ভারতে এখন ঘরে ঘরে বাড়ছে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা। জীবনযাপনজনিত সমস্যার কারণে হয় এই লাইফস্টাইল ডিজিজ। প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিন জন ফ্যাটি লিভারের অসুখে ভুগছেন। এই রোগে ধীরে ধীরে অন্যান্য অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থুলতা, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখের পাশাপাশি ভারতে উদ্বেগজনক মাত্রায় বাড়ছে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। লাইফস্টাইল ডিজিজ নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এখন নীরব মহামারির আকার ধারণ করেছে।
ডাক্তারদের মতে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বা মেটাবলিক ডিসফাংশন অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়াটোটিক লিভার ডিজিজ হয় যখন লিভারে বা যকৃতে ৫%-এর বেশি ফ্যাট বা চর্বি জমে। একে বলা হয় ফ্যাটি লিভারের সমস্যা। লিভারে থাকা কোষ ইনসুলিনের সাহায্যে আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। শর্করার থেকে এনার্জিতে পরিণত হয়। লিভারে ফ্যাট জমলে ইনসুলিন লিভারের কোষে ঢুকতে পারে না। ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়াতে হয়। প্যানক্রিয়াস বা পাকস্থলীর ওপর চাপ বাড়ে। ক্রমশ পাকস্থলী ‘ইনসুলিন টায়ার্ড’ হয়ে পড়ে। ইনসুলিন লিভারের কোষে ঢোকা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। এনার্জি মেলে না। এর ফলে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ও স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। চর্বি রক্তের মাধ্যমে ধমনীতে জমতে শুরু করে। ধমনীর দেওয়াল শক্ত হতে শুরু করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়। চর্বি হৃদযন্ত্রে জমলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। মস্তিষ্কে জমলে ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কিডনি ও গলব্লাডারে জমলে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
এন্ডোক্রাইন সোসাইটির বার্ষিক বৈঠকে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান, আল্ট্রা প্রসেসড খাবার, অলস জীবনযাপনের কারণে হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি অ্যাসিড। স্থুলতা, ডায়াবেটিস ও রক্তের ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখতে কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত কি না কী ভাবে বুঝবেন
(১) ডানদিকের বুকের পাঁজরে লাগাতার ব্যথা ও অস্বস্তি।
(২) আচমকা শরীরের মাঝামাঝি অংশ বা মধ্যপ্রদেশ স্ফীত হওয়া, চর্বি জমলে সতর্ক হোন। ফ্যাট মেটাবলিজমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে লিভার। তলপেটের আশপাশে ফ্যাট জমে যাওয়া মানে লিভার কাজ করতে পারছে না।
(৩) লিভারের সমস্যার জন্য ত্বকে লাগাতার ব্রণর সমস্যা হয়। কারণ লিভার ফ্যাট, টক্সিন বের করে দেয়।
(৪) গলা, কনুই, বাহুমূলের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া বা কালো দাগ ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ।
(৫) হাত, পা, পায়ের পাতা ফোলা ভাব দেখা যায়। জল জমতে শুরু করে।
(৬) রক্তের লোহিত কণিকার বর্জ্য পদার্থ বিলিরুবিন যখন লিভার ভালো ভাবে ফিল্টার করে বের করে দিতে না পারে তখন ত্বক, চোখে হলদে ভাব দেখা যায়।
(৭) পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলেও সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে।