মৈত্রী মজুমদার
বরষায় পথঘাট জল থৈ থৈ রে/ভিজে কাক দেয় ডাক, জানালায় ওই রে…
মনে পড়ছে ছড়াটা ? মনে তো পড়ারই কথা। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি কি আর শৈশবের মতো আছে ? বৃষ্টি দেখলে আজকাল মনে হয়, এ বাবা অফিস-ফেরতা ভিজে যাব না তো ? অথবা মনে হয়, আহা! বাচ্চাটা স্কুল-ফেরতা রাস্তার জমা জলে কাপড়চোপড় নোংরা করল না তো? এই চার দিকের নালা ডোবার জলে অসুখবিসুখ হবে না তো ?
হুম! জীবনটা এ রকমই, কোনও কিছুই চির দিন একই ভাবে ভালো লাগে না। তাই এই বর্ষায় ভাবলাম বৃষ্টির রোম্যান্টিকতা বাদ দিয়ে, একটু স্বাস্থ্য সচেতনতায় মন দিই।
দিনের পর দিন অবিরাম বর্ষণে যখন চার দিক প্যাচপ্যাচে, কাপড়জামা শুকাচ্ছে না, চার পাশে ভ্যাপসা ভ্যাপসা গন্ধ ছাড়ছে, তখন আপনার বাড়ির যে জায়গাটা সব চেয়ে ভালো করে রাখা উচিত তা হল আপনার ওয়াশরুম বা বাথরুম।
কী ভাবছেন ? অল্প নিরুৎসাহ হলেন নাকি? আপনিই ভেবে দেখুন, সারা দিন অফিস, ইস্কুল করে, ঘেমে নেয়ে তার ওপর আবার ভিজতে ভিজতে নোংরা জল পেরিয়ে বাড়ি ফেরার পর যদি একটি সুন্দর সাজানোগোছানো পরিষ্কার বাথরুম আপনার জন্য অপেক্ষা করে তা হলে মনের সব কোনাগুলোতে বাতি জ্বলে ওঠে কি না?
তা হলে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আখ্যান, বাথরুম সুন্দর রাখার উপায়গুলো নিয়ে …
“যে কোনও বসতবাড়ি কতটা বসবাসযোগ্য তা নির্ধারণের মাপকাঠি হল, তিনটি ‘প’, (পানি, পাকঘর আর পায়খানা) ঠিকঠাক আছে কিনা যাচাই করে নেওয়া”– বাড়ির বয়স্করা বলেন। ঠিক কথাই তো, এগুলোর থেকে জরুরি বিষয় একটি বাড়ির ক্ষেত্রে আর কী-ই বা হতে পারে ?
আজ আলোচনা করব তিন নম্বরটি মানে বাথরুম নিয়ে, আর পানি বা জলের ব্যবহার যে হেতু দু’টি ক্ষেত্রেই সমান গুরুত্বপূর্ণ, তাই আজকের আলোচনা আমরা শুরু করব জল দিয়েই।
বাথরুমের সব চাইতে জরুরি উপাদান যখন জল তখন বাথরুমের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রধান কারণটিও কিন্তু সেই জল । তাই একটি পরিষ্কার এবং সুন্দর বাথরুম পেতে গেলে সবার প্রথমে এখানকার পাইপলাইনগুলো ত্রুটিমুক্ত করে নিতে হবে। তার সাথে জলনিকাশি ব্যবস্থাও পাক্কা করতে হবে যাতে ব্যবহারের পর বাথরুমে জল জমে না থাকে। বাথরুম যত শুকনো থাকবে, তাকে সুন্দর করে রাখাও ততই সুবিধাজনক হবে।
বাথরুম শুকনো রাখার জন্য প্রধান পদক্ষেপ হল উপযোগিতার কথা মাথায় রেখে পুরো জায়গাটা ড্রাই (শুকনো) আর ওয়েট (ভিজে) অংশে ভাগ করে নেওয়া। স্নানের জায়গাটি ওয়েট এরিয়া হিসেবে আলাদা করে নিন। আলাদা করার জন্য, গ্লাস পার্টিশান ব্যাবহার করা সব থেকে ভালো।
অসুবিধে থাকলে ফ্লোরে অল্প উঁচু করে ডিভাইডার বানিয়ে ওপরে শাওয়ার কার্টেন লাগিয়ে নিতে পারেন। বাজারে অনেক ধরনের শাওয়ার কার্টেন পাওয়া যায়। বাজেট অনুযায়ী কিনে লাগিয়ে নিন।
আজকাল বাজারে রেডিমেড শাওয়ার কিউবিক্যাল পাওয়া যায়। আপনার বাথরুমের সাইজ অনুযায়ী লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে কম জায়গার ভিতরে অত্যাধুনিক শাওয়ার ফিটিংসের সাহায্যে অন্য রকম স্নানের অভিজ্ঞতা পেতে পারবেন। সাথে সাথে জায়গাও বাঁচাবে অন্য কাজে লাগানোর জন্য।
এই ধরুন যেমন আপনার ওয়াশিং মেশিনটি রাখতে পারবেন বাথরুমের ভিতরেই। অথবা বাড়তি জায়গা কাজে লাগাতে পারবেন স্টোরেজ হিসেবে।
আপনার বাথরুমের ভিতরে জায়গা যতই কম থাক, আধুনিক বাজার-চলতি ওয়াশ বেসিন, ওয়াটার ক্লসেট, ইত্যাদি ঠিকঠাক বেছে নিতে পারলে ছোট জায়গার ভিতরেও আপনি একটি সুন্দর সাজানোগোছানো বাথরুম পেতে পারেন।
বাথরুম বড়ো বা ছোটো যে রকমই হোক এখানে বড় জানলা থাকা জরুরি। এতে সূর্যের আলো, হাওয়া, উষ্ণতা আপনার বাথরুমের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখবে। একই সাথে বাথরুম শুকনোও রাখবে।
বাথরুম পরিষ্কার রাখার জন্য এর মেঝে সঠিক হওয়া জরুরি। সব চেয়ে ভালো হয় ড্রাই এরিয়ায় উডেন ফ্লরিং আর ওয়েট এরিয়ায় অ্যান্টি স্কিড সেরামিক টাইলস লাগানো। উডেন ফ্লোরিং লাগাতে না চাইলে পুরোটায় অ্যান্টি স্কিড টাইলস লাগান। কোনও ধরনের পালিশ করা পাথর বাথরুমের মেঝেতে না লাগানোই ভালো।
পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে বাথরুমের ওয়াল-এরও একটি জরুরি ভুমিকা আছে। তাই ওয়েট এরিয়াতে ওয়ালে, অবশ্যই দরজার হাইট পর্যন্ত সেরামিক টাইলস লাগান। অন্যত্র কম উচ্চতা চলতে পারে। আজকাল অনেক ধরনের থিমেটিক টাইলস বাজারে পাওয়া যায় যা আপনার বাথরুমকে আপাদমস্তক পালটে দিতে পারে।
সব কিছুর পর কিন্তু সব চেয়ে জরুরি কথাটি হল, বাথরুমের মেঝের ঢাল। মেঝের ঢাল যদি ঠিক না থাকে তা হলে কিন্তু জল জমে সব ধরনের সাজানোর চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই এই বিষয়টি মাথায় রেখে বাথরুমের কাজে হাত দেবেন।……
ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।