উজ্জ্বল ত্বক আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এক ঢাল চুল পেতে রাসায়নিক মেশানো বিউটি প্রোডাক্ট নয়, ভরসা থাকুক হোম রেমেডির ওপর। চুল আর ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় ভীষণ উপকারী হল চালধোয়া জল। স্কিন হোয়াইটনিং, ব্রাইটেনিং, অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে রাইস ওয়াটার বা চালধোয়া জলের ব্যবহারের প্রচলন আছে। সৌন্দর্যরক্ষায় চালধোয়া জলের ব্যবহার একেবারেই এশিয়া মহাদেশের নিজস্ব ফর্মুলা। এক হাজার বছর আগেও জাপানে এর ব্যবহারের খোঁজ মিলেছে।
ভাতের ফ্যান অথবা চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখলে যে জল পাওয়া যায় তা প্রাকৃতিক ভাবে অত্যন্ত গুণসম্পন্ন। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে বলে চালধোয়া জলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। বয়স কম দেখায়, ময়েশ্চারাইজ হয়, ঠান্ডা অনুভব হয়।
দু’ ভাবে চালধোয়া জল তৈরি করা যায়
(১) এক কাপ যে কোনো ধরনের চাল নিন। ৩০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখুন। একটা পাত্রে ভরে রেখে চালধোয়া জল ব্যবহার করুন।
(২) ভাতের ফ্যান ফেলে না দিয়ে ঠান্ডা করে কাচের পাত্রে ভরে ফ্রিজে রাখুন। সপ্তাহে একদিন করে তা ব্যবহার করুন।
চুল-ত্বকের জন্য কী ভাবে চালধোয়া জল ব্যবহার করবেন
(১) ফেস টোনার হিসাবে ব্যবহার করুন চালধোয়া জল। সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। অকালে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া আটকায়।
(২) যে কোনো ফেস মাস্কের মধ্যে তরল উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করুন চালধোয়া জল। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চকচকে দাগহীন ত্বক মিলবে। ত্বকের কালো ভাব কমে যাবে। দাগও দূর হবে।
(৩) ফ্রিজের মধ্যে থাকা আইস কিউব ট্রেতে ভরে চালধোয়া জল বরফ করে নিন। সেই বরফ মুখে, গলায়, হাতে, পায়ে লাগান। ফুসকুড়ি, ব্রনর ঝামেলা দূর হয়ে উজ্জ্বল ত্বক মিলবে। ত্বকের ফোলাভাব কমে গিয়ে নরম হবে।
(৪) সূর্যের আলোয় ত্বক পুড়ে গিয়ে লালচে কালো হয়ে যায়। চালধোয়া জল আর অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ত্বক লাগালে সানবার্ন আর ট্যানিং বা রোদে পুড়ে কালো ভাব কমে যায়।
(৫) চালধোয়া জল রাসায়নিকমুক্ত হেয়ার ক্লিনজার। তাই এই চালধোয়া জল চুলে লাগালে জট পাকানো, কোঁকড়ানো ভাব কমে, চুলে শাইন ভালো হয়।
(৬) ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে রাইস ওয়াইন (বাসি ভাত জলে চটকে নিলে যে তরল মেলে) রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বকের আরও ক্ষতি হওয়া আটকায়। রাইস ওয়াইন ত্বকের কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায়, কুঁচকে যাওয়া আটকায়। রাইস ওয়াইনে প্রাকৃতিক ভাবে সানস্ক্রিন আর অ্যান্টিএজিং গুণ আছে।
(৭) অনেক বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে সোডিয়াম লরেল সালফেট (SLS) থাকার কারণে ত্বকে চুলকানি হয়। ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। দিনে দু’ বার চালধোয়া জল লাগালে উপকার মেলে।
(৮) একজিমার মতো ত্বকের সমস্যা দূর হয় চালধোয়া জলে। ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে সানস্ক্রিন গুণ থাকায় চালধোয়া জল ত্বককে রোদের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচায়।
(৯) চালধোয়া জল আর এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। তুলোর বল চালধোয়া জলে ভালো করে ভিজিয়ে নিয়ে গলায় ও মুখে লাগান। হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে নিন। চালধোয়া জল, অল্প পরিমাণে সি সলট বা সমুদ্রের নুন, এসেন্সিয়াল অয়েল আর লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে হাতে পায়ে ঘষলে মৃত কোষ উঠে যাবে।