কলকাতা বইমেলা
ধুলোমুক্ত বইমেলা, তবে আগামী বছরে নজর দিতে হবে পরিবহণে
রবিবারই ৪২তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার শেষ দিন। এ বার সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে আয়োজন করা হয়েছে বইমেলার। সম্পূর্ণ নতুন একটা এলাকায় নতুন মাঠে কেমন জমল এ বারের বইমেলার আসর? এই নিয়ে খবর অনলাইন পৌঁছে গিয়েছিল মাঠের বিভিন্ন কোণে। প্রকাশকদের স্টলে। এই সব প্রকাশনের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরেই বইমেলার সঙ্গে একাত্ম। তাঁরাই জানালেন তাঁদের এই নতুন […]

স্মিতা দাস
রবিবারই ৪২তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার শেষ দিন। এ বার সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে আয়োজন করা হয়েছে বইমেলার। সম্পূর্ণ নতুন একটা এলাকায় নতুন মাঠে কেমন জমল এ বারের বইমেলার আসর? এই নিয়ে খবর অনলাইন পৌঁছে গিয়েছিল মাঠের বিভিন্ন কোণে। প্রকাশকদের স্টলে। এই সব প্রকাশনের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরেই বইমেলার সঙ্গে একাত্ম। তাঁরাই জানালেন তাঁদের এই নতুন মাঠের অভিজ্ঞতার সাতকাহন।
৪৭ বছরের দে’জ পাবলিশার্স। দে’জ-এর পক্ষ থেকে খবর অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থার বিপণনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শান্তনু বাবু। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এই বারের মেলার অভিজ্ঞতা কেমন? তাঁর মতে, বইমেলার অভিজ্ঞতা সব থেকে ভালো ছিল ময়দানেই। এ বারে সব দিক থেকে আয়োজন মোটামুটি ভালো হলেও মেলায় যাতায়াতের ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। সব থেকে বড়ো সমস্যা হচ্ছে ফেরার সময়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তবে একটা কিছু ব্যবস্থা হচ্ছে। যাতায়াতের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় লোকজনের আনাগোনাও কিছুটা কম। তবে যাঁরা আসছেন তাঁরা বই কিনছেন। বিক্রির দিক থেকে সেই অর্থে তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে জায়গার সমস্যাটাও একটা বড়ো সমস্যা হয়েছে অনেকের ক্ষেত্রে। কারণ এই মাঠটা ছোটো। তাই সংকুলানের ক্ষেত্রে একটু সমস্যা তো হচ্ছেই। দে’জ-এর ১০০ টিরও বেশি বই এই বছর প্রকাশ হয়েছে। নতুন প্রকাশনার মধ্যে সমরেশ বসু, প্রচেত গুপ্ত আর শীর্ষেন্দুর বই খুবই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান শান্তুনু বাবু।
কথা হল আনন্দ প্রকাশনের অন্যতম কর্ণধার দেবানন্দ মণ্ডলের সঙ্গেও। তিনিও বললেন প্রায় একই রকম কথা। মূল সমস্যা ফেরার পথেই। মেলার শেষে ফেরার পথে যে কোনো দিকেরই যানবাহন পেতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যানবাহনের ব্যবস্থা করা হলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। তবে এ ছাড়া প্রথমবার সেন্ট্রাল পার্কে মেলার আয়োজন করা হলেও বাজার মোটামুটি ভালোই। বিক্রি ভালোই। গোটা দশটা বই প্রকাশ হয়েছে। সেগুলোর বিক্রিও বেশ ভালোই।
“প্রথমে একটু অসুবিধে মনে হয়েছিল। চিন্তায়ও ছিলাম, কেমন কী বিক্রি হবে? এক দম নতুন মাঠ। কিন্তু যত দিন গেছে ততই লোকের সমাগম বেশ ভালোই হয়েছে। বিক্রিও হয়েছে ভালো। লোকজন স্টলে ঢুকছে, বই দেখছে, কিনছে। মন্দ নয়। বিশেষ করে কিশোরকিশোরীরা এ বারে যেন বেশি আগ্রহী। অন্য মাঠের থেকে এটা অনেকটা লম্বাটে বলে স্টল সাজানোর ক্ষেত্রে একটু ঘাড়ে ঘাড়ে ব্যাপারটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা একটাই। আসা যাওয়ার পথে যেখানে সেখানে আটকে দেওয়া হচ্ছে। বাস ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে সমস্যায় খুব বেশিই পড়তে হচ্ছে। কচিকাঁচা আর বয়স্ক মানুষদের নিয়ে যাঁরা আসছেন তাঁদের অনেকটা হেঁটে আসতে হচ্ছে। বাস, অটো দু’টিই পর্যাপ্ত নয়” – খবর অনলাইনকে বললেন সাহিত্য অকাদেমির পূর্বাঞ্চলের বিক্রয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরুনি চক্রবর্তী।
মানসী পাবলিশিং হাউসের মালিক যোগেশ সান্যাল বলেন, দিনে দিনে বইয়ের দামও বাড়ছে, বিক্রি বাড়ছে। নতুন জায়গা বলে তাতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। যাতায়াতের ব্যাপারে তেমন কোনো সমস্যা চোখে পড়েনি বলেই জানান যোগেশবাবু।
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে বোঝা গেল, জায়গাটা বেশ ছোটো। যার ফলে যাতায়াতের গলিগুলোতে চলাফেরার খুব অসুবিধা হচ্ছে। দেখেশুনে মনে হতেই পারে ভিড় তো ভালোই হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে যাঁরা কলকাতা বইমেলা করে আসছেন তাঁদের অনেকেই মনে করেন বিগত কয়েক বছরের পরিপ্রেক্ষিতে এখানে লোক একটু কম হচ্ছে। এমনই একজন ট্রাভেলস রাইটার্স ফোরামের মেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অসীম ঘোষ চৌধুরী। তবে তাঁর মতে, বিক্রি মন্দ হচ্ছে না। বাঙলা বইয়ের ব্যাপারে যুবসমাজকে বেশ আগ্রহীই মনে হচ্ছে। মেলায় যাতায়াতের সমস্যার কথা অসীমবাবুও বলেন। এর সঙ্গে রয়েছে অটোচালকদের প্রচণ্ড উপদ্রব। এটাই মানুষকে বিপদে ফেলছে। তা ছাড়া আলো জল শৌচালয়ের সমস্যা বলতে গেলে কিছুই নেই।
মিলন মেলা বা তার আগে দেখা যেত মেলার বাইরেও মেলা থাকে। কিন্তু এই বারের মেলায় সেই ব্যাপারটা নেই। একটা অন্য রকম শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যাপার। কিন্তু তা হলেও এই ব্যাপারটা অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে হতাশ করেছে। অনেক অন্য রকমের শিল্পসামগ্রী বা বইয়েরই ক্ষুদ্র বিক্রেতারা এখানে স্থান পাননি। সারা বছর ধরে তাঁরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এই ব্যবস্থায় বেশ ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মেলনীর অন্যতম সংগঠক বীথিকা পাল। যাতায়াত এবং জায়গা ছোটো হয়ে যাওয়ার সমস্যার কথা বীথিকাদেবীও বললেন। তাঁর মতে, জায়গা ছোটো বলে স্টল সংখ্যা অনেক কম। ভিড় কম। ফলে বিক্রিটাও বেশ কিছুটা কম।
একটু অন্য রকম সমস্যার কথা বললেন রূপালী পাবলিকেশনের সূর্যেন্দু ভট্টাচার্য। মেলা গ্রাউন্ড ডিজাইনিং-এর সমস্যা একটা বড়ো সমস্যা হয়েছে স্টল বন্টনের ক্ষেত্রে। অনেক স্টলই সরু গলির মধ্যে পড়েছে। ফলে সে দিকে লোকজনের আনাগোনা কম হচ্ছে। তাদের লোকসান তো হচ্ছেই। তা ছাড়া অন্য স্টলেও বিক্রি অনেকটাই কম।
মোটের ওপর গোটা মেলা ঘুরে যে চিত্র চোখে পড়ল তা হল আসা যাওয়ার সমস্যার সমাধান করতে আরও একটু বেশি নজর দিতে হবে প্রশাসনকে। একই মতামত মেলা দেখতে আসা দর্শকদেরও।
তবে একটা ব্যাপারে সবাই এক মত। এ বারের বইমেলা একেবারেই ধুলোমুক্ত মেলা।
কলকাতা বইমেলা
মুর্শিদাবাদকে জানতে পড়ুন জাহির রায়হানের ‘মুর্শিদাবাদ’, মিলছে বইমেলায় ৩৫২ স্টলে

শম্ভু সেন
সুবে বাংলা তথা বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ রাজধানী মুর্শিদাবাদ।ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ‘কমিটি অফ রেভেনিউ’-এর এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ বাংলার অন্যতম জেলা হয় ১৭৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল। গভর্নর জেনারেল কমিটির ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার পর ঠিক এক সপ্তাহ পর মুর্শিদাবাদ জেলা হিসাবে বাংলার মানচিত্রে স্থান পায়।
ভারত ভাগের ‘৩ জুন প্ল্যান’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন প্ল্যান’ অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ চলে যায় প্রস্তাবিত পাকিস্তানে। আর অধুনা বাংলাদেশের খুলনা থেকে যায় ভারতে। মুর্শিদাবাদের তদানীন্তন নবাব সৈয়দ ওয়াসেফ আলি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ ভারতের মধ্যে থাক। তিনি এবং জেলার বেশ কিছু বিশিষ্ট নাগরিক র্যাডক্লিফ কমিশনের কাছে তাঁদের দাবির সমর্থনে জোরালো বক্তব্য পেশ করলেন। যাঁরা চেয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানে যাক, তাঁদের দাবির ভিত্তি ছিল জেলায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর গরিষ্ঠতা। আর অপর পক্ষের দাবির ভিত্তি ছিল জেলার ভৌগোলিক অবস্থান। কলকাতা বন্দরের অস্তিত্ব নির্ভরশীল মুর্শিদাবাদ কোন দেশে যাবে তার উপর। বন্দররক্ষায় ভাগীরথী ও তার উপনদীগুলির জলধারার একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রূপালীর ৮টি বই, স্বপ্ন থেকে বাস্তব, সঙ্গে ইতিহাসও
দু’ পক্ষই নিজ নিজ দাবির স্বপক্ষে কমিশনে রিপোর্ট পেশ করল। চেয়ারম্যান র্যাডক্লিফ তাঁর চূড়ান্ত অ্যাওয়ার্ড দাখিল করলেন ১২ আগস্ট। বিতর্ক-মতবিরোধ-অশান্তির আশঙ্কায় সেই অ্যাওয়ার্ড ১৫ আগস্টের আগে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে সরকার। শেষ পর্যন্ত ১৮ আগস্ট বিকেলে রায় বেরোল কমিশনের। স্বাধীন ভারতের তেরঙা পতাকা উড়ল মুর্শিদাবাদে। খুলনা চলে গেল তদানীন্তন পাকিস্তানে।
হাতের কাছে রয়েছে জাহির রায়হানের ‘মুর্শিদাবাদ’ গ্রন্থটি। এ সব সবিস্তার ইতিহাস পাওয়া গেল সেই গ্রন্থে। জাহির অবশ্য এই গ্রন্থে শুধু যে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন তা নয়, নানা দিক থেকে মুর্শিদাবাদকে তুলে ধরেছেন পাঠকের কাছে। এঁকেছেন মুর্শিদাবাদের একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি।
গ্রন্থের শুরুতেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ নাম কী ভাবে এল, তার ইতিহাস। নবাবি আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের মুর্শিদাবাদকে যথাযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করেছেন জাহির। নদনদী, জলাভূমি, যোগাযোগ ব্যবস্থা-সহ মুর্শিদাবাদের ভৌগোলিক বিবরণ সমৃদ্ধ করেছে এই গ্রন্থটিকে। নদীভাঙনের সমস্যাও জাহিরের গ্রন্থে এসেছে পৃথক অধ্যায় হিসাবে। জেলার অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জাহির বাদ দেননি আম-লিচু-মিষ্টি, জেলার হাট এবং বিভিন্ন শিল্পকর্মকে। জেলা সদর বহরমপুর ও অতীতের নদীবন্দর কাশিমবাজারকে আলাদা ভাবে পরিচিত করানো হয়েছে পাঠকদের সঙ্গে।

সিরাজের মুর্শিদাবাদ নিয়ে আলোচনা করলে আমরা কি সেখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলি বাদ রাখতে পাড়ি? পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটনস্থল মুর্শিদাবাদ। নবাবি আমলের নানা স্থাপত্য দাঁড়িয়ে রয়েছে এই জেলার মাটিতে, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের ইতিহাস, তার কিছু রোমহর্ষক এবং রক্তাক্তও বটে। ‘মুর্শিদাবাদ’ গ্রন্থে জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলি নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা করেছেন জাহির। গ্রন্থে রয়েছে জেলার মেলা-পার্বণের কথাও। একই সঙ্গে জাহির শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন জেলার কৃতী সন্তানদের।
এক কথায়, মুর্শিদাবাদকে জানতে হলে অবশ্য পাঠ্য জাহির রায়হানের ‘মুর্শিদাবাদ’। মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র জাহির নিজের জেলাকে চেনেন হাতের তালুর মতো। তাঁর সেই পরিচয় রয়েছে বইয়ের প্রতিটি ছত্রে। শুধু তা-ই নয়, বাংলা লেখায় তাঁর দখল অনস্বীকার্য। এক অনুপম গদ্যশৈলীর ধারক তিনি। তাই ‘মুর্শিদাবাদ’ গ্রন্থের পাঠযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো অবকাশই নেই।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন জাহির রায়হান। খবর অনলাইনেরও নিয়মিত লেখক তিনি। আমরা গর্বিত। জাহিরের ‘মুর্শিদাবাদ’ গ্রন্থ পাওয়া যাচ্ছে কলকাতা বইমেলায় ৩৫২ নম্বর স্টলে, ‘রংরুট হলিডেয়ার-এ।
কলকাতা বইমেলা
কুড়ি বইমেলার কড়চা

জাহির রায়হান
“একমাত্র চার পেয়ে টেবল ছাড়া, চিনারা সব চার পেয়ে জিনিসই খায় গোগ্রাসে”, পুকাই বলল। তার পর পরই শান্তনুদার মোক্ষম – “আর বাঘের হাড়ের গুঁড়ো খায় যৌনশক্তি বাড়াতে।”। সার্থক এক পাশে কানে হেডফোন গুঁজে বই পড়ছে একমনে, এ দিকে এ হেন দু’টি উবাচ-উক্তিতে শেষ হয়ে গেল আমার ক্ষণজন্মা বুদ্ধির দৌড়। করোনা রোগের উৎপত্তি এবং বাড়বাড়ন্ত চিন দেশে তা শুনেছি, তা বলে বাঘের হাড়গুঁড়ো আর চার পেয়ে টেবল? কখনও শুনিনি বাপ!
রংরুটের স্টলে চলছে আমার এ বছরের বইমেলার আড্ডা। গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করছি, বইমেলায় গেলে নিজেকে বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিজীবী মনে হয়। তাই যাওয়ার লোভ সামলাতে পারি না। তা ছাড়া এ বছর গ্রন্থকার হিসেবে পুস্তক-পার্বণে প্রবেশ আমার। আমায় আটকায় সাধ্যি কার! ৩৫২ নম্বর স্টলে ঢুকতেই শান্তনুদা ইশারা করলেন এক মগ্ন বইক্রেতাকে, ওই দেখুন উনিই লিখেছেন বইটি। ক্রেতার হাতে তখন ‘মুর্শিদাবাদ’। তার পর পাঠক, লেখক দু’ জনেই করলাম সুযোগের সদ্ব্যবহার। লেখককে কাছে পেয়ে উনি আমার সই বাগালেন, আমিও নিজেকে কেউকেটা মনে করে রঙিন বইয়ের সাদা মলাটে লিখে দিলাম পিতৃদত্ত নাম, জাহির রায়হান।

কেউ একজন ফেসবুকে লিখেছেন দেখলাম, এত লোকের স্ট্যাটাস পড়ি ফেসবুকে, তা না পড়ে যদি অতগুলো বই পড়তাম, কোথায় পৌঁছে যেতাম আজ। কথাটি কিন্তু মন্দ নয়। সারা বছর বইমেলা কেন হয় না, তা নিয়ে আমার অন্তরে হালকা আক্ষেপ কাজ করে। বাঙালির তো মেলা-খেলা-পালপরবের কমতি নেই, সব উৎসব-অনুষ্ঠানে যদি বইয়ের ছোটো ছোটো স্টল করা হত, কতই না ভালো হত। পাঠক-ক্রেতাকে উৎসাহ দিতে গিল্ড অফিস থেকে হাঁকছে মাইকে, এক হাজার টাকা বা অধিক মূল্যের বই খরিদ করলেই আপনি হতে পারেন সৌভাগ্যবান বিজেতা। সে সব শুনতে শুনতে চলে গেলাম ‘জাগো বাংলা’র স্টলে। সেখানে গিয়ে দেখি থরে থরে সাজানো রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর স্টল জুড়েই ‘জাগো বাংলা’র জয়গান, নো এনআরসি, নো সিএএ, নো এনপিআর।
মাইকে বাংলা গান বাজছিলই, দেখি পশ্চিমবঙ্গ মণ্ডপের সামনে জমে উঠেছে লোকগানের আসর। সামনে থেবড়ে-দেবড়ে বসে তা উপভোগ করছে আট থেকে আশি। আমি ঘুরে চলেছি স্টল থেকে স্টলে, হাতে ঝুলছে মোবাইল চার্জারের সাদা তার, খুঁজে চলেছি ইলেকট্রিক প্লাগ। বন্ধু সেবাব্রত দু’টি বই কেনার ফরমান পাঠিয়েছে মোবাইলে, এ দিকে ফোনে চার্জ নেই একফোঁটা। কী করি কী করি, ভাবতে ভাবতেই অরণ্যমনে সন্ধান মিলল হঠাৎই। অনিমেষ বৈশ্যর ‘নুন মরিচের জীবন’ কিনে সেখানেই ১০ মিনিট বলে পাক্কা ৪৫ মিনিটের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বাগিয়ে নিলাম ফকোটিয়ায়।

সুখেন্দুশেখর দে-কে চিনতাম বন্ধুর বাবা হিসেবে, এখন চিনি গিল্ডের কর্মকর্তা হিসেবে। বন্ধু হারিয়ে গেছে বহু দিন, যোগাযোগ নেই আর। কোনো একটি টিভি চ্যানেল সাক্ষাৎকার নিচ্ছে সুখেন্দুবাবুর, সঞ্চালকের প্রশ্নের উ্ত্তরে বললেন তিনি, “৯ তারিখ শেষ হচ্ছে এ বছরের বইমেলা, ঠিক পরের দিন ১০ তারিখ শুরু হবে আগামী বছরের প্রস্তুতি।”
কতকটা তাই-ই, এত বড়ো আয়োজন, যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বটেক। বাঙালি কি বই কিনছে? প্রশ্ন উঁকি দিল মাথায়। মনে মনে খুঁজছিলাম সেই ক্রেতাকে, যে গত বার একাই লক্ষ টাকার বই কিনে স্থান করে নিয়েছিলেন সংবাদপত্রের পাতায়। গত বার যখন আসি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ট্রায়াল চলছিল মাথার ওপরে। এক বছর অতিক্রান্ত, সে ট্রায়াল এখনও বুঝি শেষ হয়নি, এখনও গড়ায়নি মেট্রোর চাকা। তবে এ বার গড়াবে, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে।
ট্রাভেল ছুটি কি এ বার স্টল দেয়নি? খুঁজলাম, পেলাম না। সুপ্রতীমবাবুকে ফোন করতে হবে একবার। ট্রাভেল রাইটার্স ফোরামে ছিল না শ্রয়ণ, ছিলেন না বিদ্যুৎদাও। আশিসবাবুর দেখা পেলাম না চলো যাই-এ। আমি কি তবে একটু আগে এসেছি বইমেলা চত্বরে? হবে হয়তো, তাই বুঝি লোক কম, এখনও বুঝি জানতে পারেনি সকলে, আমি রয়েছি প্রাঙ্গণে! হা হা, দেখছেন তো বইমেলা গেলে কেমন নিজেকে বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিজীবী বলে মনে হয়!
ছবি: লেখক
কলকাতা বইমেলা
বুধবার থেকে পাঁচ দিন ব্যাপী বইমেলা শুরু হচ্ছে বাঁকুড়ার ইন্দাসে
বাঁকুড়া: ‘বই পড়ুন, বই পড়ান ও বই উপহার দিন, বইয়ের চেয়ে পরম বন্ধু আর কিছু নেই।’ এই বার্তাকে সামনে রেখে বুধবার বইমেলা শুরু হচ্ছে বাঁকুড়ার ইন্দাসে। এ বার এই বইমেলা দ্বিতীয় বর্ষে পড়ল। ইন্দাসের বিডিও সুচেতনা দাসের বিশেষ উদ্যোগে দ্বিতীয় বর্ষ বইমেলা উপলক্ষে স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে এখন সাজো সাজো রব। ইন্দাস ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত […]

ইন্দ্রাণী সেন
বাঁকুড়া: ‘বই পড়ুন, বই পড়ান ও বই উপহার দিন, বইয়ের চেয়ে পরম বন্ধু আর কিছু নেই।’ এই বার্তাকে সামনে রেখে বুধবার বইমেলা শুরু হচ্ছে বাঁকুড়ার ইন্দাসে। এ বার এই বইমেলা দ্বিতীয় বর্ষে পড়ল। ইন্দাসের বিডিও সুচেতনা দাসের বিশেষ উদ্যোগে দ্বিতীয় বর্ষ বইমেলা উপলক্ষে স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে এখন সাজো সাজো রব।
ইন্দাস ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে দ্বিতীয় বর্ষ বইমেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের প্রধান বিএম জামাল হুসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ভাষা আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ডঃ ইমানুল হক, মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, মহকুমা শাসক (বিষ্ণুপুর) ময়ুরী ভাসু, সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, বিধায়ক গুরুপদ মেটে, আনন্দ পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি সুধীর দত্ত প্রমুখ।
বইমেলা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বার বইমেলায় কলকাতা ও রাজ্যের তিরিশটি প্রকাশনা সংস্থা যোগ দিচ্ছে। একই সঙ্গে স্থানীয় কবি-লেখকদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্যও আলাদা স্টলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে বইমেলা কমিটি সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে।
বইমেলা মঞ্চে প্রতি দিন থাকছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে হবে আলোচনাসভা, কবি সম্মেলনও। আগামী কয়েক দিন জেলার কবি, সাহিত্যিকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অন্যতম গন্তব্যস্থল হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইন্দাসের বিডিও সুচেতনা দাস বলেন, “বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু হয় না। ইন্দাস ব্লক সহ বাঁকুড়া জেলার মানুষের কাছে সহজে ও সুলভে বই পৌঁছে দিতে এই বইমেলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” বইমেলায় প্রতি দিন আসার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। বইমেলা চলবে আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত।
-
রাজ্য1 day ago
পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল
-
গাড়ি ও বাইক1 day ago
আরটিও অফিসে আর যেতে হবে না! চালু হল আধার ভিত্তিক যোগাযোগহীন পরিষেবা
-
ভ্রমণের খবর2 days ago
ব্যাপক ক্ষতির মুখে পর্যটন, রাঢ়বঙ্গে ভোট পেছোনোর আর্জি নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন
-
রাজ্য24 hours ago
বিধান পরিষদ গঠন করে প্রবীণদের স্থান দেওয়া হবে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বললেন মমতা