খবরঅনলাইন ডেস্ক: ইট-কাঠ-পাথর, চার দেওয়াল আর মাথার ওপর ছাদ থাকলেই তাকে ‘ঘর’ বলা চলে না। ঘর হল সেটাই যেখানে আপনজনদের স্নেহের পরশ থাকে, কাছের মানুষদের ওঠা-পড়ার স্মৃতি ছবির মতো ছড়িয়ে থাকে। এই ঘরকে সবাই চায় মনের মতো করে সাজিয়ে তুলতে।
আমরা নানা ধরনের জিনিস দিয়ে ঘর সাজাই। ভবঘুরে মনটা যখন ঘরের মধ্যে বাঁধা পড়ে, তখন যেন মনে হয় গোটা জগতটাই এক নিমেষে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আজ আমরা বোহেমিয়ান স্টাইলে ঘর সাজাব কী ভাবে, সেই বিষয়ে আলোচনা করব।
বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমাঞ্চলের একটা জায়গা বোহেমিয়া। তবে যে অর্থে আমরা ‘বোহেমিয়ান’ শব্দটি ব্যবহার করি, তার সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষদের জীবনযাত্রার কোনো সম্পর্ক নেই। ‘বোহেমিয়ান’ তাঁরাই, যাঁরা নিজের নিয়মে জীবন যাপন করেন, গতানুগতিক নিয়মের বেড়াজালে নিজেকে বেঁধে রাখেন না। কিন্তু এই মুক্ত জীবনকে কী ভাবে নিজেদের ঘরের মধ্যে তুলে ধরবেন।
যখনই আপনি অন্দরে বোহেমিয়ান লুক আনার চেষ্টা করবেন, তখনই ঘরের ভেতরটা পরিণত হবে স্বাধীনচেতা আত্মার এক আশ্রয়স্থলে। বোহো স্টাইলে ঘর সাজাতে চাইলে ঘরের প্রতিটি কোনাকে একেবারে মিলিয়ে রঙ করলে চলবে না। ঘরের দেওয়ালে রাখতে হবে বিভিন্ন ধরনের রঙ। যে রঙগুলো ভীষণ গাঢ়, উজ্জ্বল হবে, যাতে কেউ ঘরে ঢুকলে তাঁর চোখ সবার আগে আটকে যায় সেখানে। সাদামাটা শোয়ার ঘরে প্রাণের ছোঁয়া আনতে বর্ণিল রঙ, উজ্জ্বল বাতি-সহ আরও কিছু যোগ করতে পারেন।
কী কী পরিবর্তন করবেন
খাট
বোহেমিয়ান শৈলীতে শোয়ার ঘর সাজাতে প্রথমেই বদলে ফেলতে হবে আপনার খাটটি। খাটের সাধারণ কাঠের হেডবোর্ডের পরিবর্তে বরং অ্যান্টিক হেডবোর্ড বেশি জুতসই। সব চেয়ে ভালো হয় খাট যদি হয় পায়াবিহীন। একটু উঁচু ম্যাট্রেস দিয়ে মেঝেতে বিছানা পাতা হলে আরও ভালো। সে ক্ষেত্রে হেডবোর্ডের পরিবর্তে খাটের মাথার দিকটায় একদম উপরের দেওয়াল থেকে খাটের প্রস্থ বরাবর বর্ণিল এমব্রয়ডারি কাপড় নামিয়ে দেওয়া যায়। তা ছাড়া মাথার দিকের দেওয়ালে ট্যাপেস্ট্রি সেট করে দেওয়া যেতে পারে।

বালিশ বা কুশান
বোহেমিয়ান সজ্জায় বালিশের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকে না। ঘর সাজানোর কোনো নিয়মেরই তোয়াক্কা করা হয় না বলেই তো এটা বোহেমিয়ান শৈলী। তবে খেয়াল রাখবেন যতগুলিই বালিশ থাকুক বালিশের কভারে যেন রঙবেরঙের ছাপ থাকে। বিছানার সামনে লম্বা করে বিছিয়ে দিন রঙবেরঙের উল দিয়ে বোনা সতরঞ্জি। বসার জন্য বুকশেলফের এক পাশে চওড়া শতরঞ্জি বিছিয়ে উপরে কয়েকটি কুশন ফেলে রাখা যায়। এ ভাবেই এই জায়গাটা হতে পারে বেশ আরামদায়ক ও মজাদার, ঘুমোনোর একটা দুর্দান্ত জায়গা।

এলোমেলো বেডরুম
বেডরুমে তথাকথিত আসবাব না ঢোকানোই ভালো। বাড়িতে কাঠের বাক্স থাকলে তার ভেতরই বইপত্র সাজিয়ে রাখা যাবে।বাঁশ দিয়ে বুকশেলফ বানিয়ে ফেলতে পারেন।আশপাশের দেওয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া যায় ছোটো-বড়ো ছবির ফ্রেম।
রঙের খেলা
বোহেমিয়ান ঘরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বাহারি রঙের খেলা। ঘর হতে হবে খুবই আরামদায়ক। বোহেমিয়ান শোয়ার ঘরের রঙ সাদা বা ঘিয়ে হওয়াই সব চেয়ে ভালো, যেখানে রঙের খেলা খেলবে রঙিন কাপড়, পর্দা, বিছানার চাদর, কার্পেট, কুইল্ট, বাতি আর গাছ। তবে দেওয়ালে গাঢ় রঙের ব্যবহার যে একেবারে হয় না তা নয়। ঘরের একটা পাশ গাঢ় রঙ করা যেতেই পারে।

বই ও কারুকার্য
এমন কিছু জিনিস কিনতে হবে ঘর সাজানোর জন্য, যেটা একটা গল্প বলবে। যেমন কিনতে পারেন কোনও পুরোনো টেলিফোন, বা উজ্জ্বল রঙের টেবিল যেটাকে সহজে ঘরের কোণে রাখতে পারেন। বোহেমিয়ান ঘরে আপনার বইগুলোও শিল্প হয়ে উঠতে পারে। শোয়ার ঘরকে রঙিন ও প্রাচুর্যপূর্ণ করে তুলবে আপনার সংগ্রহের বইগুলো। এ জন্য আপনি বিছানার হেডবোর্ডের দু’ পাশে লম্বা দু’টি বুকশেলফ্ রেখে সেখানে সাজিয়ে তুলতে পারেন রঙবেরঙের বইয়ের বাহার। মাঝখানে রাখতে পারেন বিভিন্ন শৈলী ও নকশার আর্টওয়ার্ক। এ ক্ষেত্রে আপনি হাতে আঁকা শিল্পকর্মও বাছাই করতে পারেন। বোহেমিয়ান শয়নকক্ষ সাজাতে আপনি বাজারে প্রচুর আকর্ষণীয় চিত্রকলা পাবেন।
এ ছাড়াও মজাদার কাচের জিনিসপত্র শুধুমাত্র রান্নাঘরের ক্যাবিনেটগুলোয় বোঝাই করবেন না। আপনার মজাদার পানীয়ের জিনিসপত্র ছড়িয়ে দিন এবং এগুলি আপনার শোবার ঘরে রেখে দিন। সত্তরের দশকের চশমা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করুন।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।