বাংলাদেশ জুড়ে সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কড়া বার্তা দিল মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া দ্বিতীয় বিবৃতিতে সরকার জানায়, “এই ধরনের অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না, কঠোর হাতে প্রতিহত করা হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে শক্ত হাতে দমন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উস্কানিমূলক কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুর
বুধবার রাত থেকে নতুন করে অশান্তির সূত্রপাত হয়। শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের ঘোষণার পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিরোধীরা। বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। এক পর্যায়ে তারা বাড়িটির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে, ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।
বুধবার রাত থেকেই ক্রেন এনে ঐতিহাসিক বাড়িটি ভেঙে ফেলা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সেই ধ্বংসযজ্ঞ চলে। ধানমন্ডির সুধা সদনে আগুন লাগানো হয়, যেখানে শেখ হাসিনা বসবাস করতেন। পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে নির্মিত মিউজিয়ামও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের উপর আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে।
দ্বিতীয় বিবৃতি ও কঠোর অবস্থানের বার্তা
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে বলেছিল, “শেখ হাসিনার সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়াতেই মুজিবের বাড়িতে হামলা হয়েছে।” সরকারের অভিযোগ, ভারত থেকে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে “উসকানিমূলক বক্তব্য” দিয়েছেন, যা এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে।
ঢাকা সরকার ভারতের কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছে যাতে হাসিনাকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া না হয়। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় উপ-রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিবৃতির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানের বার্তা দিল ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার ঘটনায় শেখ হাসিনা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “বাড়িটি তো আমরা ভোগ করিনি, এটি ছিল স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ। একে একে সব ধ্বংস করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মনের মণিকোঠায় জাতির পিতা চিরদিন জাগ্রত থাকবেন, তা কোনোদিনও মুছে ফেলা যাবে না।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত উত্তপ্ত। হিংসা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর থাকবে।