ইতিহাস
বরানগরের প্রামাণিক কালীবাড়ির ব্রহ্মময়ীকে শ্রীরামকৃষ্ণ ডাকতেন ‘মাসি’ বলে

স্মিতা দাস
কলকাতার শহরতলিতে অবস্থিত বরানগর। এই বরানগরের অলিতে-গলিতে কত মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তা হিসাব করে ওঠা কঠিন। এ হেন মন্দিরনগরীর এক উল্লেখযোগ্য মন্দির হল প্রামাণিক ঘাট রোডে প্রামাণিক কালীবাড়ি। এই মন্দিরে ব্রহ্মময়ী কালী অধিষ্ঠিতা।
কথিত আছে, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী কালীকে ‘মা’ এবং জয় মিত্র কালীবাড়ির কৃপাময়ী কালীকে ও প্রামাণিক কালীবাড়ির ব্রহ্মময়ী কালীকে ‘মাসি’ বলে ডাকতেন।
বরানগরের কুঠিঘাট থেকে ১০ মিনিটে হাঁটার দূরত্বে এই প্রামাণিক কালীবাড়ি। এটি নবরত্ন মন্দির এবং গঠন-বৈশিষ্ট্যে তা জয় মিত্র কালীবাড়ির অনুরূপ। সাধারণত নবরত্ন মন্দির বলতে আমরা চিরাচরিত বাঁকানো চালের শৈলী বুঝি, যেমন দক্ষিণেশ্বরের মন্দির। কিন্তু প্রামাণিক কালীবাড়ি হল দোতলা দালান মন্দির। প্রতি তোলার কোণে কোণে চূড়া বা রত্ন বসানো।
কথা হচ্ছিল মন্দিরের পুরোহিত সোমনাথ বড়ালের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁরা এই মন্দিরে পাঁচ পুরুষ ধরে পুজো করছেন। তিনি বলেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ কালীপদ বড়াল এই মন্দিরে পূজা শুরু করেন।
মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানা গেল সোমনাথবাবুর কাছ থেকে। তিনি বলেন, এই মন্দির হল দে প্রামণিক পরিবারের। দে প্রামাণিকদের আদিবাড়ি বর্ধমানের পুলিনপুর গ্রামে। সেই পরিবারের কুলপুরোহিত ছিলেন বড়ালরা। প্রামাণিকরা এক সময় ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য বর্মায় বসবাস করতেন। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে দেশে ফিরে আসেন। তার পরই দে প্রামণিক পরিবারের কামদেব দে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তাঁরই বংশধর রামগোপাল দে দুর্গাপ্রসাদ দে ১২৫৯ বঙ্গাব্দের (১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ) মাঘী পূর্ণিমার দিন এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের দু’ বছর আগেই এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
শোনা যায়, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর মূর্তি যিনি গড়েছিলেন দাঁইহাটের সেই ভাস্কর নবীনচন্দ্র পালই এই ব্রহ্মময়ী বিগ্রহ তৈরি করেন। আসলে নবীন ভাস্কর একই কষ্টিপাথর থেকে তৈরি করেছিলেন তিন মূর্তি – ভবতারিণী কালী, ব্রহ্মময়ী কালী এবং কৃপাময়ী কালী। প্রতিটি মূর্তিই তৈরি হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের জন্য। মন্দিরের আকার অনুযায়ী রানি রাসমণির মনে হয়েছিল, ব্রহ্মময়ী কালী ও কৃপাময়ী কালীর মূর্তি ছোটো, মন্দিরের সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না। পরে নবীন ভাস্কর ভবতারিণীর মূর্তি তৈরি করেন। কৃপাময়ী ও ব্রহ্মময়ী মূর্তি অধিষ্ঠিতা হন জয় মিত্র কালীবাড়ি ও প্রামাণিক কালীবাড়িতে।
এখনও মাঘী পূর্ণিমার দিন প্রতিষ্ঠাতিথিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রামাণিক কালীবাড়িতে। চলে হোম-যজ্ঞ, ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। কালীপুজোর দিন দেবীকে সাজানো হয় বিশেষ বসনে। কালের নিয়ম মেনেই এই মন্দিরে পশুবলি বন্ধ।
আরও পড়ুন: বরানগরের জয় মিত্র কালীবাড়িতে পশুবলি বন্ধ হয়েছিল বালানন্দ ব্রহ্মচারীর বিধানে
ইতিহাস
আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ার নেপথ্যে ছিল কোন রাজনৈতিক কারণ?
আজাদ হিন্দ ফৌজ ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রিটেন এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

বইয়ের সেবাশুশ্রূষা রুটিন চেক-আপের মতো দরকার। ধুলো ঝাড়া, মলাট দেওয়া জীবনদায়ী ওষুধের কাজ সারে। উপরি লাভ কিছু পাতা পড়ে ফেলা।… লিখলেন অরুণাভ গুপ্ত।
আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’, সংক্ষেপে আইএনএ (INA) বা ভারতীয় মুক্তি ফৌজ গঠনের মূলে ছিলেন রাসবিহারী বসু। পরে সুভাষচন্দ্র বসু (Subhas Chandra Bose) একে সাজিয়ে গুছিয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে কাজে লাগান।
আবার তথ্য এটাও জানাল – ব্যাঙ্কক সম্মেলনের সময় ভারতে তখন জোরদার বিক্ষোভ ও চড়া উত্তেজনার আবহাওয়া, ‘ভারত ছাড়ো’ আওয়াজে জনগণ উত্তাল। আগুনে ঘি ঢালল ১৯৪২-এর আগস্ট হাঙ্গামা। সেই গনগনে মুহূর্তে মোহন সিং তাঁর অধীনস্থ সেপাই ও অফিসারদের নিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। এই বাহিনী গড়ার মূলে ছিল নিখাদ দেশপ্রেম। ঘটনা হল মোহন সিং ব্রিটিশ রাজের অধীনে ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৪৩-এর ১৩ ফেব্রুয়ারির পর আবার ধাপে ধাপে আজাদ হিন্দ বাহিনী ঢেলে সাজা কাজ পুরোদমে শুরু হয়।
আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ার নেপথ্যে কোন রাজনৈতিক কারণগুলি কাজ করেছে? পশ্চিমী সভ্যতার প্রভাবে ধারণা জন্মায় যে, পাশ্চাত্যের সংস্পর্শের দরুন পিছিয়ে থাকা প্রাচ্যের কল্যাণ অবধারিত। ভারতবর্ষ তখন রীতিমতো পিছিয়ে, দুর্ভিক্ষ-মহামারির লাগাতার আক্রমণে দেশের মানুষ জর্জরিত। স্বেচ্ছাচারী নিষ্ঠুর শাসকদের কবলে পরাধীন, অর্থনীতি আর প্রশাসনে চূড়ান্ত অরাজকতা। অবিশ্বাসের ভিত তৈরি হল। উনিশ শতকের শেষ ১০ বছরে আবার গা ঝাড়া দিয়ে ওঠা ও বিশ শতকের প্রথম ১০ বছরে এবং পঞ্জাবে অগ্নি-মন্ত্রে দীক্ষিত বিপ্লবীদের উদ্ভব ঘটে। রাজনৈতিক ব্যর্থতাবোধ আর একটি কারণ ছিল। ইংল্যান্ড তার বিধিবিধান, সভ্যতা, সংস্কৃতি সব দিলেও দেয়নি তার সমাজ। ভারতবর্ষ স্বায়ত্তশাসনের অধিকারী হবে, এ কথা মেনে নেওয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু সিপাহি বিদ্রোহের ফলে যে অনুচিন্তা এবং ভিক্টোরিয়ার আমলে যে বিশাল সাম্রাজ্যবাদী জাঁকজমক দেখা গেল, তাতে প্রতিশ্রুতি নামেই রইল।
সুভাষচন্দ্র ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে জাপ সরকারের অনুমোদন ও সহায়তায় আজাদ হিন্দ সরকার স্থাপন করলেন, হলেন প্রধান পুরুষ। আজাদ হিন্দ ফৌজের মধ্যে ভারতের সব প্রদেশের লোক ছিলেন। বেসরকারি বিবরণীতে পাওয়া যায়, এই ফৌজে ১৪ জন অফিসার এবং ৫০ হাজার সৈন্য ছিলেন। ফৌজে তৈরি হল পদ অনুযায়ী তকমা বা চিহ্ন অথবা ব্যাজ। যেমন ‘আইএনএ শোল্ডার ইনসিগনিয়া’- জেনারেল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল, মেজর জেনারেল, কর্নেল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল, মেজর, ক্যাপ্টেন, ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট, সাব-অফিসার, হাবিলদার, নায়েক, লান্স নায়েক।
তবে আইএনএ সম্পর্কে জাপবাহিনী জেনারেল ফুজিহারা-র মন্তব্য ছিল – “বিপ্লবী সৈন্যদল হিসেবে এর মনোভাব ভালো ছিল এবং বেশ সুসংগঠিত ছিল, কিন্তু এর রণকৌশল, শিক্ষা ও নেতৃত্ব ছিল নিচু স্তরের।… তা ছাড়া বিশেষ ভাবে অভাব ছিল আক্রমণ ক্ষমতার ও দৃঢ়তার”।
আবার ফুজিহারা এ-ও স্বীকার করেছেন, প্যালেলসরকে জাপবাহিনী ধরাশায়ী হলেও অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ত, সেই সময় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় আইএনএ রেজিমেন্টের সাহায্য পাওয়ায় তার পক্ষে দাঁড়িয়ে যুঝতে পারা সম্ভব হয়েছে। ঘটনাপ্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার আইএনএ যখন লড়াই করছে, তখন তার না আছে বেতারযন্ত্র, না আছে টেলিফোন, না আছে যানবাহন। হালকা মেশিনগান ছাড়া আর কোনো ভারী অস্ত্রই নেই। জাপানি আর ব্রিটিশ-ভারতীয়দের পরণে থাকত জঙ্গলে গা-ঢাকা দেওয়ার মতো সবুজ উর্দি, কিন্তু আইএনএ সৈন্যের ছিল সে দিক দিয়ে মার্কামারা – তাদের পরণে ব্রিটিশ খাকি।
নজরে এল, যে আজাদ হিন্দ ফৌজকে সেরা স্বাধীনতাকর্মীদের নিয়ে গড়া একটি হিরের টুকরো দল বলে ভাবা হয়েছিল, আসলে দেখা গেল তাতে এলোপাথাড়ি জোটানো হয়েছে যত সব নিকৃষ্ট কারিগর। এতে কাজ হবে না। সুভাষ সব বুঝলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজকে ‘গড়তে হবে জার্মানির এস-এস দল অথবা রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির কায়দায়। চুক্তি হল: আজাদ হিন্দ ফৌজ জাপানি সামরিক আইনের আওতার মধ্যে পড়বে না, নিজস্ব সামরিক বিধি তারা মানবে। সত্য হল, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের ২০টি রেজিমেন্টের লোক নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত। ফলে একটা জগাখিচুড়ির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ভিন্ন ভাষাভাষী। যে সৈন্যবাহিনী থেকে তাঁরা এসেছেন, তার বিরুদ্ধে নতুন নেতৃত্বের অধীনে নতুন ভাবধারা নিয়ে তাঁদের লড়াই করতে শিখতে সময় লাগবে।
তবে শুদ্ধিকরণ হওয়ার পর আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যদের নতুন করে শপথ নিতে হবে যে, “আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে যাব।…সাময়িক ভাবে যদি হেরে যেতেই হয়, জাতীয় ত্রিবর্ণ পতাকা উঁচু করে লড়তে লড়তে হেরে যাও, পরাজিত হও। তোমাদের বিরাট আত্মত্যাগের ফলেই ভারতীয়দের ভাবী বংশধরেরা ক্রীতদাস হিসেবে নয়, স্বাধীন মানুষ হিসেবে জন্ম নেবে।… ভারত স্বাধীন হবেই- সে দিন দূরে নয়” – ‘মাই মেমারিজ অব দ্য আইএনএ অ্যান্ড ইটস নেতাজি’, শাহনওয়াজ। ভারত অভিযানে আজাদ হিন্দ ফৌজ আগাগোড়া আক্রমণের পুরোভাগে থাকে।”যেন ভারতের মাটিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকেরই প্রথম রক্তবিন্দু পড়ে।”
ঋণস্বীকার: ব্র্যাঘ্রকেতন/সুভাষ মুখোপাধ্যায়, ভারতের জাতীয় আন্দোলন/ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, বরণীয়/যোগেশচন্দ্র বাগল,Transfer of Power (1942-7), Volume VI.
ইতিহাস
রবিবারের পড়া: “এই ভাবে ফুটবল খেলতে হয়, এই ভাবে ফুটবল অনুভব করতে হয়”
উতরে গেল রাশা বিশ্বকাপ। অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা না ঘটলেও ফলাফল হয়েছে খেলার গতির সঙ্গে সাজুয্য রেখেই। সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা টিম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হল। রেফারিং জঘন্য মানের, ভাগ্য বিরূপ গোছের যুক্তি জড়ো করেও ধোঁপে টিকছে না বা বাজার গরম করে লাভ নেই। আজীবন তথ্য বলবে – ফ্রান্স ৪, ক্রোয়েশিয়া ২। তার থেকে যা পাওয়া […]

অরুণাভ গুপ্ত
উতরে গেল রাশা বিশ্বকাপ। অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা না ঘটলেও ফলাফল হয়েছে খেলার গতির সঙ্গে সাজুয্য রেখেই। সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা টিম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হল। রেফারিং জঘন্য মানের, ভাগ্য বিরূপ গোছের যুক্তি জড়ো করেও ধোঁপে টিকছে না বা বাজার গরম করে লাভ নেই। আজীবন তথ্য বলবে – ফ্রান্স ৪, ক্রোয়েশিয়া ২। তার থেকে যা পাওয়া গেল তাতে খুশ থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, কেন না কোনো দিন হিসেব মেলেনি, মিলবেও না। যেমন প্রতিটি দেশের অধিবাসীই চাইবেন,তাঁর দেশ জিতুক। আবার দেশের বাইরে যে বিরাট সংখ্যক ফুটবল অনুরাগী আবেগ ভাসেন, তাঁরাও নিজেদের পছন্দের টিমের জন্য গলা ফাটান। হাতে গরম কলকাতার কথা ধরলে থরে থরে প্রমাণ মিলেছে। এক-একটা গলিতে এক-এক দলের সমর্থকরা নিজেদের পছন্দের টিমের কল্যাণ কামনায় যাগযজ্ঞ করেছেন, বেশির ভাগটাই মুষড়ে পড়েছে, যাদের মিলেছে তাদের আর পায় কে।
একটা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন মাথায় আসছে-যাচ্ছে, তা হল আমরা ফুটবলের কাছে কী আশা করি, মানে একটা ফুটবল ম্যাচে কী কী থাকলে দর্শকবৃন্দ আহ্লাদে আটখানা হবেন। ‘নো আনসার’- কারণ সমর্থনের বড়ি গিলে সব নেশাড়ু প্রিয় দল জিতলেই খুশি। অথচ ফুটবল উন্মাদ বোদ্ধা দর্শক এটাও চান, ফুটবল ম্যাচে থাকবে গোল, দু’টো প্রান্তের গোলপোস্টে লাগাতার আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ, গভীরতা, কুশলী পায়ের বিশেষত্ব, নাটক, জমজমাট ঘটনা এবং বিতর্ক। তবেই তো ফুটবলে মজবে তামাম বিশ্ব।
জোহান ক্রয়েফের অভিমত, বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ অধিকাংশ সময় ডাহা বোরিং হয়। কারণ দু’টো টিমের কেউ ম্যাচ হারতে চায় না। ভয় পায়। দোষ দেওয়া যায় না, যে হেতু হারলে হাত দিয়ে মাথা কাটবে সকলে। কে বোঝাবে, যে হারে তার থেকে বেশি দু:খ কেউ পেতে পারে না। অত্যন্ত বাস্তব সত্য, ফুটবলাররা ফুটবলের মাধ্যমে নির্ভেজাল শান্তি, আনন্দ ও তৃপ্তি পান এবং ফুটবলকে রোমান্টিক করার জন্য তাঁরা মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু বেহিসেবি হওয়া কখনোই চলবে না। কোচের স্ট্র্যাটেজির বাইরে যাওয়ার এক্তিয়ার কারও নেই।
ফিফা প্রচার করেছিল – ‘গো ফর গোলস’। সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে গোল সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। তবে নির্মম সত্য, পাশাপাশি আর একটা অভিযান সমান ভাবে সক্রিয় ছিল, যার স্লোগান-‘গো ফর ওন গোলস’।
ফ্রান্স বনাম ক্রোয়েশিয়ার ফাইনালে দর্শক যা চান, তার সমস্ত মালমশলাই মজুত ছিল। মোট গোল হয়েছে হাফ ডজন। চমক ছিল আত্মঘাতী, বল ছুটেছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, ফুটবলারদের কলাকৌশল যথেষ্ট ছিল, নাটকীয়তারও ঘাটতি ছিল না, যখন দেখা গেল লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিলেন রেফারি, তা হলে বোরিং ফুটবল কোথায়। দু’টো টিমই তো ফুটবলের কাছে যাবতীয় পাওনা-গণ্ডা মিটিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া আরও একটা বড়ো মাপের প্রাপ্তি মিলেছে। ক্রোয়েশিয়ার প্লে-মেকার লুকা মদ্রিচ। সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন মাঠ কভারিংয়ে। সব থেকে বেশিক্ষণ পায়ে বল রেখেছেন এবং বিনা দ্বিধায় বলা যায় বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার ফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে মদ্রিচের ভূমিকা ছিল সব থেকে বেশি। অমায়িক চরিত্র বলেই টিমে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না।
পরাজয়ের গ্লানি-হতাশা তাড়া করবে বেশ কিছু দিন। কিন্তু প্রতিযোগিতায় প্রমাণিত হয়েছে মদ্রিচের পায়ের ছাপ বহু দিন চিহ্নিত হয়ে থাকবে গোটা বিশ্ব ফুটবলে। নিজের এমন সরব অস্তিত্বের পুরস্কার স্বরূপ মিলেছে গোল্ডেন বল অর্থাৎ প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট।
আর্জেন্তিনার প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার জর্জ ভালদানো যথার্থই বলেছেন, “এই ভাবে ফুটবল খেলতে হয়, এই ভাবে ফুটবল অনুভব করতে হয়। সেখানেই তোমার তুমি প্রকাশিত। এখানে ঝকঝকে ‘লিভিং ফুটবল”।
আরও পড়ুন : রবিবারের পড়া: বিশ্বকাপের ছড়া
ইতিহাস
রবিবারের পড়া: বিশ্বকাপ ফাইনালে দর্শকদের তল্লাশি করে মিলেছিল ১৬০০ রিভলভার
এক মাস ধরে সারা দুনিয়াকে টান টান উত্তেজনায় বেঁধে রাখছে বিশ্বকাপ ফুটবল বা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। সারা বিশ্ব জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ টিভির পর্দাতেই বিভোর হচ্ছেন রোনাল্ডো, মেসি, নেইমারদের পায়ের জাদুতে। ৮৮ বছর আগে এই টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল কী ভাবে? কেমন ছিল ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাস তাই নিয়েই দু-চার কথা। ফুটবল তখন কি এতটা জনপ্রিয় […]

তপন মল্লিক চৌধুরী
এক মাস ধরে সারা দুনিয়াকে টান টান উত্তেজনায় বেঁধে রাখছে বিশ্বকাপ ফুটবল বা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। সারা বিশ্ব জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ টিভির পর্দাতেই বিভোর হচ্ছেন রোনাল্ডো, মেসি, নেইমারদের পায়ের জাদুতে। ৮৮ বছর আগে এই টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল কী ভাবে? কেমন ছিল ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাস তাই নিয়েই দু-চার কথা।
ফুটবল তখন কি এতটা জনপ্রিয় ছিল? অল্প কিছু দেশ তখন ফুটবল খেলত। প্রথম বার নয়, অলিম্পিকের দ্বিতীয় আসরে ফুটবলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সে বারও জাতীয় দলগুলো অংশ নেয়নি। ফুটবল প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে মর্যাদা পায় ১৯০৮ সালের অলিম্পিকে। এর পরের দু’দশকের মধ্যেই ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা যায় যে, ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের অলিম্পিকে মূল আকর্ষণ ছিল ফুটবল। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেন ফিফার কর্তারা। অলিম্পিকের আদলে একটি আলাদা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় সংস্থাটি।
আরও পড়ুন ফিরে দেখা ফুটবল বিশ্বকাপ: যে রেকর্ড কোনো দিনই ভাঙবে না
কিন্তু আইওসি কিছুতেই মানতে নারাজ। ফিফার সঙ্গে এই নিয়েই টালবাহানা চলে বেশ কিছু কাল ধরে। আর এরই জেরে ফুটবলকে শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকের স্পোর্টস ক্যাটাগরি থেকে বাদই দেওয়া হয়। অন্য দিকে তার রেশ ধরে অলিম্পিকের পরবর্তী আসরের আগেই তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে তাঁর নিজের নামে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করবেন এমন সিদ্ধান্ত নেন।
তবে সফল ভাবে প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় ১৯৩০ সালে, উরুগুয়েতে। এতে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয় ঠিকই, তবে শুরুতে ইউরোপের দলগুলো ব্যাপারটাকে খুব ভালো চোখে দেখেনি। তাই নানা বাধাবিপত্তিতে জড়িয়ে যায় প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল। সেই সব বিপত্তি পেরিয়ে ইউরোপের মাত্র চারটি দল যোগ দেয় বিশ্বকাপে। ওই এক বারই বিশ্বকাপের ইতিহাসে ইউরোপের দলগুলোর চেয়ে লাতিন দলগুলির উপস্থিতি ছিল বেশি।

১৯৩০-এ ফাইনাল ম্যাচের আগে মাঠ পরীক্ষা করছে আর্জেন্তিনা দল।
১৯৩০ সাল ছিল উরুগুয়ের স্বাধীনতার একশো বছর। বছরটিকে ঐতিহাসিক ভাবে উদযাপন করার অংশ হিসেবেই বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চায় দেশটি। তাদের চাওয়া মেনে নেয় লাতিন ল্যাটিন আমেরিকার প্রায় সবগুলো দল। ইউরোপিয়ানদের কাছ থেকে কিছু আপত্তি আসে। আসলে অনেক দেশই আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে চায়নি । যদিও আয়োজক দেশ উরুগুয়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর যাবতীয় খরচও বহন করতে সম্মত ছিল। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে বিশ্বকাপের জন্য উরুগুয়েকেই নির্ধারণ করা হয়। দেশের রাজধানী মন্টেভিডিওর মোট তিনটি মাঠে আয়োজিত হয় ওই বিশ্বকাপ। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম স্বাক্ষর রাখে উরুগুয়ে।
সেবার অংশ নিয়েছিল মোট ১৩টি দেশ। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া – এই চারটি দেশ ছিল ইউরোপ থেকে। পেরু, পারাগুয়ে, চিলে, আর্জেন্তিনা, ব্রাজিল, বলিভিয়া ও উরুগুয়ে, এই সাতটি দেশ ছিল লাতিন আমেরিকার। বাকি দু’টি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো। ১৩ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই – এই ১৮ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই বিশ্বকাপের আসর। ১৩টি দেশ বা দলকে চার ভাগে ভাগ করে সাজানো হয়েছিল খেলা।
আরও পড়ুন ফিরে দেখা ফুটবল বিশ্বকাপ: যম আছে পিছে
ফিফা সভাপতি জুলেরিমে নিজের দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে না পারলেও বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় নিজের দেশকে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। ফ্রান্স এবং মেক্সিকোর ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ। আর সেই ম্যাচে ৪-১ গোলে জয়ী হয়েছিল ফ্রান্স। আর প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হারের ধাক্কা এখনও পোহাচ্ছে মেক্সিকো। কারণ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি ২৫টি ম্যাচে হেরেছে মেক্সিকো। প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ পায়। তবে মজার ব্যাপার হল সেমিফাইনালের দু’টি ম্যাচের ফল হয় একই। এক দিকে উরুগুয়ে ৬-১ গোলে হারায় যুগোস্লাভিয়াকে। অন্য দিকে আমেরিকাকে ৬-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্তিনা। তবে ফাইনালেই যাবতীয় উৎসাহ-উত্তেজনা যেন জড়ো হয়। ফাইনাল খেলা দেখতে ৬০ হাজারের বেশি দর্শক হাজির হয়েছিল। দর্শকদের হাবভাব দেখে প্রথমে সন্দেহ হয় রেফারির। তিনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দর্শকদের তল্লাশি করতে বলেন। কিন্তু সে কাজ যে মোটেও সহজ নয়। কিন্তু সেই কঠিন কাজ শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয় এবং তল্লাশিতে দর্শকদের কাছ থেকে ১৬০০ রিভলভার পাওয়া যায়।
শুধু তা-ই নয়। এর পর বল নিয়েও লাগে আরেক বিপত্তি। দু’ দলই চায় নিজেদের বল নিয়ে খেলতে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমার্ধে আর্জেন্তিনার এবং দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ের বল দিয়ে খেলা হবে। প্রথমার্ধে নিজেদের বলে খেলে দু’টি গোল করে আর্জেন্তিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের বল নিয়ে খেলে উরুগুয়ে করে ৪টি গোল। ফলে ৪-২ ব্যবধানে আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে।
-
ধর্মকর্ম2 days ago
অন্নপূর্ণাপুজো: উত্তর কলকাতার পালবাড়ি ও বালিগঞ্জের ঘোষবাড়িতে চলছে জোর প্রস্তুতি
-
ভিডিও2 days ago
Bengal Polls 2021: বিধাননগরে মুখোমুখি টক্কর সুজিত বসু-সব্যসাচী দত্তর, ময়দানে জোট প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
-
প্রবন্ধ1 day ago
First Man In Space: ইউরি গাগারিনের মহাকাশ বিজয়ের ৬০ বছর আজ, জেনে নিন কিছু আকর্ষণীয় তথ্য
-
দেশ1 day ago
Kumbh Mela 2021: করোনাবিধিকে শিকেয় তুলে এক লক্ষ মানুষের সমাগম, আজ কুম্ভের প্রথম শাহি স্নান হরিদ্বারে