চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার অভিযোগ। ঘটনায় প্রকাশ, ইসকন (ISKCON) এবং সনাতন ধর্মকে নিয়ে একজন মুসলিম ব্যবসায়ীর অবমাননাকর ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে হিন্দুরা বিক্ষোভ করেছিল। চট্টগ্রাম শহরের এই এলাকায় মঙ্গলবার রাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন ব্যবসায়ী ওসমান মোল্লা একটি ফেসবুক পোস্টে ইসকনকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” বলে মন্তব্য করেন। এই পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তার দোকানের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পরে, ওসমান মোল্লাকে ‘নিরাপদ হেফাজতে’ স্থানান্তরিত করা হয়।
অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ দল হাজারি গলিতে অভিযান চালায় এবং হিন্দুদের প্রতিষ্ঠানের উপর আক্রমণ চালায়। এই হামলার ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলিও ভেঙে ফেলা হয়, যা এই তাণ্ডবলীলার প্রমাণ লুকানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সাংবাদিক সইফুদ্দিন তুহিন সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানান, “একজন মুসলিম যুবক ইসকনের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন, যা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়।” হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি জানিয়েছেন, “অভিযানের সময় কিছু সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে প্রায় ১০০ জনকে আটক করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অপারেশনের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।”
প্রথম আলো সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযানের সময় শূন্যে গুলি ছোড়া হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন। ঢাকায় ইসকন কর্তৃপক্ষ “আমার দেশ” পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ইসকন নিষিদ্ধের দাবির জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে “ইনকিলাব মঞ্চ” নামের একটি সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানায়।
ইসকনের প্রতিনিধি রাধারমণ দাস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে খুবই উদ্বেগজনক খবর আসছে, সেখানে হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। কতজন মারা গেছেন জানি না। ওরা কাউকে ছেড়ে দিচ্ছে না।”
বাংলাদেশে ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ হিন্দু। ঐতিহ্যগতভাবে তারা শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগকে সমর্থন করে এসেছে। গত মাসে কোটা বিরোধী বিক্ষোভ এবং তার পরবর্তীতে চলমান ঘটনা প্রবাহে আওয়ামি লীগকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-নেতৃত্বাধীন একটি আন্দোলনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষে ৬০০ জনের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে।