ঋদি হক: ঢাকা
বাংলাদেশ-ভারত বিদেশসচিব পর্যায়ে বৈঠক বসবে বুধবার। করোনা মহামারি (Corona Pandemic) মোকাবিলায় সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয় স্থান পাবে ওই বৈঠকে। উঠতে পারে রোহিঙ্গা বিষয়ও। বাংলাদেশের (Bangladesh) বিদেশসচিব (foreign secretary) মাসুদ বিন মোমেন (Masud Bin Momen) এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ঝটিকা সফরে ঢাকায় আসেন ভারতের (India) বিদেশসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা (Harsh Vardhan Shringla)। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক হবে শ্রিংলার।
প্রসঙ্গ: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
মাসুদ বিন মোমেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “নন-ইস্যুগুলো অতিরঞ্জিত আকারে প্রকাশ হচ্ছে। যার কারণে পাবলিক পারসেপশনে একটি প্রভাবও পড়ছে। এগুলো আমরা নিশ্চয় দেখব। কারণ, এটা ঠিক না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনারের দেখা করার বিষয় নিয়ে ভিত্তিহীন একটি খবর ছাপা হল। প্রধানমন্ত্রী এই করোনা পরিস্থিতিতে কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। বিদেশিদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।”
বিদেশসচিব জানান, সেপ্টেম্বর থেকে বিষয়টি পুনরায় স্বাভাবিক করার জন্য সোমবারে একটি নির্দেশনা তিনি পেয়েছেন। যত দেশের রাষ্ট্রদূতের দেখা করার অনুরোধ জমে রয়েছে তাঁদের সবার সঙ্গে আস্তে আস্তে প্রধানমন্ত্রী দেখা করবেন।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই সময়ের মধ্যে সেপ্টেম্বরে ভারতীয় হাইকমিশনারের যাওয়ার সময় চলে আসবে। বিদায়ী সাক্ষাৎ তাঁরা চেয়েছেন এবং সেটি হয়ে যাবে। এর সঙ্গে অন্য যাঁদের অনুরোধ জমে আছে তাঁরাও দেখা পাবেন। অর্থাৎ পুরো বিষয়টি সেপ্টেম্বরের পরে স্বাভাবিক হবে।
আরও পড়ুন: আকস্মিক ঢাকা সফরে ভারতের বিদেশসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা
মাসুদ বলেন, রাষ্ট্রদূত দেখা করতে পারছেন না এটি একটি নন-ইস্যু এবং এ বিষয়টিকে বড়ো আকার দেওয়া হয়েছে। এগুলো একদম আমলে নেওয়া ঠিক হবে না। প্রেস স্বাধীন এবং তারা তাদের মতো লিখছে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে কিছু নিউজপোর্টাল, বিশেষ করে ভারতের কিছু পোর্টাল বানানো খবর ছাপাচ্ছে। সেখানে কিছু ছবি ছাপা হয়েছে যেগুলো ফটোশপ করা।
এই পোর্টালগুলো কিছু ব্যক্তিবিশেষকে টার্গেট করে সংবাদ ছাপাচ্ছে, এই অভিযোগ করে বিদেশসচিব বলেন, “আমরা তাদের উৎসাহ দিতে পারি যাতে এ ধরনের অবান্তর বিষয় না লেখেন। সেটি আমাদের দেশে হোক বা তাদের দেশে হোক। দুই সচিবের বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে।” মাসুদের কথায়, “আমরা চাইছি তাদের কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টি দেখে। কারণ, আমরা চাইব দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে এ ধরনের ডিসট্র্যাকশন যেন না হয়।”
প্রসঙ্গ: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ এবং এটি যেন কোনো ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অনেক ভালো কাজ হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্ট, ট্রেনে কার্গো চলাচল হচ্ছে। প্রচুর বাংলাদেশি আটকে ছিল। তাদের ফেরত আনা হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে প্রকল্পগুলোও বসে নেই।
উপমহাদেশে একটি অস্থিরতা আছে এবং এটি আন্তর্জাতিক অস্থিরতারই একটি অংশ, এ কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চিনের বিরোধ বা ভারতের সঙ্গে চিনের সম্প্রতি ঝামেলা হল। এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এই বিষয়গুলো বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো ডিসট্র্যাকশন হিসেবে কাজ করবে না, এটি তাঁরা চান। ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক এবং চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব রয়েছে। একটার সঙ্গে আরেকটাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।
প্রসঙ্গ: ভারত-বাংলাদেশ-চিন
বিদেশ সচিব বলেন, ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে চিনের সম্পর্ককে তুলনা করা ঠিক হবে না। অঙ্কের হিসাবে হয়তো বলবে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বেশি হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে কম হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ ভাবে দেখা ঠিক হবে না। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বিভিন্নমুখী এবং এখানে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সফর হতে পারে এবং অতীতেও হয়েছে। কোভিড না থাকলে এবং সময়টা স্বাভাবিক হলে ভারতে তাঁদের একাধিকবার যাওয়া হত। করোনার কারণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু ইস্যুগুলো থেমে থাকছে না। কোভিড একটি বড়ো ইস্যু এবং এখানে সহযোগিতার বিষয় আছে।
প্রসঙ্গ: কোভিড-১৯ টিকা
চিন, রাশিয়া, আমেরিকা ও অক্সফোর্ড কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে গবেষণা করছে এবং এর মধ্যে অক্সফোর্ডের বিষয়টি দেখছে ভারতীয়রা এবং তারা ট্রায়াল করছে। ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। এমনও হতে পারে আমাদের দেশে এই টিকা বানানো যেতে পারে। আমাদের বিশেষজ্ঞ আছে।
বাণিজ্যের বিষয়ে সীমান্ত রাজ্যগুলো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দিয়ে রেখেছে, এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কোনো কিছু নিষেধ করেনি এবং কেন্দ্র থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বিষয়টি সমাধান করার।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।