ঢাকা: বাংলাদেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাসনের পাঁচ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। তার পর থেকে চরম সংকটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। সেই সংকটের মধ্যে থেকেও তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিচ্ছে। ১৫ বছরের ক্ষমতায় থাকার পর দলটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নেতারা বলছেন, হাজারো কর্মী গোপনে রয়েছেন। তাদের অনেক ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু দল পুনরুদ্ধারের আশা এখনো রয়ে গেছে।
এক প্রবীণ নেতা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলেছেন, “নেতৃত্ব ছিন্নভিন্ন, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ নেতারা জেলে, আরেক-তৃতীয়াংশ বিদেশে, এবং বাকিরা দেশে আত্মগোপনে।”
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। বহু নেতার সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা পুনর্গঠনের পথ দেখছেন না। এক তিনবারের সংসদ সদস্য বলেন, “এখানে পুনর্গঠনের কোনো সুযোগ নেই।”
আইনগত জটিলতা
এক প্রাক্তন মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিদিন নতুন নতুন মামলার নোটিশ আসছে। ৪৪ বছর বয়সী সাংসদ নাহিম রাজ্জাক বলেন, “আমরা কোনো বিচারের অধিকার পাচ্ছি না। জামিন মিলছে না। দেশে ফিরলেই আমাদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হবে।”
তবুও দলীয় নেতা-কর্মীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপ্টেড গ্রুপের মাধ্যমে তারা নিজেদের জেলাসমূহের খবর শেয়ার করছেন। প্রাক্তন সংসদ সদস্য এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, “আমি প্রতিদিন ২০০-৩০০ কর্মীর ফোন পাই।”
শেখ হাসিনা, যাকে দলের মধ্যে ‘আপা’ (দিদি) বলা হয়, ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত থেকে নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রাক্তন সাংসদ পঙ্কজ নাথ জানান, “আপা নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দেশে ফেরার প্রতীকী উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন। ভারতের সাহায্যে আন্তর্জাতিক মত গঠনের জন্যও দলটি চেষ্টা করছে।
এদিকে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সম্পত্তি জব্দ করে এবং নেতাদের জামিন আবেদন খারিজ করে দমন নীতি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। দেশজুড়ে হিংস অব্যাহত রয়েছে।
তবুও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস, যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ধরে রেখেই দলটি ঘুরে দাঁড়াবে। নাসিম বলেন, “৭০টিরও বেশি জেলা পর্যায়ে দলের কর্মীরা জনগণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।”