স্মার্টফোন হোক কিংবা সাধারণ ফোন, দূরভাষের এই যন্ত্র এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু অনেকেই আছেন যাঁদের এক মুহূর্ত ফোন ছাড়া চলে না। সারাক্ষণ ফোন নিয়ে উদ্বেগে ভোগেন। চোখের সামনে নিজের ফোন না থাকলেই প্যানিক করেন। মোবাইল থেকে দূরে থাকা বা মোবাইলবিহীন হয়ে পড়ার ভয়কে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘নোমোফোবিয়া’ যার পুরো নাম ‘নো মোবাইল ফোবিয়া’।
ধরুন আপনি স্নান করতে গেছেন। হঠাৎ আপনার মনে হল ফোন বাজছে। আধভেজা হয়ে ফোনের কাছে গিয়ে দেখলেন কোনো কল আসেনি। ভাইব্রেট করেনি। এসবই কি কৌতুক নাকি ভৌতিক? চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই মিথ্যা অনুভূতির নাম ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম। একরকমের হ্যালুশিনেশনের মূলে রয়েছে ফোন নিয়ে উদ্বেগ ও অবসাদ।
চিকিৎসকদের কথায়, আসলে এখন আমরা ভীষণভাবে মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল। ফোন হাতছাড়া হলেই আমাদের অচেতন মন সচেতন হয়ে ফোনকলের অপেক্ষা করতে থাকে। এই অপেক্ষা, উদ্বেগ মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অংশকে উত্তেজিত করে তোলে। আশপাশের অজস্র অডিটরি ফ্রিকোয়েন্সি থেকে নিজের মোবাইলের আওয়াজ আমাদের মস্তিষ্ক আলাদা করতে পারে না। নিজের ফোনের রিংটোন বা ভাইব্রেশন কানে বেজে ওঠে।
‘নোমোফোবিয়া’ কথাটি এসেছে ‘নো মোবাইল ফোবিয়া’ থেকে। ২০০৮ সালে ব্রিটেনের পোস্টাল অফিসের একটি গবেষণায় প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ২১০০ জনের ওপর গবেষণা চালানো হয়। দেখা যায় ৫৩% নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত। ফোন হাতছাড়া হলে, ফোনের ব্যাটারি কমে এলে বা নেটওয়ার্ক কানেকশন না থাকলেই মানসিক উদ্বেগ, অবসাদ ও অস্থিরতা বাড়ে। ভয় এতই বেশি যে অনেকে ফোন সারাক্ষণ চালু রাখেন। ৫৫% বলেছেন পরিজনদের ফোনকলের অপেক্ষা করেন বলে, ১০% বলেন কাজের জন্য আর ৯% বলেন ফোন বন্ধ করলে উদ্বেগে ভোগেন বলে।
২০১৫ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘নোমোফোবিয়া’য় আক্রান্ত হলে মানুষ অন্যের সঙ্গে ঠিকমতো কমিউনিকেট করতে পারে না। মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয়। ঠিকমতো কথা না শোনে না, ভালো করে কোনো তথ্য জানে না। সারাক্ষণ ফোন ঘাঁটতে থাকেন। ফোন হাতছাড়া হলেই উদ্বেগে থাকেন। নেতিবাচক চিন্তা করেন। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায়। ঘাম হয়, হাত পা কাঁপে। দুর্বল লাগে। প্যানিক অ্যাটাকও হতে পারে। ফোন থেকে দূরে থাকলে অসহায় লাগে।
আরও পড়ুন
স্থুলতায় সন্তানধারণে কী প্রভাব পড়ছে, কী তথ্য উঠে এল গবেষণায়