বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর পেতে বাংলাদেশকে ‘ভেঙে ফেলার’ প্রস্তাব করলেন ত্রিপুরার তিপ্রা মথা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং বিজেপির জোটসঙ্গী প্রাদ্যোত কিশোর দেববর্মা। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যকে ঘিরে তিনি এই দাবি তোলেন।
ইউনূসের বিতর্কিত মন্তব্য
২৮ মার্চ বেজিংয়ে ‘সাসটেইনেবল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড এনার্জি’ সংক্রান্ত একটি উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভূমিবেষ্টিত এলাকা এবং সমুদ্রের সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই। বাংলাদেশই এই অঞ্চলের “একমাত্র সাগর অভিভাবক” এবং এই পরিস্থিতি চিনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
দেববর্মার কড়া প্রতিক্রিয়া
ইউনূসের এই বক্তব্যের পর ত্রিপুরার তিপ্রা মথা পার্টির প্রধান প্রাদ্যোত কিশোর দেববর্মা বলেন, “ভারতের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে দেওয়া। বরং কোটি কোটি টাকা খরচ না করে বাংলাদেশ ভেঙে নিজেদের সমুদ্রবন্দর পাওয়া উচিত।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি সবসময় ভারতভুক্ত হতে চেয়েছিল। বর্তমানে এই অঞ্চলগুলির লক্ষাধিক ত্রিপুরি, গারো, খাসি এবং চাকমা জনগণ বাংলাদেশে কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।
বিবৃতিতে উত্তেজনা বাড়ল
দেববর্মার এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ইউনূসের মন্তব্যকে “উসকানিমূলক” এবং “আক্রমণাত্মক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই বক্তব্য ভারতের কৌশলগত দুর্বলতাকে তুলে ধরেছে।”
সামাজিক এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যালও ইউনূসের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারতের সাতটি রাজ্য ভূমিবেষ্টিত, তবে তার মধ্যে কী গুরুত্ব রয়েছে?”
অপরদিকে, কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ ইউনূসের মন্তব্যকে “গভীর উদ্বেগজনক এবং অগ্রহণযোগ্য” বলে আখ্যা দেন।
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিতর্ক
চট্টগ্রাম বন্দর ত্রিপুরার সাবরুম থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে। ২০২৪ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাবরুমে একটি স্থলবন্দর উদ্বোধন করেন। এই বন্দর থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো সম্ভব, যা কলকাতা বা হলদিয়া বন্দরের চেয়ে অনেক কাছের।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আশঙ্কা
নর্থ-ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (নেডা) প্রধান হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সতর্ক করে বলেন, “চিকেনস নেক করিডোরের কৌশলগত দুর্বলতা নিয়ে বারবার আলোচনা হচ্ছে। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনাও সামনে এসেছে।”