খবর অনলাইন ডেস্ক: সরকার পালটায়, ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করে নতুন প্রধানমন্ত্রী গদিতে বসেন, নতুন শাসক দলের অর্থমন্ত্রী বছর বছর সংসদে বাজেট পেশ করে সোনালি দিনের নানা ছবি আঁকেন। সাধারণ মানুষের অবোধ্য অর্থনীতির ভাষায় দেশের ‘উন্নতি’ হয়। ‘ইকোনমিক গ্রোথ’ হয়, ‘পার ক্যাপিটা ইনকাম’ বাড়ে, বাড়ে ‘পার ক্যাপিটা স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট’ ইত্যাদি ইত্যাদি। ওপর ওপর দেশের উন্নতি নিশ্চয়ই হয়। হাইরাইজ বিল্ডিং, ঝাঁ চকচকে মল, দৃষ্টিনন্দন আলোর বাহার, আগের তুলনায় অনেক ভালো রাস্তাঘাট, আরও কত কী! কিন্তু অন্দরের ছবিটা কতটা পালটায় ? লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে জনসংখ্যা, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বেকারি, দারিদ্র। মনে হয় আদতে দেশ যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই আছে।
বেকারির বাস্তব ছবিটা এখন কেমন, তা অতি সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনা দিয়ে বোঝানো যাক।
খুব বেশি দিন আগে নয়, বড়জোর মাস খানেক। উত্তরপ্রদেশের আমরোহা মিউনিসিপ্যালিটিতে সাফাই কর্মচারী চাই। খালি পদের সংখ্যা ১১৪। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হল। ১৯ হাজার অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ল। দেশে বেকারির বাস্তব চিত্র যা, তাতে সংখ্যাটা এমন কিছু বেশি নয়। বরং নিয়োগকর্তারা আরও বেশি অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়বে বলে আশা করেছিলেন। সাফাই কর্মচারী পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত কোনও শর্ত ছিল না। কারণ এই কাজে তথাকথিত ডিগ্রি শিক্ষার কোনও প্রয়োজন নেই। প্রধানত এটা শারীরিক কাজ –- ঝাড়ু হাতে শহরের রাস্তাঘাট ঝাঁট দেওয়া, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা, মিউনিসিপ্যালিটির পয়ঃপ্রণালী সাফসুতরো রাখা। বেতন মন্দ নয়, মাসে ১৭ হাজার টাকা।
অ্যাপ্লিকেশনগুলো খুলতেই নিয়োগকর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ। একী! পদপ্রার্থীদের মধ্যে এতো উচ্চশিক্ষিত মানুষজন! আমরোহা মিউনিসিপ্যালিটির সুপারিন্টেনডেন্ট ফয়েজ আলম জানান, “অ্যাপ্লিকেশনগুলো খোলা হতেই দেখা গেল, প্রচুর গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ওই পদের জন্য অ্যাপ্লাই করেছে। এমনকী এঁদের মধ্যে অনেক এমবিএ, বিটেকও আছে।” কিন্তু রাজ্যের বাল্মীকি সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের জেরে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের নির্দেশে আমরোহায় সাফাই কর্মচারী পদে নিয়োগ স্থগিত আছে বলে জানিয়েছেন মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান আফসার পারভেজ। বাল্মীকি সম্প্রদায়ের অভিযোগ, যে হেতু ওই পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও বিধিনিষেধ নেই, তাই বিভিন্ন জাতের শিক্ষিত যুবকরাও আবেদন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাল্মীকি সম্প্রদায় দাবি জানিয়েছে, সাফাই কর্মচারীর পদ তাদের জন্য সংরক্ষিত করা হোক। ইতিমধ্যে বহু আবেদনকারী ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষায় বসে রয়েছেন। এমনই একজন ডেহরা গ্রামের নকুল সিং। অঙ্কে অনার্স নিয়ে পাস করা নকুল বললেন, “২০১৪-তে কলেজের পাঠ শেষ হয়েছে। এখনও কোনও কাজ পাইনি। ভাবলাম এই পদে অ্যাপ্লাই করে দিই। মাইনেকড়ি তো খারাপ নয়।”
দ্বিতীয় ছবিটা পঞ্জাবের। ভাটিন্ডা জেলা আদালতের জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী চাই ১৯ জন। এঁদের মধ্যে ১৮ জন পিয়ন এবং এক জন ‘প্রসেস সার্ভার’। ‘প্রসেস সার্ভার’ পদটি এক্স-সার্ভিসম্যানের জন্য সংরক্ষিত। পিয়ন পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। এই পদে মূল বেতন প্রথম দু’বছর ৪৯০০ টাকা। প্রবেশনের মেয়াদ শেষ হলে ৪৯০০-১০৬৮০ টাকা বেতনক্রমের পুরো সুবিধা পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে পাওয়া যাবে গ্রেড পে হিসাবে ১৩০০ টাকা। মাসমাইনে সামান্যই। এই পদের জন্য যে সাড়ে ৮ হাজার আবেদনকারীর তালিকা জেলা আদালত কর্তৃপক্ষ তৈরি করেন, তার মধ্যে গ্র্যাজুয়েট তো আছেই, তা ছাড়াও আছেন এমএ, এমফিল, বিএবিএড, বিটেক, বিএ বিলাইব্রেরি, এমএবিএড ইত্যাদি ডিগ্রিধারীরাও। তিন ধরে পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ চলে।
দেশে কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্রটা যে কী তা এই দু’টি ঘটনা থেকেই পরিষ্কার।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।
যদি পাশ করা যুব সম্প্রদায় বেকার বসে থাকে তাহলে তো তারা আবেদন করবেই । ঝাঁ চকচকে মল , আলোকোজ্জ্বল সরনী যদি উচ্চশিক্ষিত মানুষরা পরিস্কার করে তাহলে বুঝতে হবে দেশ গড়গড়িয়ে এগিয়ে যাবে । শহর শিক্ষিত ঝাড়ুদারের শিক্ষার আলোয় উজ্জ্বলতর হবে ।
আগেও তো সত্যকারের দক্ষ চাষী , দক্ষ মৎসজীবি , মাঝি মাল্লা রাস্তায় ভিক্ষা করেছে তারাও কিন্তু স্বশিক্ষায় শিক্ষিত । পেশা ছেড়ে ভিক্ষা বা অদক্ষ কাজে যোগ দেওয়ার প্রবণতা সেই 42এর মণ্বন্তর থেকে আজও চলছে । মণ্বন্তর দীর্ঘজীবি হ’ক ।