কথাতেই আছে মাছেভাতে বাঙালি, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। আম বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় খাবার হল ভাত। কিন্তু বাজারে তো এখন প্রচুর ধরনের চাল পাওয়া যায়, সেখানে আছে যেমন চকচকে সাদা সরু চাল, তেমনই ব্রাউন রাইস। তাই চাল কিনতে নাজেহাল দশা ভেতো বাঙালির। কোন চালে কেমন পুষ্টি, সাদা চাল নাকি ব্রাউন রাইস, কোনটা কিনবেন, জানেন কি?
পুষ্টিবিদ থেকে কৃষিবিদ সবাই মোটামুটি একমত সাদা চাল যত পলিশড বা চকচকে আর সরু হবে ততই তার পুষ্টিগুণ কমবে। সাদা চাল চকচকে করতে গিয়ে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় চালের ওপরের স্তরে থাকা ‘ব্রান’ আর ‘জার্ম’। এই জার্মের স্তরে মেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর খনিজ পদার্থ। ব্রানে মেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই চকচকে করতে গিয়ে চাল থেকে বাদ দেওয়া হয় আসল পুষ্টি – ভিটামিন, খনিজ পদার্থ আর ফাইবার। কিন্তু ব্রাউন রাইস হল আনপলিশড অর্থাৎ চকচকে নয় এমন হোল গ্রেন।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল সেই সূচক যার মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা মাপা হয়। যে সব খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি থাকে তা সহজে হজম হয়। শরীর সেই সব খাবার সহজে তাড়াতাড়ি শুষে নেয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু যে সব খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে তা সহজে হজম হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে না। বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে সাদা ভাতের তুলনায় ব্রাউন রাইসে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকলেও ব্রাউন রাইসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে। তাই ব্রাউন রাইস খেলে খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় না। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১০ বার ব্রাউন রাইস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকে তেমনই স্ট্রোক আর হার্টের অসুখের আশঙ্কা কমে। ম্যাগনেশিয়াম বেশি থাকে বলে ব্রাউন রাইস খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
এ ছাড়াও পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, ফাইবার থাকার কারণে ব্রাউন রাইস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক বাটি ব্রাউন রাইসে ২৪৮ ক্যালোরি পাওয়া যায়। ৫ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম ফ্যাট, ৫২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। ফসফরাস, দস্তা, তামা, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, থায়ামিন, রাইবোফ্লেভিন, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড থাকে।