ঋদি হক: ঢাকা
বাংলাদেশের (Bangladesh) ঐতিহ্যকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে অছে ঢাকার (Dhaka) রমনা কালীমন্দির (Ramna Kali Mandir) ও মা আনন্দময়ী আশ্রম। সদর ফটক দিয়ে ঢুকলেই বাঁ দিকে দেখা যাবে একটা শ্বেতপাথরের ফলক, তাতে লেখা ৭১’র শহিদ ৬২ জনের নাম। ডান পাশে শানবাঁধানো পুকুর। এটাকে পুকুর না বলে মায়ের দিঘি বলাটা যথাযথ হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক দক্ষিণে ২.২২ একর জমির ওপর মন্দির, ভক্তনিবাস ও অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণকাজ চলছে। পরিকল্পনায় রয়েছে ১০০০ আসনের একটি অডিটোরিয়ামও।
রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ গণতদন্ত কমিশনের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ৬২ জন শহিদের নাম মিলেছে। মন্দিরের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁরা বলছেন, হানাদার পাকবাহিনী মন্দিরের পুরোহিত এবং এখানে বসবাসকারী প্রায় শতাধিক মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। তার পর ডিনামাইট ও ট্যাংক দিয়ে মন্দিরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
সে দিনের ভয়াল স্মৃতি আজও তাড়া করে শংকরলাল ঘোষকে
তখন তাঁর বয়স বছর ১৪। হানাদারদের ছোড়া গুলি তাঁর ডান হাতের বুড়ো আঙুলের পাশে লেগে চলে যায়। পায়েও গুলিবিদ্ধ হন। সেই অবস্থায় পালিয়ে বাঁচেন। অন্ধকার পথ। সঙ্গে আরও কয়েক জন। সবাই রক্তাক্ত। কী ভাবে যে ওই এলাকা ত্যাগ করলেন, তা তার স্মরণে এলই কেঁপে ওঠেন ৬৫ বছরের শঙ্কর। হানাদার পাকবাহিনীর তপ্ত গুলি তাঁর দাদুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।

মন্দিরের অবস্থান
এই মন্দিরের পাশেই তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। সেই ময়দান আজ বিশ্ব হেরিটেজ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীর কাছে এই স্থানেই পাকবাহিনী আত্মসর্মপণও করে।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সফর এসে এই স্থানটিতে বানানো মুজিব-ইন্দিরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভাষণ দিয়েছিলেন। পাশেই রয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ব পাশে হাইকোর্ট, দক্ষিণে কার্জন হল, পশ্চিম পাশে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মন্দিরের ঠিক উলটো দিকে রয়েছে জ্ঞানমন্দির বাংলা একাডেমি। এই সব ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যমণি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে রমনা কালীমন্দির।
কী বললেন মন্দির কমিটির সভাপতি
মন্দির কমিটির সভাপতি উৎপল সরকার জানালেন, ভারত সরকারের ৭ কোটি টাকা অনুদানে জোরকদমে এগিয়ে চলছিল মন্দিরের নির্মাণের কাজ। আসন্ন দুর্গোৎসবেই পাঁচতলা ভক্তনিবাস এবং মন্দিরভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব কিছু ওলট-পালট করে দেয় সর্বানাশা করোনা মহামারি। টানা ৪ মাস বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ। বাংলাদেশের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর নাগাদ মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার আশা করছেন উৎপলবাবু। ভক্তদের জন্য মন্দির খুলে দেওয়া হয়েছে।

উৎপলবাবু জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে পূর্ব বঙ্গের নিরস্ত্র মানুষের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় হানাদার পাক বাহিনী। নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নারকীয় কাণ্ড চালায় বর্বর পাক বাহিনী। ২৭ মার্চ রমনা কালীমন্দিরের সেবায়ত-সহ প্রায় একশো সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এর পর ডিনামাইট দিয়ে পুরো মন্দিরটি উড়িয়ে দেয়।
কিঞ্চিৎ ইতিহাস
ইতিহাস বলছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দশনামী সম্প্রদায় এই কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় পাঁচশো বছর বা তারও আগে বদরীনারায়ণের কাছে জোশীমঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখাড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখাড়া ‘কাঠঘর’ নামে অবিহিত হত। পরে (সম্ভবত সতেরো শতকের গোড়ার দিকে) এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করান, যেটি কালীবাড়ী মন্দির নামেও পরিচিত ছিল।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।