
আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু তা যে এমন মহারাজকীয় প্রত্যাবর্তন করবে এতটাও আন্দাজ করা যায়নি।
‘এল নিনো’র প্রভাব থাকায় এ বছর মরশুমের শুরু থেকেই দক্ষিণবঙ্গে নিষ্ক্রিয় ছিল বর্ষা। জুন এবং জুলাইয়ে কার্যত ভারী বৃষ্টির দেখাই মেলেনি। এই দুই মাস মিলিয়ে যেখানে প্রায় ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেখানে হয়েছে মাত্র ২২৫ মিলিমিটার। শহরে বৃষ্টির ঘাটতি ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৭০ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে শহরে জলকষ্টের আশঙ্কাও শুরু করে দিয়েছিলেন অনেকে। মাটির নীচে জলস্তর কমতে থাকায় আসন্ন শুখা মরশুমে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। জেলার অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ ছিল। পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ ছিল দুই ২৪ পরগণা এবং বাঁকুড়া জেলায়। মাথায় হাত উঠে গিয়েছিল কৃষকদের। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বীজতলা।

কিন্তু আগস্টেই ঘুরে দাঁড়াল বর্ষা। দুর্বল হয়ে গেল এল নিনো। সেই সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠল মৌসুমী অক্ষরেখা। যার প্রভাবে দফায় দফায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কবলে পড়ল কলকাতা ও আশেপাশের অঞ্চল। গত ১৬ আগস্ট দুপুর আড়াইটে থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি পেল শহর। আর তাতেই ঘাটতি ছবিটা এক্কেবারে বদলে গেল।
বৃষ্টি নামল জেলাগুলিতেও। ফলে বর্ষা স্বাভাবিকের ঘরে চলে এল পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগণায়। সেপ্টেম্বর পড়লেও বর্ষা সেই সক্রিয়তা বজায় রেখেছে। গত সপ্তাহে টানা পাঁচ দিন বৃষ্টি কমে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আবার তা তেড়েফুঁড়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন রাজ্য জুড়ে ব্যাপক বৃষ্টি, পুজোর আগে মাথায় হাত উদ্যোক্তাদের
কলকাতায় কত বৃষ্টি হয়েছে সেটা একটা তথ্য দিলে চমকে উঠতে পারেন। আগস্টের ১ তারিখ থেকে আজ, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে সাড়ে আটশো মিলিমিটার। স্বাভাবিক নিয়মে এই ক’ দিনে ছ’শো মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা।

ফলে এই বর্ষার মরশুমে এই মুহূর্তে এক হাজার মিলিমিটার পেরিয়ে গিয়েছে কলকাতার বৃষ্টির পরিমাণ। সাধারণত ১ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শহরে ১২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। মরশুমের প্রথম দুই মাস দেখে মনে হচ্ছিল এ বার টেনেটুনে ৫০০-ও হয়তো পেরোতে পারবে না কলকাতার বৃষ্টি। কিন্তু বর্তমানে সংখ্যাটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ১১২০ মিলিমিটার। অর্থাৎ, এক সময়ে ৭০ শতাংশ ঘাটতিতে থাকা কলকাতায় এই মুহূর্তে বৃষ্টির ঘাটতি মাত্র ৬ শতাংশ।
এখানেও কিন্তু শেষ নয়। সরকারি ভাবে বর্ষার মরশুম শেষ হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর, অর্থাৎ এখনও পাঁচ দিন বাকি। আগামী দিনগুলোতেও জোরদার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কলকাতার বৃষ্টি যদি ঘাটতি ছাপিয়ে কিছুটা বাড়তিও হয়ে যায়, অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলির পরিস্থিতি কলকাতার মতো এত ভালো না হলেও, সেখানেও দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করেছে বর্ষা। এখন স্বাভাবিকের ঘরে রয়েছে পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগণা। আগামী দিনে যা বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাতে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া, হাওড়া এবং হুগলিও স্বাভাবিকে ঢুকে যেতে পারে।

পুজোর মুখেমুখে এই বৃষ্টিতে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্যোক্তা এবং প্রতিমাশিল্পীদের মাথায় হাত উঠেছে, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এই বৃষ্টি খুবই উপকারী। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই শুখা মরশুম শুরু হয়ে যাবে দক্ষিণবঙ্গে। তার আগে এই বৃষ্টি বিভিন্ন জলাধারে জলস্তর আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।