
আগের দিন বলেছিলাম বিয়ের কনের সাজগোজের প্রথম ধাপ চুল বাঁধার ধরন নিয়ে। চুল বাঁধার পরই সাজগোজের মধ্যে যে অংশটা এসে পড়ে তা হল মুখের সাজ বা মেক আপ। বিশেষ বিশেষ অংশ যেমন চোখ বা ঠোঁটের সাজ কিন্তু এক্কেবারে অন্য রকম একটা লুক এনে দিতে পারে। আবার কনের পেশা বা পছন্দের ওপর ভিত্তি করেও মেকআপ করা যায়। কখনও করা যায় ভারী মেকআপ। আবার অনেকেই হালকা মেকআপ-এ আগ্রহী।
মেকাপের ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো এ ক্ষেত্রে কিন্তু সব কিছুই নির্বাচন করতে হবে কনের গায়ের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে। তবে সব সাজই কিন্তু আবার তিনটে ধরনের হতে পারে। ট্র্যাডিশনাল, ট্রেন্ডি, ফিউশান। এখানে ছোট্টো করে বলে রাখি, ট্র্যাডিশনাল মেকআপে সাজ একটু ভারী। চুল ফুলিয়ে বেঁধে, গাঢ় লাল লিপস্টিক দিয়ে, চোখের ভারী মেকআপ করে করা হয় ট্র্যাডিশনাল মেকআপ। ট্রেন্ডি লুক বলতে সাজ একটু হালকা। মর্ডান স্টাইলের চুল বাঁধা, চোখে একটা স্মোকি ভাব, ঠোঁটে হালকা বা ম্যাচিং লিপস্টিক। আর ফিউশানে থাকে ট্র্যাডিশনাল মেকআপ আর ট্রেন্ডি মেকআপের মেলানো একটা সাজ।
প্রথমে বেস মেকআপের কথা বলেনি। মেকআপ শুরুর আগে মুখের সঙ্গে সঙ্গে গলা ঘাড় কান ও কানের পাশ আর পিঠে ত্বকের রঙ অনুযায়ী টোনার লাগাতে হবে। তার পর মুখে কোনো রকম দাগ থাকলে তা কভার স্টিক দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। এর পর ফাউন্ডেশন। সেটাও হবে ত্বক বা স্কিনটোন অনুযায়ী। তবে মেকআপ বসাতে হালকা জল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। শীতের দিনে বিশেষ করে একটু গাঢ় মেকআপ করা উচিত। এর পর কপাল নাক গালের দু’ পাশ থুতনিতে এক শেড বেশি গাঢ় ফাউন্ডেশন দিয়ে নিতে হয়। তাতে মুখ চোখ নাক গালের শার্পনেস বাড়ে। তার ওপর দিতে হবে কমপ্যাক্ট।
এই ভাবে বেস মেকআপ শেষ করে নিয়ে শুরু করতে হবে চোখ ঠোঁটের মেকআপ। গালে দিতে হবে ব্রাউন ব্লাশন। ভ্রূ দু’টিকে সুন্দর করে এঁকে নিতে হবে হালকা টানে। তার পর গ্রে কালারের ব্যাক শ্যাডো লাগাতে হবে চোখের ভাঁজে আর চোখের কোণের দিকে। ভেতরের কোণে সিলভার আইশ্যাডো দেওয়া যায়। এর পর ভ্রূ-র নিচের অংশটা হাইলাইট করতে হবে গোল্ডেন বা সিলভার বা অন্য রঙের হাইলাইটার দিয়ে। তার পর চোখের পাতার ওপরে লালচে বা গোলাপি বা ব্রাউন বা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রঙ বাছা যেতে পারে। আজ কাল গোটাটাই একই রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার না করে দুই বা তিন ভাগে ভাগ করেও আলাদা রং ব্যবহার করে চোখের পাতাকে সাজিয়ে তুলছেন। সবটাই নির্ভর করে রুচি আর মানসই কোনটা তার ওপর। এর পর চোখ আঁকার পালা।
চোখ আঁকার আগে বলে দিই, মেক আপ করে কিন্তু ছোটো চোখকে বড়ো আর বড়ো চোখকে ছোটো বানানো যায়। তাই যাঁদের চোখ ছোটো তাঁদের মোটা করে, আর যাঁদের চোখ বড়ো তাঁদের একটু সরু করে আইলাইনার দিতে হবে চোখের ওপর দিয়ে। কোণের দিকটা কখনও বাড়িয়ে বেশ কিছুটা টেনে আঁকা যায়, তাতে চোখ টানা টানা মনে হয়। আবার চোখের পাশেই দাগ শেষ করা যায়। কখনও চোখের নিচের আর ওপরের লাইনারের দাগ জুড়ে বা না জুড়েও চোখ আঁকা যেতে পারে। না জুড়ে ফাঁকা রাখলে মাঝে সাদা দাগ দিয়ে ফাঁকা অংশ ভরাট করা যায়। আর চোখের ভেতরের দিকের কোণের দাগ সব সময় জুড়ে দিতে হবে। চোখের নিচেও মোটা বা হালকা কাজল দিতে হবে। আই লাইনার দিয়েও নিচের অংশ ভরাট করা যায়। তবে চোখ বসা হলে একটু বেশি করেই কাজল দিলে ভালো। বাকিদের ক্ষেত্রে অল্প কাজল দিলে চোখে একটা স্মোকি ভাব আসে।
এ বার মাস্কারা দেওয়ার পালা। পাতা ঘন দেখাতে প্রথমে সাদা মাস্কারা দিয়ে তা শুকিয়ে গেলে কালো মাস্কার দেওয়া উচিত।
এর পর ঠোঁটের মেকআপ। প্রথমেই ঠোঁটেও বেস মেকআপ করে নেওয়া ভালো। তার ওপর লিপলাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে তার পড়ে লিপস্টিক ব্যবহার করা উচিত। ঠোঁট মোটা হলে একটু ভেতরের দিক করে আর সরু ঠোঁট হলে একটু বাড়িয়ে মোটা করে আঁকতে হবে। এই পদ্ধতিতে ঠোঁটে কোন খুঁত থাকলে তা সহজেই ঢেকে ফেলা যায়। আর সুন্দর ভাবে সাজানোও যায়। লিপস্টিকের রং বাছাই করতে হবে গোটা সাজ আর পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়েই।
সবশেষে আসছে চন্দনের পালা। আগেকার দিনে গোটা কপাল, গাল ভরে চন্দন পরানোর রেওয়াজ ছিল। এখনকার দিনেও আছে। তবে অনেকেই টিপের পাশে আর গালে চন্দন পরতে পছন্দ করেন। অনেকেই দু’টি ভ্রূর ওপর পর্যন্তও চন্দন পরে থাকেন। আর থুতনি তে ছোট্টো করে একটা নকশা করা যায় চন্দন দিয়ে। আজ কাল চন্দন ছাড়াও নানা রঙের কুমকুম, গোল্ড, সিলভার কালারের গ্লিটার বা মুক্তো, পুঁথি, স্টোনের সাজও বেরিয়েছে। তাও লাগানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং রঙের কেনাই ভালো