মৈত্রী মজুমদার
কেমন আছেন সবাই ? আশা করি সবাই তৈরি নিজেদের বাড়ি সাজিয়ে তোলার জন্য।
আগের বার আমরা আলোচনা করেছিলাম চটজলদি রান্নাঘর সাজানোর উপায় নিয়ে। কিন্তু অনেক বন্ধুই আছেন যাঁরা হয়তো এই মরশুমে নতুন বাড়ি বানানোর বা কেনার কথা ভাবছেন। তাই এ বারে আমরা আলোচনা করব কী ভাবে নিজের রান্নাঘরটি বানানো যায়, যাতে তা একই সঙ্গে সুন্দর এবং কার্যকর হয়ে ওঠে।
রান্নাঘর হল এমন একটি জায়গা যেখানে আমাদের, মানে মহিলাদের, বেশ অনেকটা সময় আর মনোযোগ দিতে হয়। তাই এটি এমন জায়গায় হওয়া উচিত যাতে তা সুন্দর ভাবে প্রাকৃতিক আলো-হাওয়া পায়। আর রান্নাঘরে যেন থাকে বড় একটি জানলা। আপনার বাড়ির দক্ষিণ-পূর্বের জায়গাটি আপনার রান্নাঘরের জন্য রাখুন। সকাল থেকে মোটামুটি সারা দিনই সূর্যের আলো আর মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আপনার রান্নাঘরটিকে সঠিক উষ্ণতায় ভরে দেবে।
রাতের বেলা কাজের সুবিধার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বৈদ্যুতিন আলো লাগাতে হবে কাজের জায়গাগুলোর ওপরে, আর লাগবে ভালো একজস্ট ফ্যান।
এ বারে আসি কাজের প্রসঙ্গে —
রান্নাঘরের প্রধান কাজগুলোকে আমরা প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করি…
১। স্টোরেজ (জিনিস রাখা) — এটি হল কাঁচামাল মানে রোজের কাঁচা শাকসবজি, মাছ-মাংস, মশলাপাতি ইত্যাদি রাখার জায়গা। আবার রান্না-খাওয়ার শেষে অবশিষ্ট খাবারদাবারও এখানে রাখতে হবে। প্রধানত আপনার ফ্রিজ এই কাজটি করে থাকে। এরই সঙ্গে মশলাপাতি ও অন্যান্য উপকরণ রাখার তাকগুলোকেও এই কাজে সমান ভাবে ব্যবহার করতে হবে।
শুধু তো কাঁচা মাল নয়, রান্নাঘরে জায়গা দিতে হবে বাসনপত্রকেও। তাই আপনার রান্নাঘরের স্টোরেজ স্পেস যতটা পারেন বেশি করে বানান। বাড়িতে জায়গা বেশি থাকলে রান্নাঘরের সঙ্গে এক ফালি ভাঁড়ার ঘর বা প্যানট্রি বানালে মন্দ হয় না।
২। প্রিপারেশন (প্রস্তুতি) — কাঁচামাল কেটে ধুয়ে বেছেবুছে রান্নার উপযোগী করে তোলার জন্য এই জায়গা। প্রধানত ওয়াশিং সিঙ্ক-এর আশেপাশের জায়গাটি এই কাজে ব্যবহার করা হয়। সঙ্গে জুড়ে দিন ওয়াটার পিউরিফায়ারটিকেও। আজকাল ডিশ-ওয়াশারও ভারতের বাজারে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আপনার যদি এই বস্তুটি থাকে তা হলে সেটিকেও এখানেই রাখার ব্যাবস্থা করুন। রান্নাঘরের জলের লাইনটির সদ্ব্যবহার করতে হবে না ? এ ছাড়াও আছে মিক্সার-গ্রাইন্ডার, ফুড-প্রসেসর, ছুরি-কাঁচি আরও কত কী। জায়গা রাখতে হবে এদের সবার জন্যই।
এই ক্ষেত্রে আর একটা অতি জরুরি ভুমিকা আছে আপনার রান্নাঘরের ওয়েস্ট বিনটির। সিঙ্ক-এর তলার জায়গাটা তাই এর জন্য সংরক্ষিত ।
৩। কুকিং (রান্না) — সব শেষে আসে রান্নার পালা। যা মূলত আপনার গ্যাস ওভেনটি করে। কিন্তু আজকাল এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইনডাকশন ওভেন ইত্যাদি। তাই আপনার রান্নাঘরের রান্নার জায়গাটিতে স্থান করে দিতে হবে এদেরকেও।
ওপরের কাজগুলোকে মাথায় রেখে প্রথমেই ভাগ করে নিন নিজের রান্নাঘরের জায়গা। জানলার সামনে রাখুন সিঙ্ক আর জলের জায়গা, যাতে কাজের শেষে চট করে জায়গাটা শুকনো হয়ে যায়। সিঙ্ক এর নীচে রাখুন ওয়েস্ট বিন আর ওপরে বা একটু পাশে লাগিয়ে নিন ওয়াটার পিউরিফায়ার।
গ্যাস ওভেনটি কখনওই জানলার সামনে বা বিপরীতে রাখবেন না। রাখবেন জানলার সঙ্গে সমকোণে। যদি আপনার কুক টপটি শুধুমাত্র এক লাইনে হয়, যাকে বলে সিঙ্গল স্ল্যাব, তা হলেও জানলার থেকে দূরে রাখুন ওভেনকে আর তার ওপরে চিমনি লাগাতে ভুলবেন না। ঠিক তার নীচে রাখুন গ্যাস সিলিন্ডারটি। কিন্তু ইলেক্ট্রিক্যাল আপ্লায়েন্সগুলো গ্যাস এবং সিঙ্ক দু’টি থেকেই দূরে রাখুন। কিছুটা বেশি জায়গা যদি রান্নাঘরে থাকে, তা হলে যোগ করতে পারেন আলাদা ওয়ার্ক স্টেশন।
ভাগাভাগি তো হল। এ বার আসা যাক এদের সঠিক পজিশনিং-এর প্রসঙ্গে। রান্নাঘরের এই যে তিনটি প্রধান বাহু এদের স্থান হওয়া উচিত ত্রিকোণ আকারে যাকে আমরা বাস্তুবিদ্যা বা আরকিটেচারের ভাষায় বলি, ওয়ার্ক ট্রায়াঙ্গল।
এর তিন কোনায় রাখতে হবে তিনটি জিনিসকে। আর কাজের সুবিধার জন্য এদের মধ্যে দূরত্ব হতে হবে ১২ ফুট থেকে ২৬ ফুটের মধ্যে। এর বেশি বা কম হলে কাজ করার সময় আপনি বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।
এই ত্রিভুজ সাজানোর সময় মনে রাখবেন যিনি রান্না করছেন তিনি ছাড়াও রান্নাঘরে কাজ থাকে বাড়ির অন্যদেরও। প্রধানত ফ্রিজটিতে। তাই তিনটি কোণের সব চেয়ে বাইরের দিকে রাখুন ফ্রিজকে। এর পরই আসে জলের জায়গা। তাই এই জায়গাটিও থাকতে হবে অন্যদের নাগালে। কিন্তু আপনার রান্নার জায়গাটি যথা সম্ভব আগলে রাখার দরকার অন্যদের থেকে, তাই সব চেয়ে দূরের কোনাতে রাখুন গ্যাস ওভেনটিকে।
সব শেষে বলি স্টোরেজ সাজানো নিয়ে।
জিনিসপত্র সাজানোর ক্ষেত্রে, অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে রাখুন হাতের কাছে। যাতে কাজের সময় বেশি খোঁজাখুঁজি করতে না হয়।
নিজের ব্যস্ত সময় থেকে অল্প সময় বের করে নিয়ে, নিয়মিত ভাবে স্টোরেজ স্পেস নতুন ভাবে সাজান। এতে আপনি সব সময় নিজের জিনিসপত্র সম্পর্কে অবগত থাকবেন আর সেগুলোও খারাপ হওয়ার সুযোগ পাবে না।
রান্নঘর যে হেতু একটি বাড়ির সব থেকে জরুরি জায়গা, তাই একে সঠিক ভাবে সাজিয়ে তোলাটাও একটি বড় কাজ। ডিজাইন থেকে শুরু করে, ফ্লোরিং, টাইলস, ক্যাবিনেট তৈরি, রঙ, প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল ফিটিংস হয়ে অ্যাপ্লায়েন্স, কুকওয়্যার, ডিশওয়্যার কেনা পর্যন্ত। তাই রান্নাঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সময় নিন, তাড়াহুড়ো করবেন না। এক একটি দিকে খুঁটিয়ে ভেবে তবেই এগোবেন।
এক সঙ্গে সব কিছু না করে ছোট ছোট প্রোজেক্ট-এ ভাগ করে নিন পুরো কাজটাকে। এর পর একটা একটা করে কাজ শেষ করুন। এতে আপনি এক এক ধাপে বুঝতে পারবেন কোথায় থামতে হবে আর কখন কোন দিকে এগোতে হবে। এ ভাবেই আপনার বাজেট অনুযায়ী ধীরে ধীরে সুন্দর ভাবে সেজে উঠবে আপনার সাধের রান্নাঘর। আর আমরা তো আছিই আপনাদের সঙ্গে।
আপনার ঘর সাজানো সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্ন নিয়ে চলে আসুন আমাদের এই পোর্টালে। আমরা সব সময় চেষ্টা করব আপনার ঘরকে আপনার মনোমত করে সাজিয়ে দিতে।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।