিত মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই একই ছাদের তলায় ক্যাথল্যাব এবং অপারেশন থিয়েটার থাকলে বহু জীবন বাঁচানো সম্ভব।
চিকিৎসকদের মতে, সদ্যোজাতদের মধ্যে ডি-ট্রান্সপোজিশন অব গ্রেট আর্টারিস, কোয়ার্কটেশন অব অ্যাওর্টা, পালমোনারি অ্যাট্রেসিয়া, ভালভের সমস্যা, হার্টে ফুটো, কিংবা রক্ত সরবরাহের ত্রুটি— এ সবই প্রাণসঙ্কট ডেকে আনে। অনেক সময় জরুরি অপারেশন ও দ্রুত ক্যাথল্যাব প্রসিডিওরের দু’টোই প্রয়োজন পড়ে। এক ছাদের তলায় সেই ব্যবস্থাই গড়ে তোলা হচ্ছে।
সদ্যোজাতদের চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ডাঃ অরুণ সিং একে বলছেন “অসাধারণ উদ্যোগ”। তিনি জানান, “এশিয়ায় এর আগে শুধুমাত্র সদ্যোজাতদের জন্য ক্যাথল্যাব কোথাও নেই। প্রয়োজন হলে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।”
কেরলে সদ্যোজাতদের হৃদরোগে মৃত্যুর হার কমাতে ‘হৃদয়ম’ প্রকল্পের সাফল্য চিকিৎসকদের উৎসাহ জুগিয়েছে। মাত্র তিন বছরে তারা মৃত্যুহার ১১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আশা, পিজিতে এই যন্ত্র চালু হলে পশ্চিমবঙ্গেও একই সাফল্য মিলবে।
এই ক্যাথল্যাব চালু হলে রাজ্যের হাজার হাজার শিশুর জীবনে ফিরতে পারে নতুন আশার আলো। চিকিৎসকরা মনে করছেন, এটি শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের সদ্যোজাত চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।