ঋদি হক: ঢাকা
বাংলাদেশের সুরক্ষা দেওয়াল সুন্দরবনে কেন বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে! নেপথ্যের রহস্যই বা কী? বিগত ২০ বছরে ২৫ বার আগুন লেগেছে সেখানে। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে গেছে প্রায় ৮১ একর বনভূমি। তাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা। কিন্তু আগুন লাগার কারণ অজ্ঞাত। সুন্দরবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
তবে বন বিভাগের খবর, ২০০২ থেকে ২০২১ সনের ৩ মে পর্যন্ত বিশ বছরে আগুনে পুড়েছে সুন্দরবনের প্রায় ৭২ একর বনাঞ্চল।
সর্বনাশা আগুনের লেলিহান শিখা যেন ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পিছু ধাওয়া করে ফিরছে। সুযোগ পেলেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে এই জঙ্গলে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বলতে গেলে একই এলাকায় বারংবার আগুন লাগে। একের পর এক আগুনে ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশ রক্ষার দেওয়াল সুন্দরবন। বেড়েই চলেছে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্রের খবর, ২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় আগুন লাগে একবার। একই রেঞ্জের নাংলি ও মান্দারবাড়িয়ায় দু’ বার। ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দু’ বার। ২০০৬ সালে তেড়াবেকা, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়ায় তিন বার, ২০১০ সালে গুলিশাখালিতে এক বার। ২০১১ সালে নাংলিতে দু’ বার। ২০১৪ সালে গুলিশাখালিতে এক বার। ২০১৬ সালে নাংলি, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিন বার। ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় এক বার এবং চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে গত সোমবার অর্থাৎ ৩ মে সকাল ১১টায়। ৩০ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানায় বন বিভাগ ও ফায়ার সাভির্স। পরে সন্ধ্যায় সুন্দরবন ছেড়ে চলে যায় ফায়ার সাভির্সের ৩টি ইঞ্জিন।
সর্বশেষ বুধবার ভোর থেকে একই স্থানে ফায়ার লাইনের মধ্যেই ফের আগুন লাগে। তাতে গাছপালা ও লতাগুল্ম দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। আগুনের খবর পেয়ে সকালে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা থেকে একাধিক ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের ফায়ার সার্ভিসের আরও দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। স্থানটি লোকালয় থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার বনের গহীনে দাসের ভারানি এলাকায়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদিন তৃতীয় দিনের মতো শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শরনখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইঞ্জিন-সহ বন বিভাগ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওই আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে (ডিএফও) প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রথম বার ভারত থেকে রেলপথে বাংলাদেশ আমদানি করছে ৫০ হাজার টন চাল
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।