বাংলাদেশ
বাঙালি প্রাণের উৎসব এ বার মনমরা, আয়োজন শুধু ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে

ঋদি হক: ঢাকা
কবিগুরু লিখেছেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।/ তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/ কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’ ঋতুরাজ বসন্ত, সঙ্গে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পয়লা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। নতুন সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলাদেশে একই দিনে পালিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
এ বছর বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস ছিল আয়োজনহীন। বিষাদের বছর পেরিয়ে বাঙালি প্রাণের উৎসবে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে কায়মনোবাক্যে এমনটিই ভেবেছিল। কিন্তু বছর ফুরিয়ে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ফের দুয়ারে কড়া নেড়েও জাগিয়ে তুলতে পারেনি বাঙালিকে। কারণ মহাভাইরাস পৃথিবীজোড়া মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দিয়েছে।
রাজধানী ঢাকার চেহারা থাকার কথা ছিল বর্ণিল। কিন্তু অতিমারি সব কেড়ে নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলার মঞ্চ অন্ধকার। সেখানে দেখা মেলেনি হলুদবরণ রূপের সাজে উৎসবমুখর মানুষদের। দেখা যায়নি আবির মাখামাখিতে নিজেকে কতটা রঙিন করে তোলা যায় তার প্রতিযোগিতা। শোনা যায়নি বাচিক শিল্পীর কণ্ঠে মনপ্রাণ উজাড় করে দেওয়া কথামালায় অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা কোনো উদাসী নারীর রঙিন অবয়ব।
রমনা-সোহরাওয়ার্দীতে বসেনি হলুদ পাখিদের আড্ডা। টিএসসি ছিল বিরান ভূমি। বকুলতলা, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্কের গাঢ় সবুজ বিশাল চত্বরের দিকে তাকিয়ে কান পাতলেই শোনা যায় বিষাদের সুর! ওরা কাঁদছে! এমন দিনে যেখানে সকল বয়সি মানুষের থাকে অবাধ বিচরণ, সে সব স্থান আজ জনমানবহীন। কোথাও অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলেনি।

জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের মানজার চৌধুরী সুইট ধরা গলায় বললেন, “জানেন, এ বারে কোথাও অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলেনি। তালা ঝুলছে বকুলতলার গেটে। উত্তরায় চেয়েছিলাম, সেখানে না, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, সেখানেও না। অবশেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিল্পকলার উন্মুক্ত মঞ্চে কয়েক ঘণ্টার অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেলাম।”
ছলছল চোখে সুইট বললেন, সকালে রবীন্দ্রনাথের গান দিয়েই বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার চিরাচরিত নিয়মেই শুরুটা হয়েছে। তার পর নৃত্য ও সংগীতের সুরে হাজারো শ্রোতাকে মুগ্ধ চিত্তে সময় কাটাতে দেখা গেল। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদ এবং সভাপতি ছিলেন কাজল দেবনাথ।
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতি আজ অপরূপ রঙে সেজেছে। নব ফাল্গুনের বর্ণিল এই আবাহনে মনের নন্দনমঞ্চে নেচে উঠুক অসংখ্য উদাসী মনপাখি। ফাল্গুনের রঙিন বাতাসে ধুয়ে যাক বিষাদের ছায়া। জীবন ভরে ওঠুক নব আনন্দে।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উন্মুক্ত মঞ্চ জেগে ওঠেছিল ফাগুন অর্থাৎ ঋতুরাজ বসন্ত উৎসবে। কিন্তু ছিল না ফি বারের মতো নগরজোড়া উৎসবের বর্ণিল ছোঁয়া। বাঙালি মানেই উৎসবপ্রিয়। আর বাংলাদেশে উৎসব মানে মহা ধুমধাম। প্রতিযোগিতার বিষয়টিও লক্ষ করা যায় নানা ক্ষেত্রে।
গত বছরের বসন্ত উৎসবে রঙিন মঞ্চের যখন পর্দা নেমেছিল, তখন কেউ ভাবতে পারেনি, সপ্তাহ দুই পর থেকে পৃথিবীজোড়া মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে। সে বারের বসন্ত উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই দেখা দেয় করোনাভাইরাস। একে একে গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করে করোনা তথা কোভিড-১৯। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যায়। ঘরবন্দি মানুষকে অসহায় জীবযাপন বেছে নিতে হয়।
বিষাদের বছর পেরিয়ে এ বারের বসন্ত উৎসব ঢাকঢোল পিটিয়ে করা সম্ভব হয়নি। অনুমতি মেলেনি সরকারের তরফে। অথচ এ দিনটি রাজধানী ঢাকা পরিণত হয় বসন্তের শহরে। এ বারে তা একেবারে উধাও। একমাত্র সোহরারাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে আয়োজন করা হয় বসন্ত উৎসবের। ঢাকায় মাত্র একটি অনুষ্ঠান অর্থাৎ জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজন। সকল বয়সি মানুষের উপস্থিতি বারণ ছিল। কারণ কোডিভ ছড়াতে পারে। ভাইরাস প্রাণের উৎসবে মহামিলনের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।

গত বছর বসন্ত উৎসব এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল ঢাকায়। এ বারে সেখানে মাত্র ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা।
ইটপাথরের হৃদয়হীন রাজধানীতে বসন্তের লাবণ্য স্পর্শ করতে পারেনি। প্রতি বার যেমনটির সঙ্গে এই মহানগর পরিচিত, তা কেড়ে নিয়েছে কোভিড-১৯। কিন্তু মানবহৃদয় বসন্তের প্রভাব এড়াতে পারে না। তাই যান্ত্রিক নগরেও দেখা যায় বেশভূষায়, উৎসব-আয়োজনে ঋতুরাজের আগমনী-উচ্ছ্বাস। মিরপুর থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শাহবাগে ফুল কিনতে এসেছেন স্বপন। সবাই হলুদ পোশাকে নিজেদের সাজিয়েছেন। জানালেন, এক বছর পর সপরিবার বেরিয়েছেন।

মানুষের উপস্থিতির সংখ্যা কম হলেও বাঙালির প্রাণের উৎসবের আয়োজনে কোনো কমতি ছিল না।
উৎসব কমিটির তরফে মানজার রহমান সুইট জানালেন, সব দুয়ার থেকে ফিরে এসে অবশেষে ঘণ্টা চারেকের অনুষ্ঠান করার সুযোগ মিলল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পুরাতন ঢাকার গেন্ডারিয়ায় সীমান্ত খেলাঘর প্রাঙ্গণে হল দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ সমাপনী অনুষ্ঠান।
ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। গাছে গাছে পলাশ ও আমের মুকুলের আগমনে প্রকৃতি বলছে, বসন্ত এসে গেছে। পয়লা ফাল্গুন বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাস ফাল্গুনের প্রথম দিন ও বসন্তের প্রথম দিন। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন পালিত হয়। বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে বিশেষ উৎসব পালিত হয়।

উৎসব উদযাপনে জুড়ি নেই বাঙালির। তার ওপর উৎসবটি যদি হয় প্রকৃতির পালাবদলে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের দিন, তবে তো কথাই নেই! শহর জুড়ে প্রতিযোগিতামূলক আয়োজনে কোনটা রেখে কোনটায় যাওয়া যায়, তা নিয়ে চলে টানাপোড়েন। কিন্তু এ বারে তা অনুপস্থিত। তার পরেও প্রাণস্পন্দনে জেগে ওঠা প্রকৃতির নীরব উচ্ছ্বাস, বুনো ফুলের গন্ধমাখা দমকা হওয়া, এই চনমনে রোদ, আমের মুকুলে মুকুলে ভ্রমরের গুঞ্জন, বাঙালির হৃদয়ের গভীরেও জাগিয়ে তোলে এক অনির্বচনীয় ব্যাকুলতা। ঋতুরাজ বসন্ত বলে কথা।
আরও পড়ুন: টিকা-কূটনীতিতে এগিয়ে ভারত, তবে বাংলাদেশকে টিকা-সহায়তা দিতে আলোচনায় চিন
বাংলাদেশ
Bangladesh: বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর প্রয়াণ
তাঁদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।


নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: সাবেক আইনমন্ত্রী এবং সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু (Abdul Matin khasru) এবং বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান (Shamsuzzaman Khan) প্রয়াত হলেন। তাঁদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান কিছুদিন ধরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বুধবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর শোকবার্তায় বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যাঙ্গনে শামসুজ্জামান খানের অবদান বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। প্রয়াতের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি।
পৃথক শোকবার্তায় অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গবেষক ও লেখক বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সাহিত্যকে অনন্য গবেষণাকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন যা ভবিষ্যতেও গবেষণাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়া চীন – এই বইগুলোর সম্পাদনা ও প্রকাশে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। শামসুজ্জামান খান কর্মগুণে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করে ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৪ মে বাংলা একাডেমির তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আব্দুল মতিন খসরু
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বুধবার প্রয়াত হন। সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ মার্চ সকালে সিএমএইচে ভর্তি হন। ২৫ মার্চ রাতে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থায় উন্নতি হওয়ায় ৩১ মার্চ কেবিনে দেওয়া হয়। গত ১ এপ্রিল করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৬ এপ্রিল তাঁকে ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। তার পর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আরও পড়ুন: Bangladesh Lockdown: দেশ জুড়ে কঠোর লকডাউন, পথে পথে তল্লাশি চৌকি, মুভমেন্ট পাশ ছাড়া চলাচল বন্ধ
বাংলাদেশ
Bangladesh Lockdown: দেশ জুড়ে কঠোর লকডাউন, পথে পথে তল্লাশি চৌকি, মুভমেন্ট পাশ ছাড়া চলাচল বন্ধ
বুধবার থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের পথেই হাঁটল বাংলাদেশ।


ঋদি হক: ঢাকা
বাংলাদেশে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী রমজান। একই দিনে দিনে পয়লা বৈশাখও। দু’টোই বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাৎপর্যময়। আর এই দিনেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফার লকডাউন। বিনা পাসে কাউকে রাস্তায় চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকদের গাড়িও তল্লাশির বাইরে যায়নি।
যাঁরাই রাস্তায় যাতায়াত করেছেন, তাঁদের কাছে চাওয়া হয়েছে পাস। যাঁরা পাস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন কঠোরতার মুখোমুখি ঢাকাবাসী আগে কখনও হয়েছে বলে জানা নেই।
যে কোনো মূল্যে এ বারের লকডাউনের সাফল্য ঘরে তুলতে চায় হাসিনা সরকার। এর আগে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষিত লকডাউন কার্যত ছুটির আমেজে কেটে গিয়েছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নানা পরামর্শ তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন, ১৪ দিন পর্যন্ত মানবদেহে লুকিয়ে থেকে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম করোনাভাইরাস। কমপক্ষে দু’ সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ছাড়া করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোখা সম্ভব নয়।
অবশেষে বুধবার থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের পথেই হাঁটল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোর থেকেই ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ছিল পুলিশের তল্লাশি। প্রয়োজনীয় কাজে কাউকে বের হলে লাগছেই মুভমেন্ট পাস। বিনা পাসে কাউকে রেয়াত করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছুটির আমেজের গেল সপ্তাহের লকডাউন এ বারে অতীত। এ বারের লকডাউনে অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহণ, ট্রেন ও নৌযান, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উড়ান বন্ধ। পণ্যপরিবহণের জন্য রেল ও লরি চলাচল করছে সীমিত সংখ্যায়।
৯৬ জনের মৃত্যু
লকডাউনের প্রথম দিনেই ৯৬ জনের মৃত্যুর হয়েছে। আপাতত এটাই করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯৮৭ জন। একই সময়ে ২৪ হাজার ৮২৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ১৮৫ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। দৈনিক আক্রান্তের হার দাঁড়িয়েছে ২০.৮৯।

করোনা সংক্রমণের ৪০৩তম দিনে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বার্তায় এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭ লাখ ৩ হাজার ১৭০ জনের করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৯১ হাজার ২৯৯ জন।
ম্রিয়মাণ পুরাতন ঢাকা
লকডাউনে জরুরি সেবায় নিয়োজিত ছাড়া সবাইকে বাড়িতেই থাকতে বলা হয়েছে। এ বারে পয়লা বৈশাখের অন্যতম অনুষ্ঠান মঙ্গলশোভা যাত্রা হয়নি। আয়োজন সীমাবদ্ধ ছিল টিভির পর্দায়। বাংলা নববর্ষের দিনটিকে ঘিরে বরাবরই রঙিন হয়ে উঠত পুরাতন ঢাকার ব্যবসা-প্রধান এলাকা। কিন্তু এ বারে করোনা রুখতে জীবনখাতা থেকে সব কিছুই বাতিল করা হয়েছে।
যেখানে মানুষ নিজেদের জীবন বাঁচাতে মরিয়া, সেখানে নববর্ষ এবং হালখাতা দূর অতীত। অথচ রাজধানীর পুরাতন ঢাকার ইসলামপুর, শ্যামবাজার, তাঁতীবাজার, শাঁখারিবাজারের জুয়েলার্স ও অলংকার তৈরির কারখানা, চকবাজার, মৌলভীবাজার, লালবাগ, নিউমার্কেট ইত্যাদি ব্যবসা প্রধান এলাকায় পয়লা বৈশাখে থাকত সাজো সাজো রব। ফুল দিয়ে সাজানো হত দোকান।
ছাপানো হত বহু রঙের আমন্ত্রণপত্র। বাহারি আয়োজনে সে কী উল্লাস! পুরোনো হিসেব চুকিয়ে শুরু হত ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার পালা। গত বছর মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর হালখাতার অনুষ্ঠান করতে পারেননি পুরাতন ঢাকার ব্যবসায়ীরা। এ বারেও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বৈশাখের অনুষ্ঠান-সহ সব বন্ধ হওয়ায় হালখাতার ছাপও বন্ধ।
আরও পড়ুন: Bangladesh Lockdown: সর্বাত্মক লকডাউন বাংলাদেশে, চলবে পার্সেল ট্রেন, ব্যাঙ্ক রোজ তিন ঘণ্টা খোলা
বাংলাদেশ
Bangladesh Lockdown: সর্বাত্মক লকডাউন বাংলাদেশে, চলবে পার্সেল ট্রেন, ব্যাঙ্ক রোজ তিন ঘণ্টা খোলা
অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকার পাশাপাশি ঘরের বাইরে মানুষের চলাচলও বন্ধ। চাকা ঘুরছে না গণপরিবহণের। বন্ধ রয়েছে ট্রেন এবং আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উড়ান।


ঋদি হক: ঢাকা
সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। এই লকডাউনে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত বছরের মতো এ বারেও লকডাউনে ৮টি পার্সেল ট্রেন চলাচল করবে। জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জীবনরক্ষায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। জীবন সবার আগে। তাই লকডাউনে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সরকার বলছে, এ বারে কঠোর লকডাউন চলবে।
অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকার পাশাপাশি ঘরের বাইরে মানুষের চলাচলও বন্ধ। চাকা ঘুরছে না গণপরিবহণের। বন্ধ রয়েছে ট্রেন এবং আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উড়ান। জরুরি কাজে যাতায়াতের জন্য পুলিশের কাছ থেকে ‘মুভমেন্ট পাস’ সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
লকডাউনের ঘোষণায় সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষজন। গ্রামে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই তাঁদের কাছে। তাই ক’ দিন আগে থেকেই দলে দলে গাদাগাদি করে বিকল্প যানবাহনে চেপে তাঁরা ঢাকা ছেড়ে গেছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চলবে ৮টি পার্সেল ট্রেন
গত বছরের মতো এ বারেও লকডাউনে ৮টি পার্সেল ট্রেন চলাচল করবে। ১৪ এপ্রিল থেকে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-সহ দেশের ছয়টি রুটে ৮টি পার্সেল ট্রেনে ২৫% রেয়াতি মূল্যে কৃষিজাত পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। পার্সেলে মাল পরিবহনের সুবিধার্থে ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক।
বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন মঙ্গলবার রেলভবনে সাংবাদিক বৈঠকে এসে জানালেন রেলপথ মন্ত্রক গেল বছরেও করোনাকালীন সময়ে পার্সেল ট্রেন চালু রেখেছিল। এ বারেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। বরং সেবার মান বাড়াতে যা যা প্রয়োজন তার সবটাই করবে রেলমন্ত্রক।
রেলমন্ত্রী বলেন, আমের মরশুমে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন, ক্যাটল ট্রেন-সহ পার্সেল ট্রেন পরিচালনার পাশাপাশি তেল, সার-সহ অন্যান্য মাল পরিবহন করছে রেল।
গত বছর করোনা প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে পণ্যপরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধুরাষ্ট্র ভারত থেকে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। করোনার কারণে শ’ শ’ পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে বিভিন্ন সীমান্তে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ও ভারত সরকার আলোচনা করে রেলযোগে পণ্যপরিবহণ সেবা চালু করে। তাতে গত জুন মাসেই ১০৩টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করেছে।
এ বারের লকডাউনে গত বছরের তুলনায় পণ্য পরিবহণে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। প্রতি মাসে ১৫০টি পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে চলাচল করবে এমন অভাসই দিয়েছেন রেলভবনের একজন আধিকারিক।
আরও পড়ুন: Bengali new year: সবার আগে মানুষের জীবন, পয়লা বৈশাখের আনন্দ ঘরে বসে উপভোগ করুন: শেখ হাসিনা
-
দেশ2 days ago
Vaccination Drive: এসে গেল তৃতীয় টিকা, স্পুটনিক ফাইভে অনুমোদন দিয়ে দিল কেন্দ্র
-
দেশ2 days ago
Sputnik V: এপ্রিলের শেষে ভারতের বাজারে চলে আসবে টিকা, জানাল রাশিয়া
-
প্রযুক্তি1 day ago
বাড়ির কাছাকাছি রেশন দোকান কোনটা, খুব সহজেই জেনে নিতে পারেন ‘মেরা রেশন’ মোবাইল অ্যাপ থেকে
-
রাজ্য1 day ago
Bengal Polls 2021: এ বার অনুব্রত মণ্ডলকে শোকজ নোটিশ নির্বাচন কমিশনের