ঋদি হক: ঢাকা
কাল ১৫ আগস্ট রবিবার বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদৎবার্ষিকী। এ দিন ভোর থেকে ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী-সহ সর্বস্তরের মানুষ অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দিবসটি পালন করবে। এ বারে করোনার কারণে শারীরিক দূরত্ব সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হবে।
১৯৭৫-এর এই দিনেই সপরিবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তার পর কেটে গেছে দীর্ঘসময়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে। শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার নেওয়ার পরই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। ২০০২ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করে। একে একে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল-সহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিল-সহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ দিন সৌভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
শোক দিবসে দেশ জুড়ে নানা কর্মসূচি
দেশে করোনা অতিমারি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আগস্ট মাসের শুরু থেকেই নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন-সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসে যে সব কর্মসূচি পালন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদলের শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা। ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনাসভা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বিভিন্ন মন্ত্রক, অধিদফতর ও সংস্থা জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য শারীরিক দূরত্ব মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-হত্যা নিয়ে বুদ্ধিজীবী ও পত্রপত্রিকার মন্তব্য
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার বিষয়টি অনেক বুদ্ধিজীবীই মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা শোককাতর হন এবং বিভিন্ন মন্তব্য করেন। একজন মানুষকে কতটা ভালোবাসলে অবলীলায় এমন মন্তব্য করা যায়, তারই প্রমাণ মেলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরীর কথায়। নীরদ সি বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।
দ্য টাইমস অব লন্ডন-এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয়, ‘সব কিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই’।
একই দিনে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে’।
শেখ মুজিবের সুচিন্তা থেকে আজকের বাঙালিরও শেখার আছে, এ কথা উল্লেখ করে ভারতীয় বাঙালী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সম্প্রতি বলেছেন, তাঁকে ‘বাংলাদেশের জনক’ বা বঙ্গবন্ধু বলাটা নিতান্তই কম বলা। তিনি এর চেয়েও বড়ো কোনো অভিধা এবং নাম কিনতে চাননি। মানুষ তাঁকে অন্তর থেকে ভালোবাসতেন।
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী