মারণরোগ ক্যানসারের নাম শুনলেই ভয় ধরে মনে। ক্যানসার চিকিৎসায় নয়া দিশা দেখালেন একদল গবেষক। সুইডেনের আপসালা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকরা এমন একটি অ্যান্টিবডির খোঁজ পেয়েছেন যা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
গবেষকরা এই অ্যান্টিবডিতে তিনটি ভিন্ন ধরনের কার্যকারিতা একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন, যার ফলে এটি ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমারের বিরুদ্ধে টিসেলগুলির কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে তোলে। এই নতুন অ্যান্টিবডি ক্যানসারের চিকিৎসায় আশার আলো দেখানোর পাশাপাশি ইমিউনোথেরাপি চিকিৎসার জন্য নতুন দিশা দেখাতে পারে।
গবেষকরা একটি নতুন ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন যা একদিকে টিউমারের নির্দিষ্ট উপাদানগুলোকে টার্গেট করে, অন্যদিকে এই অ্যান্টিবডি নিজেই একটি ড্রাগ প্যাকেজ সরবরাহ করে এবং তৃতীয়ত এটি ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। একে বলা হয় ‘৩-ইন-১ ডিজাইন’ – অর্থাৎ তিনটি কার্যকারিতা একত্রিত করা হয়েছে, যা টিউমারের প্রতিটি সেলের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান গবেষক আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সারা মাংসবো এবং কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র অধ্যাপক জোহান রকবার্গ বলেন, “আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে সঠিক চিকিৎসা (প্রেসিশন মেডিসিন) নিয়ে গবেষণা করছি এবং কী ভাবে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন (CD40)-কে প্রভাবিত করা যায় তা নিয়ে কাজ করেছি। আমরা এখন দেখাতে পারছি যে আমাদের নতুন অ্যান্টিবডি পদ্ধতি ক্যানসারের জন্য প্রেসিশন মেডিসিন হিসেবে কার্যকর।”
এই নতুন অ্যান্টিবডি ক্যানসার প্রতিরোধে নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন ও মিউটেশনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে যা কেবল ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষে থাকে। এই পরিবর্তনগুলোকে বলা হয় ‘নিওঅ্যান্টিজেন্স’। অ্যান্টিবডিটি টিউমার-নির্দিষ্ট উপাদানটি সরাসরি একটি নির্দিষ্ট ধরনের ইমিউন সেলে পৌঁছে দেয় এবং একসঙ্গে সেই সেলটিকে সক্রিয় করে। এর ফলে টি সেলের প্রতিক্রিয়া ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমারের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যায়। এই পদ্ধতি আগের চিকিৎসার তুলনায় অনেক নিরাপদ।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, নতুন অ্যান্টিবডি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি রোগীর জন্য একক ভাবে কাস্টমাইজড চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলবে। এই গবেষণা ক্যানসারের মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বে রোগীদের জন্য এক নতুন দিশা দেখাতে পারে।