নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি: বৈরাগী বানায় যে সাধের লাউ, তাই আজ দুর্মূল্য এবং মঙ্গলবার বাজারে গিয়ে দেখা গেল তা দুষ্প্রাপ্যও। এককেজি সাইজের একটা লাউ সাধারণত দশ টাকায় বিকোয়। মঙ্গলবার তার দাম নিদেনপক্ষে তিরিশ টাকা, তা-ও যদি মেলে তবেই। সাইজে বড়ো হলে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দাম। গত চার দিন ধরেই জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বাজারগুলিতে চড়া দামে বিকিয়েছে লাউ। আজ তো জলপাইগুড়ির বাজারগুলি থেকে লাউ প্রায় উধাও।
কারণটা ছটপুজো। ছটপুজো এলেই বাড়ে লাউয়ের চাহিদা,পাল্লা দিয়ে বাড়ে দামও।
বুধবার থেকে শুরু হবে ছট-মাইয়ার আরাধনা। বিহারী সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড়ো উৎসব এটি। নিয়ম অনুযায়ী ছটপুজোর আগের দিন খেতে হয় লাউ-ভাত। সকালে স্নান, পূজা সেরে আতপ চালের ভাত দিয়ে খাওয়া হয় লাউয়ের বিভিন্ন পদ। তা সে লাউ-ডাল হোক লাউ-ঘন্ট। এ দিন লাউ চাই-ই চাই।
এই কারণেই লাউয়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। মোওকা বুঝে কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যাপারীরা এক ঝটকায় দু’গুন, তিন গুন দাম বাড়িয়ে দেন। রবিবার, সোমবার জলপাইগুড়ির বাজারগুলিতে এই চড়া দামের লাউ বিকিয়েছে প্রচুর। তিরিশ টাকার নীচে বাজারে কোনো লাউ ছিল না। বড়ো সাইজের ভালো মানের লাউ-এর দাম উঠেছে সত্তর টাকা পর্যন্ত, জানালেন ছটপুজো এক পুণ্যার্থী অজয় সাঁ।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কিছু লাউ বাজারে ছিল। তার পর লাউ উধাও বাজার থেকে। যাঁরা একটু দেরি করে বাজারে এসেছেন তাঁদের মাথায় হাত। লাউ তো লাগবেই। জলপাইগুড়ি শহরের দীনবাজার থেকে শুরু করে সমস্ত বাজার ঘুরে লাউ না পেয়ে দীননাথ প্রসাদ নামে একজন সাইকেল নিয়ে ছুটলেন শহর থেকে একটু গ্রামের দিকে। যদি কারও বাড়ির মাচায় এক-আধটা লাউ মেলে এই আশায়। শিবাজি সাঁ নামে এক সবজি ব্যবসায়ী জানালেন, তাঁর কাছে ছোটো সাইজের ১২টি লাউ ছিল। চল্লিশ টাকা দরে সবগুলিই সকালে বিক্রি হয়ে গিয়েছে, পরে যাঁরা এসেছেন তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। যাঁরা এ বাজার ও বাজারে ঘুরে একটা লাউ পেয়েছেন, দাম শুনেই ছেঁকা লেগেছে। তাও বাধ্য হয়ে কিনতেই হয়েছে। নিয়মরক্ষা তো করতেই হবে। শুধু জলপাইগুড়ি নয়, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারেও একই অবস্থা।
সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাঁদেরও পাইকারদের কাছ থেকে চড়া দামেই লাউ কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে। গড়ে পাঁচ থেকে দশ টাকা লাভ থাকছে লাউপ্রতি। আর আমবাঙালি, যাঁরা এমনিই একটু লাউ-চিংড়ি বা মাছের মাথা দিয়ে লাউ-ঘন্ট খেতে ভালোবাসেন তাঁরা আপাতত বৈরাগ্য নিয়ে দূরেই থাকছেন লাউ থেকে। এই অবস্থা দেখেই কি বাউল গেয়েছিলেন..সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী!