‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ (Scientific Reports) নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোনো মানুষ যদি নিরন্তর মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকেন তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে পোষ্যর ওপরও। কারণ কুকুরের ঘ্রাণশক্তি প্রখর। কুকুর মালিকের শরীরে স্ট্রেস থেকে বের হওয়া গন্ধ শুঁকে বুঝে যায়, মালিকের মানসিক অবস্থা ঠিক কেমন। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কুকুরের ওপরও।
ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলা রুনি এই গবেষণা চালান। তিনি ও তাঁর গবেষকদল মানসিক উদ্বেগে ভোগা ব্যক্তি ও তাঁদের পোষ্যর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক সিদ্ধান্তর কী প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে গবেষণা চালান। ১৮ জোড়া কুকুরের মালিক ও তাঁদের পোষ্যর ওপর গবেষণা চালানো হয়।
অন্যদিকে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মতোই মন খারাপ হয় কুকুরেরও। মানুষের মতোই কুকুরও মানসিক অবসাদে ভোগে। তফাত একটাই, মানুষের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদ অনেক সময় যেমন ক্রনিক ক্লিনিক্যাল সমস্যা হয়ে দেখা দেয় কুকুরদের ক্ষেত্রে অতটা ক্রনিক গুরুতর আকার নেয় না।
কেন অবসাদে ভোগে পোষ্য কুকুর
নিজের চেনা পরিবেশ পরিসরেই ভালো থাকে আপনার পোষ্য। এই চেনা পরিবেশ পরিসরই যদি আচমকা বদলে যায় তাহলে আপনার কুকুরটিকে অনিশ্চয়তা গ্রাস করে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে সে। বদল ঘটে আচরণে।
কুকুর খুবই বন্ধুবৎসল। মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে কুকুর। অল্পদিনের মধ্যে ভালো বন্ডিং তৈরি হয়ে যায়। আচমকা সেই বাড়ি থেকে কেউ যদি চলে যায় অন্যত্র বা পরিবারে কারওর মৃত্যু হয় তাহলে কুকুর চট করে বুঝতে পারে না কোথায় গেল তার প্রিয়জন। আমরাও সেটা তাকে স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে উঠতে পারি না। নিরাপত্তা আর ভালোবাসার জন্য মানুষের সঙ্গ প্রয়োজন হয় কুকুরের। কিন্তু প্রিয় মানুষকে দেখতে না পেলে, তার সঙ্গ না পেলেই অবসাদ ঘিরে ধরে পোষ্যকে।
পোষ্য কথা বলে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না বলে ভাববেন না আপনার পোষ্য একাকিত্বে ভুগছে না। বাড়িতে অন্য কোনো পোষ্য কুকুর বা আশপাশের এলাকায় কোনো কুকুর থাকলে তার মৃত্যু হলে বা সেই কুকুর যদি অন্য কোথায় চলে যায় তাহলে আপনার পোষ্যকে একাকিত্ব, ভয়, আতঙ্ক গ্রাস করতে শুরু করে। খেলার সঙ্গীকে হারালেই মন খারাপ হয় কুকুরের। ভয় পেতে পেতে অবসাদ গ্রাস করে তাকে।
কুকুরের জন্য দৌড়ঝাঁপ করা খুব প্রয়োজন। সেটা না করতে পারলে মন খারাপ হয় কুকুরের। অনেক সময় ভয় পেয়েই কুকুর নিজেকে একদম গুটিয়ে নেয়। পোষ্যকে কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। নির্দেশ অনুযায়ী ঠিকমতো কিছু করতে না পারলে অনেক সময়ই মন খারাপ হয় কুকুরের। শারীরিক অসুখ করলে বা কোথাও আঘাত লেগে যন্ত্রণা হলেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে কুকুর।
অবসাদগ্রস্ত হলে কুকুর কেমন আচরণ করে?
নিজেকে একদম গুটিয়ে নেয়। খেলাধুলো, দৌড়ঝাঁপ কিছু করতে ভালো লাগে না তার।
বড়ো বেশি লেথার্জিক বা কুঁড়ে হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি ঘুমোয়।
খিদে চলে যায়। পছন্দের খাবারও মুখে দিতে অনীহা। খাওয়ার পদ্ধতিতেও বদল ঘটে।
সারাক্ষণ অস্থির, বিরক্ত হয়ে থাকে। ঘুমোনোর পদ্ধতিতে বদল আসে। আচরণে বদল ঘটে।
সবসময় কুকুর যদি ঘুমোতে থাকে তাহলে সতর্ক হন। দেখুন, শারীরিক কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা। পছন্দের জিনিস থেকে আকর্ষণ হারাতে শুরু করলে, সবসময় নিজেকে গুটিয়ে নিলে সতর্ক হোন। প্রচণ্ড ট্রমার শিকার হলেও কুকুর ভয় পেয়ে অবসাদে আচ্ছন্ন হতে পারে।
আরও পড়ুন
অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ রাখলেই হয় না, নিয়মিত মাছের যত্ন করতে হয়