‘হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়/ সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়’ – কবি শঙ্খ ঘোষের ‘সঙ্গিনী’ কবিতাটির এই দু’টি লাইন শুধু সামান্য কবিতার লাইন নয়। এ হল জীবনের আখ্যান। যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন? মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন? অস্থিরতা গ্রাস করছে আপনাকে? নানান রকম দুশ্চিন্তায় মন খারাপ, অসুখী আপনি?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আপনার প্রিয়জন যদি শুধু আপনার হাতে হাত রাখেন, বলেন ‘পাশে আছি’, তাতেই অনেকটা কাজ হয়ে যায়। শুধু এটুকুতেই আপনাদের দু’জনের মস্তিষ্কের তরঙ্গ একই হারে তরঙ্গিত হবে। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা কমে যাবে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল নিউরোসায়েন্স’ (International Journal of Neuroscience) নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমাদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভালো থাকার জন্য শারীরিক স্পর্শ, অনুভূতি খুব জরুরি। অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে ও অস্থির মনকে শান্ত করতে শারীরিক স্পর্শ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শারীরিক স্পর্শের জন্য মস্তিষ্ক থেকে ‘লাভ হরমোন’ বা অক্সিটোসিন নিঃসরণ হয়। এই লাভ হরমোন বা বন্ডিং হরমোন অক্সিটোসিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মানসিক উদ্বেগ কাটিয়ে উঠতে ও নির্ভরতা তৈরি করতে। শারীরিক স্পর্শ স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ কমায়। ‘সাইকোসোম্যাটিক মেডিসিন’ (Psychosomatic Medicine) নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, শারীরিক স্পর্শ মানসিক উদ্বেগ কাটাতে সাহায্য করে। মন মেজাজ ভালো রাখে। একাকিত্ব কাটাতে সাহায্য করে।
অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যত বেশি করে পার্টনাররা একে অপরের হাতে হাত রেখেছে তত বেশি করে দুজনের মস্তিষ্কের তরঙ্গ একই খাতে বয়েছে। তত বেশি তাড়াতাড়ি যন্ত্রণার উপশম হয়েছে, ব্যথা বেদনা কমে গিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পাভেল গোল্ডস্টেইনের নেতৃত্বে এই গবেষণা হয়। গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে দ্য জার্নাল প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ (‘The journal Proceedings of the National Academy of Sciences’, PNAS)।
২৩ থেকে ৩২ বছর বয়সি একাধিক যুগলের ওপর গবেষণাটি করা হয়। গবেষকরা প্রত্যেকের মাথায় ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি (electroencephalography, EEG) যন্ত্র বসিয়ে দেন মস্তিষ্কের তরঙ্গ মাপতে। তিনটি ভাবে যুগলদের রাখা হয় দু’ মিনিট করে। একটায় পাশাপাশি বসানো হয় তবে হাত ধরতে বারণ করা হয়। একটায় আলাদা ঘরে বসানো হয় যুগলদের। একটায় দু’জনকে হাতে হাত রেখে পাশাপাশি বসানো হয়। মহিলাদের বাহুতে মৃদু হিট পেন দেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রেমিকা যখন যন্ত্রণা পাচ্ছে তখন প্রেমিক হাতে হাত রাখলে দু’জনের মস্তিষ্কের তরঙ্গ বেড়ে যাচ্ছে।
‘জার্নাল অফ সায়েন্স অ্যান্ড পার্সোনাল রিলেশনশিপ’-এ (Journal of Science and Personal Relationship) প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অপরের সঙ্গে বেশি করে শারীরিক স্পর্শ পেলে মানসিক ভাবে বেশি খুশি থাকে। মানসিক উদ্বেগের মধ্যেও সুরক্ষিত বোধ করে। হাতে হাত রাখা, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা সুরক্ষিত বোধ করায়, মানসিক নির্ভরতা তৈরি করে, মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শিশুদের তাদের প্রিয়জনরা বেশি করে জড়ালে, আদর করলে মানসিক সুস্বাস্থ্য তৈরি হয়। শিশুরা মানসিক ভাবে সুস্থ হয়। আত্মনির্ভরশীল হয়।