মাসাধিক সময় ধরে বিক্ষোভ। অস্থিরতার কারণে সারা বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সরবরাহ প্রক্রিয়া। তার উপর, দেশের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রও বহুবিধ সংকটের মুখোমুখি। সবমিলিয়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন ভারতের প্রতিবেশ দেশ। বাংলাদেশের ব্যুরো অব স্ট্যাটিকটিক্সের তথ্য উদ্ধৃত করে এমনটাই বলা হয়েছে ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর রিপোর্টে।
বাংলাদেশের ব্যুরো অব স্ট্যাটিকটিক্সের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক (স্ফীতি) পৌঁছেছে ১১.৬৬ শতাংশে, যা শেষ ১২ বছরের সর্বকালের সর্বোচ্চ। দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জুলাই মাসে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
সূত্রের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মহম্মদ ইউনুস। নতুন প্রশাসনের তরফে নগদ উত্তোলনের সর্বোচ্চ পরিমাণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বর্তমান নিয়মে বাংলাদেশের নাগরিকরা একটি ব্যাংক থেকে একবারে ২ লাখের বেশি বাংলাদেশি টাকা তুলতে পারবেন না।
দেশ জুড়ে অস্থিরতার কারণে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান ক্রমশ নিম্নমুখী। বুধবার ১ মার্কিন ডলারের তুলনায় বাংলাদেশি মুদ্রায় দাম দাঁড়িয়েছে ১১৬.৭৭ টাকায়। বিক্ষোভ অস্থিরতার আগে যা ছিল ১০৯ টাকার আশেপাশে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার ৩১ জুলাই ২০৪৮ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের মাসের ২১৭৮ কোটি ডলার ছিল। এভাবে একলপ্তে বাংলাদেশের মুদ্রাভাণ্ডার থেকে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার হ্রাস পেয়েছে।
এর জেরে খুচরো বিক্রেতারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য তুমুল চাপের মধ্যে রয়েছেন। মুনাফায় ব্যাপক ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা। তবে শীঘ্রই যে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা।
তবে বিশ্লেষকদের মত, এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বড়সড় আর্থিক সংস্কারের দরকার। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের শর্ত পূরণ, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, ঋণের সুদের হারের সীমা তুলে নেওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কার্যকর তদারকির ভূমিকা নিশ্চিত করার অংশ হিসাবে এই সংস্কার শুরু করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র প্রতিবেদনে।