খবরঅনলাইন ডেস্ক: বাচ্চারা কোনো না কোনো সময়ে মিথ্যে কথা বলেই থাকে। তার সবই যে খুব সচেতন ভাবে বলে তা নয়। কিন্তু সেই মিথ্যা বলা কোনো বাধা না পেলে, পরে বাড়তে থাকে মিথ্যার পরিমাণ। আর তখনই বিষয়টা সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে যারা নিজেদের অবহেলিত বলে মনে করে, তারা মিথ্যের মাধ্যমে অন্যদের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আত্মবিশ্বাসের অভাব ও অনিশ্চয়তার কারণেও অনেক সময় শিশুরা মিথ্যে বলে। মিথ্যা বলার প্রবণতা থেকে বাচ্চাকে থামানো উচিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কারণে-অকারণে মিথ্যা বলাটা অভ্যেসে পরিণত হবে এবং সেটা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বাচ্চাদের মধ্যে চুরি করা বা মিথ্যে বলার প্রবণতা ‘আচরণগত সমস্যা’। এর সঙ্গে বাচ্চার নীতিশিক্ষার থেকেও বেশি জড়িয়ে বাচ্চা কতটা ম্যাচিয়োর্ড, সেই প্রশ্ন। বাচ্চাদের মধ্যে মিথ্যে বলার প্রবণতা অনেক সময় আসে কল্পনার জগৎ থেকে। সন্তানদের কঠোর শাসনে রাখলে চলবে না। বকেঝকে, শাসন করে এ সব শেখাতে যাবেন না। তা হলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। কড়া শাসন না করে সন্তানকে বরং বলুন, ‘তুমি মিথ্যে কথা বললে আমি কষ্ট পাই’। বাবা-মায়ের মুখে এই কথা বাচ্চার মনে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
কী ভাবে শোধরাবেন আপনার সন্তানকে
শিশু সন্তান মিথ্যে কথা বললে, কী ভাবে তাদের শোধরাবেন তার নানা উপায় বাতলে দিয়েছে বিশেষজ্ঞ তথা মনোবিজ্ঞানীরা।
সন্তানের সামনে নিজের আচরণ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন
বাচ্চা কিন্তু মিথ্যে বলতে শেখে বড়োদের দেখেও। আপনি হয়তো ওর সামনে কাউকে মিথ্যে বলে বসলেন! তা হলে বাচ্চাকে কী করে সত্যবাদিতা শেখাবেন? কারণ আপনি ভাবছেন, আপনি ‘হোয়াইট লাই’ বলছেন। আপনার সন্তান কিন্তু সাদা মিথ্যে আর কালো মিথ্যে বলে কিছু বোঝে না। তাই সন্তানের সামনে নিজের আচরণ নিয়ে সতর্ক হোন। পাশাপাশি, সন্তানকে ‘সরি’ বলতেও শেখান।
খুব পছন্দের কোনো জিনিস কিছুক্ষণ দূরে রাখুন
মিথ্যা বললেই শিশুকে শাস্তি দেবেন না। তাকে সাবধান করুন, সংশোধন করে দিন। সেই সঙ্গে এটাও বুঝিয়ে দিন, আপনার কথা না শুনলে কী কী শাস্তি সে পেতে পারে। সাবধান করার পরেও শিশু আবার মিথ্যে বললে, তাকে শাস্তি দিন। সেটা শারীরিক শাস্তি কিংবা অতিরিক্ত বকাঝকা করে নয়। বরং সে ক্ষেত্রে তার খুব পছন্দের কোনো জিনিস নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
মিথ্যা যে বলে সে খারাপ, এ রকম ধারণা তৈরি করান
মিথ্যা যে বলে সে খারাপ, আর সত্যি যে বলে সে ভালো। যে ভালো, তাকেই রোল মডেল করা উচিত। এ রকম একটা ধারণা ছোটোবেলা থেকেই তার মনে সৃষ্টি করে দিন। মিথ্যা যে বলে, তাকে কেউ পছন্দ করে না, তার সঙ্গে কেউ খেলে না, তাকে কেউ ভালোবাসে না এমন একটা ধারণা বাচ্চার মনে গেঁথে দিন। এমন কোনো একজন কাল্পনিক চরিত্রের কথাও তাকে বলতে পারেন, মিথ্যে বলে যার জীবন খুব কষ্টে কাটে।
বাচ্চাকে বোঝার চেষ্টা করুন
বাচ্চা কেন মিথ্যে বলছে সেটা আপনাকে বুঝতে হবে এবং প্রথমেই সেই জায়গাটা তাকে দিতে হবে, যাতে সে সত্যি বলতে ভয় না পায়। তাকে বুঝিয়ে দিন, ঘটনাটা যত খারাপই হোক না কেন সত্যি বলতে সে যেন কখনো ভয় না পায়। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে ভালো পথ, সে যদি প্রথমে মিথ্যে বলে, তার পর সত্যিটা স্বীকার করে।
সত্যি বলার জন্য পুরস্কৃত করুন
যদি অপরাধ করে এসে বাচ্চা আপনার কাছে দোষ স্বীকার করে, তা হলে তার ভুল শুধরে দেওয়ার পাশাপাশি সত্যি কথা বলার জন্য পুরস্কৃতও করুন। তা সে যতই সামান্য উপহার হোক না কেন, বাচ্চা কিন্তু সেটা মনে রাখবে। সামান্য উপহারের সুপ্রভাব পাবেন আপনিও।
প্রয়োজনে মনোবিদের পরামর্শ
যদি দেখেন কোনো ভাবেই বাচ্চার মিথ্যে বলার অভ্যাস বন্ধ করা যাচ্ছে না, তা হলে মনোবিদের পরামর্শ নিন। কারণ তিনি বলতে পারবেন, কোন থেরাপির মাধ্যমে কী ভাবে তার মিথ্যা বলার অভ্যাস বন্ধ করা যায়।
আরও পড়ুন: নিজেদের অবহেলিত মনে করলেই শিশুরা মিথ্যে বলে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।