শিশু পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তী স্কুল থেকে সাসপেন্ড

0

নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি: ময়নাগুড়ির আনন্দনগর জুনিয়র বেসিক স্কুল থেকে সাসপেন্ড করা হল জলপাইগুড়ি শিশুপাচার  কাণ্ডে অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তীকে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে তিনি সিআইডির হেফাজতে রয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান ধত্রিমোহন রায় জানিয়েছেন, “পুলিশের কাছ থেকে চন্দনাদেবীর গ্রেফতারি সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পরই তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

এ দিকে কর্মক্ষেত্রেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। ১৯৯৪ সালে তিনি ময়নাগুড়ির ছিট পুটিমারি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান। তখন অনিয়মিত স্কুলে আসার অভিযোগে তাঁকে বেশ কয়েক বার স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। এর পরেই তাঁকে আনন্দনগর বেসিক জুনিয়র স্কুলে বদলি করা হয়। ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষিকার পদ পান তিনি। এখানেও বিস্তর অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষিকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনো রকম নিয়মের তোয়াক্কা করতেন না, স্কুলে আসতেন মর্জিমতো, এমনই দাবি তাঁর সহকর্মীদের। স্কুলে না এসেও হাজিরা খাতায় সই করায় বেতন কেটে তাঁকে সর্তকও করা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের এক শিক্ষিকা জানান, “কথায় কথায় বুঝিয়ে দিতেন যে তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী, তাই কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিতে পারবে না।”

এ দিকে বুধবার সকালে ‘আশ্রয়’ হোম থেকে চার নাবালিকাকে অন্য হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেও ওই হোম থেকে দুই গর্ভবতী মহিলাকে সরিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। জানা গিয়েছে যে সন্তান প্রসবের পর অন্য হোমে পাঠানো হবে ওই দু’জনকে। তবে এখনও ‘আশ্রয়’ হোমে ১৫ জন আবাসিক মহিলা ও শিশু রয়েছে। তাদেরও ধীরে ধীরে অন্য হোমে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক রচনা ভগত।

‘বিমলা শিশুগৃহ’ ছাড়াও শিশুপাচার কাণ্ডে ধৃত চন্দনা চক্রবর্তীর সংস্থা নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের আওতাধীন ছিল জলপাইগুড়ির দেবনগর এলাকার এই ‘আশ্রয় শর্ট স্টে হোম’। মূলত, পাচার হয়ে যাওয়া বা উদ্ধার হওয়া মহিলাদের রাখা হত এখানে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, এই হোমে থাকা সন্তানসম্ভবা মহিলাদের প্রসবের পর সেই শিশুগুলিকেই দত্তক দেওয়ার নামে বিক্রি করে দেওয়া হত। হোমের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়েও একাধিকবার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সংস্থার কর্ণধার গ্রেফতার হওয়ায় আর্থিক অসুবিধের মধ্যেও পড়েছিলেন এখানকার কর্মী ও আবিসিকেরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় কোনো রকমে দু’বেলা খাওয়া জুটছিল তাঁদের। চন্দনাদেবী ও তাঁর সহযোগী সোনালি মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর হোমের আবাসিকদের অন্যত্র সরিয়ে এই হোম বন্ধ করে দেওয়ার দাবি ওঠে। মঙ্গলবার এই দাবিতে দু’ঘণ্টা পথও অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরেই জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন আবাসিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি আবাসিক মহিলাদের অন্য হোমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। নিরাপত্তার কারণে ‘আশ্রয়’ হোমে বসানো হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প।

অন্য দিকে গ্রেফতার হওয়া চন্দনাদেবীকে জেরার পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে সিআইডি। মঙ্গলবার তাঁকে শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলিজে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার কলকাতা থেকে আসা সিআইডি আধিকারিকদের একটি দল সেখানেই তাঁকে জেরা করছে বলে জানা গিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.