
কলকাতার চলচ্চিত্র প্রেমিরা খুশি। চব্বিশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবঘিরে আবার উন্মাদনা।
নিউ মিডিয়ার কল্যাণে এখন দেশ বিদেশের ফিল্ম দেখতে পাওয়া হাতের মুঠোয়। কিন্তু সাম্প্রতিক ফিল্মগুলো সহজে দেখার সুযোগ নেই। এরকমই কিছু ফিল্ম কলকাতা উৎসবেদেখা যাবে।
প্রতি বারের মতো এবারেও থাকছে ক্ল্যাসিক ফিল্ম দেখার সুযোগ। যদিও সিনেমা প্রেমীদের নিজের কাছেই থাকে এই সব ফিল্মের সংগ্রহ। ফলত সাম্প্রতিক ফিল্মের দিকেই নজর থাকবে বেশি, অনুমান করাই যায়।
দ্বিতীয় দিন উৎসব শুরুর আসল দিন। এদিন যেহেতু রবিবার উপচানো ভিড় হতেই পারে। বিশেষ করে বিকেলের স্ক্রিনিংগুলোয় ভিড় হবেই ধরে নেওয়া যায়। বিকেলের দিকে হলে ঢোকার দীর্ঘ লাইন,পুলিশের ব্যাগ হাতড়ানো, কাঁচি-ছুরির সঙ্গে দেশলাই-সিগারেট বাতিল এবং সেগুলো অভিভাবকহীন ছেড়ে রেখে হলে প্রবেশের অনুমতি; সবই পুনরাবৃত্ত হতে চলেছে। পুনরাবৃত্ত হতে চলেছে সিঁড়িতে বসে বা জায়গা না পেয়ে ভিড়ের মধ্যে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে একটা গোটা ফিল্ম দেখার অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন: ২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব: খবর অনলাইনের বাছাই
কেউ কেউ হয়তো ঝামেলাতেও জড়িয়ে পড়বে শো চলাকালীন আর মন্তব্যে প্রতি মন্তব্যে ফিল্ম দেখাটাই মাটি হবে। কোনো কোনো দর্শক প্রতিটি দৃশ্যে যা যা দেখবেন মুখে বলতেও থাকবেন। তাঁর আশেপাশের সিরিয়াস দর্শক হয়তো তাঁকে থামানোর চেষ্টা করবেন, ‘আমরাও দেখতে পাচ্ছি। চুপ করুন প্লিজ’। খানিক চুপ থেকে নতুন উদ্যোমে আবার হয়তো ধারাভাষ্য শুরু করবেন সেই দর্শক।
মোবাইল ফোনের যত রিংটোন আছে সব শোনা যাবে। প্রতি বছর এনিয়ে প্রবল আপত্তির পরেও এবারেও রিংটোন বন্ধ হবে বলে মনে হয় না।
যারা ফিল্মের মেকিং জানেন তাঁদের আবার অন্য সমস্যা। প্রতিটি শট কীভাবে নেওয়া হয়েছে সেটিই মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করবে বেশি। কোথায় কী কন্টিনিউয়িটি মিস হয়েছে, এডিটিং কেমন জবরদস্ত হয়েছে; আহা! কি দারুণ মিউজিক! উঁহু, এই দৃশ্যে অ্যামবিয়ান্স সাউন্ডটা কি দারুণ করেছে। হ্যাঁ, তবে গল্প যদি একাত্ম করে ফেলে তাহলে শান্তি। মেকিং থেকে মনোযোগ চলে যাবে গল্পে।
প্রতি বছর একটা মজার ব্যাপার হয়। ফিল্ম দেখার তালিকা অনেকেই তৈরি করেন কারো লেখা পড়ে বা বড়োদের পরামর্শে। শেষে দেখা যায় তালিকার অনেক ফিল্মই সুখকর হয় না। তাই একটু নেট ঘেঁটে নিজের তালিকা নিজেই করে নিতে পারেন। আমি ঠিক করেছি সাম্প্রতিক ফিল্মগুলোই দেখার চেষ্টা করবো। স্পেশাল ফোকাস তিউনিসিয়াও আগ্রহ জাগাচ্ছে।ইরানের ফিল্ম প্রায় কখনো হতাশ করেনি।জাফর পানাহি, মাজিদ মাজিদি তো আছেনই। সৌদি আরব থেকেও ফিল্ম এসেছে।ফিল্মের জগতে একেবারে নতুন দেশ। গোদারের সাম্প্রতিক ফিল্মেও দর্শক মজবেন নিশ্চয়। বাংলা সিনেমার একশ বছর উপলক্ষে কিছু রিস্টোর করা ফিল্ম দেখার সুযোগ মিলবে যা সচরাচর দেখা যায় না।সবথেকে বড়ো কথা তরুণ পরিচালকদের কাজও দেখা যাবে শর্ট ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম বিভাগে।
কিন্তু যা হয়, তালিকা অনুযায়ী ফিল্ম দেখা সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে। বিশেষ করে বিকেলের শো গুলোর কথা বলছি। এত দীর্ঘ লাইন, এত ভিড় হয় বিকেলে যে আপনি যখন হলে ঢুকতে সক্ষম হলেন হয়তো তখন হলে তিল ধারণেরও জায়গা নেই। ফলত বিকেলের শো-এর অপশন বেছে রাখবেন।
তার ওপর ডেলিগেট কার্ডধারীদের একেবারে গরু ছাগলের মতো গাদাগাদি করে ছবি দেখতে বাধ্য করা হয় কোনো কোনো হলে। টিকিট কেটে দর্শক হলে ঢুকবেন আশা করে গুটিকয় দর্শক নিয়ে নীচটাফাঁকাই পড়ে থাকে। কোনো বছরই অনুরোধ, উপরোধ কিছুতেই চিঁড়েভেজে না।
উৎসব শেষে দেখা যাবে এত ফিল্ম দেখেছেন যে সব ফিল্ম ভালো মনেও থাকবে না।এত দেশের এত ফিল্ম দেখানো হবে সব দেখা সম্ভবও নয়। আশা করবো যে মনে রাখার মতো কিছু ফিল্ম আপনার আমার ঝুলিতে যোগ হবে।এই আশা নিয়ে উৎসব শুরু করা যাক।