সন্ধ্যা নামতেই, আঁধার ঘনাতেই অনেকের মন মেজাজ যায় বিগড়ে। সারা দিন মন মেজাজ তোফা থাকে, খুশিতে ডগমগ, কাজের এনার্জি অফুরন্ত। কিন্তু সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লেই একেবারে উল্টো চিত্র। অনেকের মনেই তখন গ্রাস করে অজানা আতঙ্ক, চিন্তাভাবনা। মন করে উশখুশ। সারাক্ষণ অস্থিরতা গ্রাস করে মনকে। ভবিষ্যৎ কেমন হবে? সব কাজ শেষ হবে তো? এমন সব চিন্তা তাড়িয়ে বেড়ায় মনকে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে সানসেট অ্যাঙ্কজাইটি (sunset anxiety) বা সানসেট সিনড্রোম (sundown syndrome)।
কী এই রোগ?
এটা হল এমন এক মানসিক অবস্থা যেখানে সন্ধ্যা নামতেই অজানা কারণে মন মেজাজ অস্থির হতে শুরু করে। অজানা অচেনা কারণে মন অবসাদগ্রস্ত, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় থাকে। যখন দিনের আলো কমতে শুরু করে আর আঁধার ঘনায়। তখনই শুরু হয় সমস্যা। যাঁরা আগে থেকেই মানসিক অবসাদে ভোগেন তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি হয়।
কী এর উপসর্গ?
সন্ধ্যা নামলেই খারাপ কিছু ঘটবে এই ভাবনা থেকেই মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা, অবসাদ, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, চিন্তাভাবনায় অস্বচ্ছতা, এনার্জি না পাওয়া, ক্লান্তি, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, ভবিষ্যতের চিন্তা, একাকিত্ব।
কেন হয় এই রোগ?
এর কারণ হল অতিরিক্ত দায়িত্ব, কাজ ও পারিপার্শ্বিক মানসিক চাপ, আগে থেকেই মানসিক অবসাদগ্রস্ত, জীবনে খারাপ অভিজ্ঞতা।
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের সানসেট অ্যাঙ্কজাইটি বা সানসেট সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি করে। কারণ, ডিমেনশিয়া হলে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা কমে যায়, আচরণে গন্ডগোল হয়। মুড সুইং হয়। অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত ২০% রোগীর এই মানসিক সমস্যা হয়। ডিমেনশিয়ার রোগীদের ঘুমের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন, সংক্রমণ হলে সমস্যা আরও বেশি গুরুতর হয়।
কী ভাবে হবে সমাধান
পারিপার্শ্বিক অবস্থার বদল দরকার। প্রিয়জনের ছবি হাতের নাগালে রাখুন। আলোবাতাস চলাচল স্বাভাবিক ভাবে করে এমন ঘরে থাকুন। গুমোট, ভ্যাপসা অন্ধকার ঘরে থাকবেন না। পছন্দের গান শুনুন, বই পড়ুন, মন শান্ত রাখুন। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বৈদ্যুতিক গ্যাজেট থেকে দূরে থাকুন। রাতে ভালো করে ঘুমোন। সকালে ক্যাফিনযুক্ত পানীয় বেশি খাবেন না। বেশি পরিমাণে মদ খাবেন না। সারা দিনে হাঁটাচলা করুন।