মৌ বসু
নিয়ম মেনে প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজন বা রাতের খাবার খেতে আর অভ্যস্ত নয়। অধিকাংশ ভারতীয়। বিশেষ করে জেন এক্স আর মিলেনিয়াল ভারতীয় যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের নীচে, তাঁরা দিনে-রাতে কাজেকর্মে এতই ব্যস্ত থাকছে যে সময়ের কদর করছেন না। তাঁদের পকেটে অর্থ থাকলে তাঁরা যে কোনো সময় হাবিজাবি খাবার খেয়ে পেট ভরাতে ব্যস্ত থাকছেন।
চারপাশে গজিয়ে ওঠা রেস্তোরাঁ, ক্লাউড কিচেন, টেক অ্যাওয়ে ফুড কাউন্টার ও অনলাইন ফুড প্ল্যাটফর্মের দৌলতে ভারতের নবীন প্রজন্মের খাওয়ার অভ্যাসে বিশাল বদল এসেছে। বিশেষ করে শহর ও শহরতলির বাসিন্দা উপার্জনশীল নবীন প্রজন্মের মধ্যে এই অভ্যাস দেখা যাচ্ছে। অনলাইন ফুড প্ল্যাটফর্ম সুইগির করা সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেন অ্যান্ড কোং (Bain & Co) নামক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে সমীক্ষা চালিয়েছে সুইগি।
গবেষকদের মতে, উপার্জনশীল নবীন প্রজন্ম এখন প্রত্যেকেই কর্মব্যস্ত। প্রায় সারা দিন-রাত ধরে কাজকর্মের পর তাঁদের সময় কাটছে অনেক রাত পর্যন্ত, ওটিটি বা টিভি বা কোনো শো দেখে। এর সঙ্গে চলছে রাত পর্যন্ত পার্টি করা বা গেম খেলা। ‘হাউ ইন্ডিয়া ইট্স’ (How India Eats) নামক সুইগির করা সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, অনলাইন ফুড প্ল্যাটফর্মগুলি এখন ভার্চুয়াল কিচেন বা রান্নাঘর হয়ে উঠেছে। তাই অসময় হাবিজাবি মুখরোচক খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
সুইগির মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক রোহিত কাপুর নিজেই জানিয়েছেন, এখন নির্ধারিত সময়ে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ বা ডিনার করার চিন্তাভাবনায় বদল এসেছে। মানুষ অনেক রাতেও অনলাইন ফুড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে খাবার অর্ডার দিচ্ছেন। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে রাতে সুইগিতে বিরিয়ানি, পিৎজা ও বার্গারের অর্ডার দেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ২৩%।
চিকিৎসকরা নয়া খাবারের প্রবণতা দেখে শঙ্কিত। তাঁদের মতে, কেউ যদি রাত ২টোয় বসে গপগপ করে হাবিজাবি খাবার খায় তা হলে তাঁর ঘুমের সাইকেল বা চক্র, দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সিরকাডিয়ান রিদম, হজমশক্তি, বিপাকক্রিয়া ও শক্তি সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়।
কেমব্রিজ ও ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আলট্রা প্রসেসড অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে নবীন প্রজন্মের মধ্যে হার্টের অসুখ, ক্যানসারের মতো ক্রনিক রোগের আশঙ্কা বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ নাবালক ক্যালোরির জন্য প্রসেস করা খাবারের ওপর নির্ভরশীল। এটা ব্রিটেনের পাশাপাশি অন্য দেশের নবীন প্রজন্মের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ সব খাবার হয়তো খুব সহজে তৈরি করা যায় সস্তাও বটে কিন্তু পুষ্টিকর নয়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট আর শর্করার মাত্রা অনেক বেশি। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, ফাইবার থাকে না। ক্যালোরি বেশি পরিমাণে থাকে বলে ওজন বাড়ে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ নিউট্রিশন-এ (European Journal of Nutrition) প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা ৩ বছর ধরে একটানা গবেষণায় প্রসেসড খাবার খাওয়াকে অকাল মৃত্যুর কারণ বলে দায়ী করা হয়েছে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয় সেই গবেষণাপত্র।
আরও পড়ুন
অনলাইনে খাবার অর্ডারের চার্জ বাড়াল সুইগি, জোমাটো, কত বাড়তি দিতে হবে?