মৈত্রী মজুমদার
বাড়ি। শব্দটি উচ্চারণের সাথে সাথেই যে ছবিটি মাথায় আসে তা হল আরামদায়ক একটি পরিবেশ। আর আরামের কথা মাথায় এলেই মাথায় আসে নিজের বিছানায় শুয়ে আরামের ঘুম। তাই বাড়ি আর শোওয়ার ঘর বা বেডরুম মোটামুটি সমার্থক। তাই আজকের আলোচনা শুরু করা যাক বেডরুমকে সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় দিকগুলো নিয়ে।
একটি বেডরুম সাজানোর কথা মাথায় এলেই আমরা ভাবি, কোন খাট ? কী রকম আলমারি বা ড্রেসিং টেবিল ইত্যাদির কথা। এগুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবু এ সবের পরিবর্তন না করেও ছোটোখাটো কিছু যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে যে কোনও স্থানকে অন্য মাত্রা দেওয়া যেতে পারে। তাই প্রথমে অনায়াস প্রয়াসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক।
যে কোনও স্থানকে সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সব চেয়ে প্রথমে মাথায় রাখা উচিত ব্যক্তিবিশেষের রুচি ও পছন্দের কথা। এ সব কথা মাথায় রেখে স্থানটিকে একটি নিজস্ব পরিচয় দেওয়া, ইংরাজিতে যাকে বলে পার্সোনালাইজেসন, তা করা সম্ভব।
শোওয়ার ঘর সাজাতে গেলে খাটের কথা মাথায় আসা স্বাভাবিক। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, ভালো ঘুমের জন্য খাটের থেকেও বিছানার মাহাত্ম্য অনেক বেশি। তাই দামি খাট না কিনে একটি আরামদায়ক ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন। একটু দামি হলেও এটি আপনাকে ভালো ঘুমে সহায়তা করবে। আর রাতের ভালো ঘুম আপনাকে সারা দিন তরতাজা থাকতে সাহায্য করবে।
আপনার রোজকার ঘুমের অভিজ্ঞতাকে পরিপূর্ণতা দিতে শোওয়ার ঘরে কার্পেট বা শতরঞ্চি ব্যবহার করুন। রাতের সুন্দর আয়েশি ঘুমের পর সকালবেলা উঠে ঠান্ডা, শক্ত পাথুরে মেঝেতে পা রাখলে চট করে মেজাজটা খারাপ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মেঝেতে পাতা নরম কার্পেট বা শতরঞ্চিটি আপনাকে আরও একটু বেশি সময় উষ্ণতায় ভরে রাখবে। পুরো ঘরে না রাখলেও খাটের পাশে বড়োসড় ফ্লোরম্যাট রাখা জরুরি।
বিছানা সাজানোর সময় খেয়াল রাখবেন যাতে তার ওপর যথার্থ পরিমাণ বালিশ বা কুশন থাকে। এতে আপনার শয্যাটি উষ্ণ অভ্যর্থনাময় হয়ে উঠবে। কিন্তু অত্যাধিক পরিমাণ বালিশ বিছানা খাটের ওপর থাকলে তা আবার ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে। তাই খাটের মাপ অনুযায়ী ১-৬টি বালিশ এবং কুশন দিয়ে সাজান। এতে সৌন্দর্যবৃদ্ধিও হবে আবার ঘুমোতে যাওয়ার আগে একগাদা জিনিস খাটের ওপর থেকে সরাতেও হবে না।
আপনার শোওয়ার ঘরটি সব সময় যে শোওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয় তা তো নয়, পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ আলোচনায়, নিকট বন্ধুবান্ধবের সাথে গল্পগুজব করা বা নিতান্তই পছন্দের বই পড়া বা গান শোনার জন্যও এই ঘরটি ব্যবহৃত হয়। তাই বেডরুমে খাট ছাড়াও একটি স্বতন্ত্র বসার জায়গা থাকা জরুরি। সেটি হতে পারে একটি ডবল সিটার সোফা বা দু’টি সিঙ্গল সিটার সোফা। জায়গা বেশি থাকলে পুরো সোফা সেটও রাখতে পারেন।
যদি নিতান্তই কম জায়গা থাকে, তা হলেও অন্তত একটি স্টাডি কর্নার রাখার চেষ্টা করুন। এর জন্য একটি ছোট টেবিল আর চেয়ারই যথেষ্ট।
বেডরুমের প্রধান উপযোগিতা যে হেতু রাতের ঘুমের সময়, তাই রাত্রিবেলা সাধারণত যে যে জিনিস কাজে লাগে, যেমন পানীয় জল, রিডিং ল্যাম্প ইত্যাদি, এবং কোনও সময় রাতে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে তার মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন ওষুধপত্র ইত্যাদি বেডরুমে থাকা দরকার। আবার সময়মতো সেগুলো কাজে লাগানোর জন্য এগুলি বিছানার কাছাকাছিও থাকা দরকার। তাই বিছানার দু’ধারে বেডসাইড টেবিল থাকা জরুরি। তার চেয়েও জরুরি এই টেবিল দু’টি দেখতে মানানসই হওয়ার সাথে সাথে সব জিনিস স্টক থাকার উপযোগী করে বানিয়ে নেওয়া।
এ বার আসা যাক অল্পস্বল্প সাজগোজের কথায়।
আপনার বেডরুম আপনার একান্তই নিজস্ব জায়গা। তাই একে নিজের মতো করে সাজান। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হতে পারে একটি থিম ভেবে তার ওপর এই ঘরটি সাজিয়ে তোলা। সব সময় যে দামি কিছু ব্যবহার করতে হবে তা নয়, যে কোনও প্যাটার্ন যেমন স্ট্রাইপ বা সার্কেল অথবা যে কোনও রঙ বা রঙের গ্রুপকে ব্যবহার করতে পারেন।
থিম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার, জানলা দরজার পর্দা, মেঝের কার্পেট, শতরঞ্চি ইত্যাদিকে কাজে লাগাতে হবে।
বেডরুমের দেওয়ালে ফটোগ্রাফ বা পেন্টিং লাগান। এটি ঘরটির থিম গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, একই সাথে ঘরটিকে জীবন্ত করে তুলবে। কিন্তু মনে রাখা জরুরি, এই ছবিগুলি পরিবারের সদস্যদের যেন না হয়। পারিবারিক মুহূর্তের ছবি বাড়ির অন্যত্র লাগান কিন্তু বেডরুমে নয়। বেডরুমে থাকলে তা কোনও কোনও সময় স্মৃতির বোঝা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা একটি পরিপূর্ণ ঘুমের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারে। তাই বেডরুমের দেওয়ালে সেই সব ছবিই লাগান যা মনকে ভালো করে দেয়।
বেডরুমে আপনি আপনার পছন্দের জিনিসগুলি সাজিয়ে রাখতে পারেন। বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে আপনি যে সব স্মারক সংগ্রহ করে এনেছেন সেগুলি হয়তো সব সময় সাজিয়ে রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। বিশেষত অন্যান্য ঘরের সজ্জার সাথে সেগুলি অনেক সময় মেলেও না। সে ক্ষেত্রে আপনার বেডরুমেই সেগুলি সাজিয়ে রাখুন। আপনার পছন্দের জিনিস আপনার চোখের সামনে থাকল। সকালবেলা উঠে চোখের সামনে নিজের পছন্দের জিনিস থাকলে নিশ্চয় আপনার মন ভালো হয়ে উঠবে।
যে কোনও ঘরের অন্দরসজ্জার মতোই বেডরুমের অন্দরসজ্জাও অন্য মাত্রা পেতে পারে অল্প পরিমাণে নাটকীয়তার ছোঁয়া পেলে। এটি কোনও দুরূহ ব্যাপার নয়। ঘরের একটি দেওয়ালে গাঢ় রঙ বা অন্য ধরনের প্যাটার্ন অথবা টেক্সচার যোগ করে এটি করা যেতে পারে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন আলোর উৎস রেখেও এটি করা যেতে পারে। আলো আর রঙের মেলবন্ধনে ঘরের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া আলোআঁধারি আপনার ঘরকে এক অন্য মাত্রা দিতে পারে।
যদি সম্ভব হয় বেডরুমে টিভি না রাখাই ভালো। তার থেকে মিউজিক সিস্টেমে গান শুনতে পারেন, সঙ্গীত মনকে শান্ত করে, ঘুমোতে সাহায্য করে। কিন্তু ঘুমোনোর আগে টিভি দেখতে থাকলে তা ঘুমের ক্ষতি করতে পারে। যদিও কমিউনিকেশন আজকের দিনের অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয় তবুও, শুধু টিভিই নয়, যে কোনও ধরনের গ্যাজেট, যেমন কম্পিউটার/ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি বিছানার কাছ থেকে যথা সম্ভব দূরে রাখা উচিত।
যতই ব্যস্ত হোক আপনার জীবনযাত্রা, বাড়ি ফিরে নিজের বেডরুমে, নিজের পছন্দের কাজ করে ‘আন-ওয়াইন্ড’ করুন। নিজের মনের মতো করে সাজানো বেডরুমের প্রতিটি কোনা নিজের মতো করে উপভোগ করুন। এতে আপনার মন শান্ত হবে, আর পরবর্তী কাজে মনসংযোগও ভালো হবে। প্রতি দিনের এই রিল্যাক্সেশন আপনার জীবনকে স্ট্রেস মুক্ত করতে সাহায্য করবে