ঋদি হক: ঢাকা
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেজিং-বিরোধী জোটে যোগ দিলে বাংলাদেশ-চিন সম্পর্কের (Bangladesh-China relation) অবনতি হবে। সোমবার এক আলোচনাসভায় এমনই হুঁশিয়ারি এল ঢাকায় নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত (Chinese ambassador) লি জিমিং-এর (Li Jiming) তরফে।
চিনা রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে বেজিং। জিমিং দাবি করেন, বাংলাদেশের ভুলের জন্যই টিকা পেতে দেরি হচ্ছে। তবে চিনের দেওয়া ৫ লাখ ডোজ টিকা ১২ মে ঢাকায় আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। কূটনীতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডি ক্যাবের আলোচনায় এ সব কথা বলেন চিনা রাষ্ট্রদূত।
করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেল বছর প্রথম আসে চিনা মেডিকেল প্রতিনিধিদল। সে সময়ই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তাব দেয় চিন। সেই প্রস্তাব অবশ্য প্রথমে নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ। এ বারে সেই চিনের ভ্যাকসিনই আসছে।
জিমিং জানান, শুধু টিকাই নয়, আরও অনেক প্রস্তাবই দেওয়া হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। অথচ তিন মাস ধরে সে সব প্রস্তাব ঝুলে আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মোকাবিলায় চিনের জোটের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, জোটে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ভারতকেও দেওয়া হয়েছে, প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও চিনের সর্ম্পকের নানা দিক
বাংলাদেশ ও চিনের সর্ম্পকের নানা দিক উঠে আসে আলোচনায়। সেই সঙ্গে এ নিয়ে অন্য রাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ও আসে। এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, তিস্তার প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক ভাবে পেলে তা নিয়ে কাজ শুরু করবে চিন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জাপান, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া যে কৌশলগত কোয়াড (কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ, Quadrilateral Security Dialouge, QUAD) গঠন করেছে, তা মূলত চিনকে ঠেকানোর জন্যই। ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল অবাধ ও স্বাধীন রাখার যুক্তি দেখিয়ে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে কোয়াড কথাবার্তার সূচনা হয়।
কোয়াডে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করে চিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, “এই প্রক্ষাপটে বলব, এ ধরনের ছোটো গোষ্ঠী বা ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ভাবনাটা ভালো না। বাংলাদেশ এতে যুক্ত হলে তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ করবে।”
এপ্রিলের শেষ দিকে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেংহে ঢাকা সফর করেন। এ সময় কোয়াড, আইপিএস ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিল চিন।
চিনের অনুরোধের জবাবে বাংলাদেশ কী বলেছে জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত জবাবটি এড়িয়ে যান। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, “চিন সব সময় মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়াড হচ্ছে চিন-বিরোধী একটি ছোটো গ্রুপ। আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে চাই, অর্থনৈতিক প্রস্তাবের কথা বললেও এতে নিরাপত্তার উপাদান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাপানও এখানে চিনের বিরুদ্ধে বলছে।”
চিনা টিকা বুধবার আসছে
চিনের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা বুধবার নাগাদ পৌঁছোনোর কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, কেনা টিকার জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে। টিকা নিয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং বাংলাদেশে টিকা পাঠানোর বিষয়টি চিন খুবই ইতিবাচক ভাবে দেখছে। সমস্যা হল, বাংলাদেশ সরকার চিনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে।
চিনা রাষ্ট্রদূত বলেন, টিকা পেতে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশ টিকার সেই লাইনের সামনের দিকে নেই। সরকারি পর্যায়ে চিন থেকে কেনা টিকার প্রথম চালান হাতে পেতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
এই অপেক্ষা কত দিন জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাণিজ্যিক ভাবে বাংলাদেশ যাতে দ্রুত টিকা কিনতে পারে তার জন্য আমার তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করব। বেজিংয়ে আমার সহকর্মীরা প্রথমে বলেছে, টিকার লাইন এতটা দীর্ঘ যে ডিসেম্বরের আগে টিকা পাওয়ার আশা না করাই ভালো। আমি তাদের বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব এখানে টিকা দরকার। এর পর আমার মনে হচ্ছে, ডিসেম্বরের অনেক আগেই আমরা পারব। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এ বছরের প্রথমার্ধে সেটা হবে না।”
আলোচনাসভায় অন্য যাঁরা বক্তৃতা করেন তাঁরা হলেন ডিপলোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিকাব) প্রেসিডেন্ট পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিন।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত আরও ১৪ দিন বন্ধ রাখছে বাংলাদেশ
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।