বাংলাদেশ
‘মারাদোনার ক্রীড়া নৈপুণ্য যুগে যুগে ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা জোগাবে’, শোকপ্রকাশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মারাদোনা, বললেন শেখ হাসিনা।

ঋদি হক, ঢাকা: ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনার চিরবিদায়ের খবর গোটা বিশ্বে আছড়ে পড়তেই ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। যা থেকে বাদ যাননি রাষ্ট্রপ্রধানরাও।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুটবল কিংবদন্তি মারাদোনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, “ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। যুগে যুগে তাঁর ক্রীড়া নৈপুণ্য ভবিষ্যৎ ফুটবল খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে”।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ফুটবল মহানায়কের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
দিয়েগো মারাদোনাকে শুধু আর্জেন্টিনা নয়, বিশ্বফুটবল জগতের নক্ষত্র আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের সুপরিচিত ক্রীড়া সংগঠক উদয় হাকিম।
তিনি বলেন, “যত দিন বাঁচব তত দিন আমার হৃদয়ে তথা ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ২৫ নভেম্বর দিনটি। বহু দিন, মাস, বছর এবং যুগ পেরিয়ে এক-একটি ইতিহাস সৃষ্টি হয়। সেটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হতে পারে। ভারতবর্ষের দিকে যদি চোখ রাখি তা হলেও বহু কিংবদন্তি মুখ ভেসে উঠবে। তেমনই বিশ্বফুটবলে মারাদোনার মুখ ভেসে ওঠাটা স্বাভাবিক। যা শুধু আর্জেন্টিনা নয়, সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে মহারাজের বিদায়”।

বিশ্বের খুব কমসংখ্যক খেলার মাঠ রয়েছে যেখানে উদয় হাকিম পা রাখেননি। পরিব্রাজকের মতো মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে স্পনসর করেছে তাঁদের প্রতিষ্ঠান। আর মুখপাত্র হিসেবে যেতে হয়েছে তাঁকে। তা ছাড়া স্থানীয় ভাবে নিজেদের দলও রয়েছে। তিনি বলেন, “২৫ নভেম্বর কালো হরফের ইতিহাস লেখার দিন”।
প্রসঙ্গত, বুধবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন মারাদোনা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। সপ্তাহ দুয়েক আগেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয় মারাদোনার। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। সেটি পরিষ্কার করতেই অস্ত্রোপচার করা হয়।
ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিবেদন পড়তে পারেন এখানে ক্লিক করে: মারাদোনা
বাংলাদেশ
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারকে ঘিরে রেলের উন্নয়নযজ্ঞ
কক্সবাজারকে শতভাগ পর্যটনবান্ধব করতে সরকারের তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঋদি হক: ঢাকা
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকতের গর্বিত মালিক বাংলাদেশ। প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটক। তাঁরা মুগ্ধ হন এবং কক্সবাজার ও আশপাশের দ্রষ্টব্য স্থানের নিসর্গ উপভোগ করেন। এই কক্সবাজারকে শতভাগ পর্যটনবান্ধব করতে সরকারের তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আগামী বছর থেকেই চালু হতে যাচ্ছে রেলপরিষেবা। জোরকদমে উন্নয়ন কাজ চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দরেরও। রেলপথ চালু হলে ভ্রমণপিপাসুরা তুলনামূলক ভাবে কম খরচে এবং দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছোতে পারবেন। কক্সবাজারকে পর্যটনবান্ধব করে তোলার জন্যই সরকার রেলপথ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে।
কক্সবাজারে আইকনিক রেল স্টেশনভবনের শিলান্যাস করে বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রকের মন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের কাজ সম্পন্ন হবে এবং ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ট্রেন চালু হবে। রেলপথমন্ত্রীর এই নজিরগড়া ঘোষণায় পর্যটক তথা ভ্রমণপিপাসু মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। এ বার অন্তত কোনো প্রকার ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই ঢাকা থেকে একঘুমে কক্সবাজার পৌঁছে যাওয়া যাবে। আর ট্রেন থেকে নেমে আড়মোড়া ভেঙে এগিয়ে যেতেই সুবিশাল সমুদ্রসৈকত।
রেলপথমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এখন থেকেই দিন গোনা শুরু করে দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের মানুষ এখন আর এই সব ঘোষণাযকে স্বপ্ন মনে করেন না। কারণ শেখ হাসিনার হাত ধরে উত্তাল পদ্মায় যখন সেতু গড়ে ওঠেছে, তখন আর বাঙালির আশঙ্কা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। এখন দৃপ্ত গতিতে সামনে এগিয়ে চলা।

বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রীকে বলা হয়ে থাকে ‘রেলের উন্নয়ন কর্তা’। কারণ, তিনি কোনো অপরাধ দুর্নীতির রেয়াত করেন না। কাজ ছাড়া কোনো তোষামোদকারীকে কাছ ঘেঁষতে দেওয়া তো দূরের কথা ত্রিসীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেন। তাঁর সাফ কথা, “তোষামোদ নয়, সঠিক দায়িত্ব পালন করুন। এখন থেকে রেল ২৪ ঘন্টা জেগে আছে এবং জেগে থাকবে। মানুষের কল্যাণে রেলকে এগিয়ে নিতে হবে। এটাই মূলমন্ত্র ধারণ করে কাজ করতে হবে।”
মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বললেন, “প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হলেও ছয় মাস হাতে রেখেই ঘোষণা করছি আগামী বছরেই মানুষ ট্রেনে করে কক্সবাজারে পৌঁছোতে পারবেন।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহেলিত রেল ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে যে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর জন্য আলাদা একটি মন্ত্রক করে দিয়েছেন। রেলে এখন অনেক প্রকল্প চলমান রয়েছে। মূলত ২০১১ সালের পর থেকেই রেলকে পুনর্গঠিত করার কাজ শুরু করেছেন শেখ হাসিনা। সরকারের দশটি মেগা প্রকল্পের মধ্যে দু’টি হল বাংলাদেশ রেলের – যার একটি হল দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।
প্রকল্প সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে কক্সবাজার থেকে রামু হয়ে মায়ানমারের নিকটবর্তী গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নিয়ে যাওয়া হবে সম্প্রসারিত হবে এবং তা চিন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে পর্যটনের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। দেশের অগ্রগতিতে পর্যটন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সে কথা মনে রেখেই এই প্রকল্পটি পরিকল্পনা মাফিক করা হচ্ছে।
২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনভবন নির্মিত হচ্ছে। ৬ তলা বিশিষ্ট এ ভবনে সকল সুবিধা থাকবে। আইকনিক স্টেশনভবনটি হবে আন্তর্জাতিক মানের। সে কথা জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী বলেন, এখানে দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক আসবেন। আগত পর্যটকরা যাতে স্বস্তিবোধ করেন, তার জন্য সকল সুবিধা থাকবে।
সাংসদ জাফর আলম, সাইমুম সরওয়ার কমল, কানিজ ফাতেমা আহমেদ ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি এবং রেলপথ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সদস্য, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ, রেলপথ মন্ত্রকের সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা শিলান্যাস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশে রেলের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান।
আরও পড়ুন: বার্ড ফ্লু: ভারতের ডিম, মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ করল বাংলাদেশ
দেশ
বার্ড ফ্লু: ভারতের ডিম, মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ করল বাংলাদেশ
চোরাপথেও যাতে এ সব প্রাণী দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রশাসনকে সতর্ক করে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: ভারতের ১০টি রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (বার্ড ফ্লু) ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ যাতে ছড়াতে না পারে সেই কারণে ভারতের সব ধরনের হাঁস-মুরগি, ডিম ও বাচ্চা আমদানি অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের সরকার। বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রক বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চোরাপথেও যাতে এ সব প্রাণী দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রশাসনকে সতর্ক করে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রকের সচিব রওনক মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো জেলায় এখনও পর্যন্ত বার্ড ফ্লু-র সংক্রমণ দেখা যায়নি। এখানে খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারতের যে যে স্থানে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে, সেই সব জায়গা বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া ভারতও ওই সব এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে।
প্রাণীসম্পদ মন্ত্রকের সচিব বুলেন, মাঠকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনো প্রকার উপসর্গ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পূর্বের অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। আতঙ্কিত হয়ে হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ না করতে ভোক্তাদের অনুরোধ করেন এই আধিকারিক। তবে ভারতে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার বার্তা পাওয়ার পরই বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের তরফে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাঁস-মুরগি-ডিম আমদানি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে মঙ্গলবারই আলাদা আলাদা করে তিনটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও বিভাগে পাঠানোর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রকের তরফে।
ভারত থেকে কোনো ভাবেই যাতে মুরগির বাচ্চা, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিম আমদানি করা না হয় সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রককে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি অনুপ্রবেশ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমুদ্র, নৌ এবং স্থলবন্দর দিয়ে মুরগির বাচ্চা, প্যারেন্টস্টক, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিমের অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট বন্দর র্কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রককে অনুরোধ জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতেই মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের সম্ভাবনা
দেশ
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতেই মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের সম্ভাবনা
২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুর কাজ শেষ হয়েছে, এখন কেবল উদ্বোধনের পালা। সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন রামগড় ও সাবরুমবাসী।

ঋদি হক, রামগড়, খাগড়াছড়ি থেকে:
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ পালনে ব্যাপক আয়োজন চলছে বাংলাদেশে। সঙ্গে রয়েছে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে এবং পরিবেশ অনুকূল থাকলে বাংলাদেশের মহোৎসবে শামিল হওয়ার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিশ্বনেতাদের।
মুজিববর্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নানামুখী প্রকল্প ও কানেক্টিভিটি চলমান রয়েছে। দেশটির বিজয় দিবসের রেশ ধরে ১৭ ডিসেম্বর শুরু হয় চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পণ্যবাহী রেলচলাচল। ৫৫ বছর পর। আসছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-শিলিগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে একের পর এক রেলপথ, জলপথ, সড়কপথ চালু হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ফেণী নদীর ওপরে নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী-১ সেতুটির উদ্বোধনের ঘণ্টায় বেজে যেতে পারে মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তীতেই।
মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ
মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ। এখন রংতুলির শেষ আঁচড় পড়ছে। বাংলাদেশের রামগড় পৌরসভার মহামুনি প্রান্ত থেকে ত্রিপুরার সাব্রুমের আনন্দপাড়া যেন আগলে রেখেছে মৈত্রী সেতুকে। অর্থনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে এই সেতুটির মাধ্যমে লালসবুজ ও তেরঙা পতাকার সম্মিলন ঘটতে যাচ্ছে মুজিববর্ষেই।
বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় তথা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন উৎসবেই বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ দ্বারোদঘাটনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত মেলে। মুজিববর্ষেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কানেক্টিভিটি নেটওয়ার্কের আওতায় চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। চালু হয়েছে বাংলাদেশের দাউদকান্দি-ত্রিপুরার সোনামুড়া জলপথ। উত্তরের পথে মেঘনার বুক চিরে অসমের করিমগঞ্জে লালসবুজ-গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে পণ্যবাহী জলযান গিয়েছে। চলতি বছরেই আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের কাজ সম্পন্ন হবে। জোরকদমে এগিয়ে চলছে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেপথের কাজ। যেটি সরাসরি অসমের মহিষাসনের সঙ্গে যুক্ত হবে।
ভারত বাংলাদেশের পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে এ বার সেতুবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে রামগড়-সাবরুম মৈত্রী সেতু। বাংলাদেশের পাঁজরঘেষা উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যটির নাম ত্রিপুরা। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা রাজ্যটির সঙ্গে চলতি বছরেই চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। উভয় দেশের প্রাধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সেতুর উদ্বোধন করবেন। এ নিয়ে ঊভয়দেশের উচ্চ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গিয়েছে।
রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কী বলেন
রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারী ‘খবর অনলাইন’কে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব থাকায় পণ্যবাহী লরি ত্রিপুরায় পৌঁছাতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টা। এই সাশ্রয়ী পণ্যপরিবহনের সুযোগ ভোগ করবে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সাধারণ বাসিন্দা। পাশাপাশি দু’ দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রসারও ঘটবে। সুগম হবে দু’দেশের আর্থসামাজিক সম্পর্ক। সেতুটি ঘিরে এরই মধ্যে ত্রিপুরার সাবরুম এলাকায় গড়ে ওঠছে অর্থনৈতিক জোন। সেতুটির ৮০ শতাংশ পড়েছে বাংলাদেশ প্রান্তে।
বিশ্বপ্রদীপবাবু আরও জানালেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম গড়ে উঠতে যাচ্ছে অর্থনৈতিক হাব হিসেবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, বে-টার্মিনাল, মেরিন ড্রাইভ মহাসড়ক, এ সব গড়ে ওঠার সুবিধাভোগী হবে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো। কারণ এখান থেকে দিনে দিনে পণ্য পরিবাহিত হতে পারবে রাজ্যগুলোতে। তাতে ভারতের পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক সুবিধা হবে। পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর সিঙ্গাপুর থেকে কাছে হওয়ায় তা ব্যবহার করতে পারবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্য রাজ্যগুলো। অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে শেখ হাসিনার হাত ধরেই।
বিশ্বপ্রদীপবাবু জানান, পদ্মাসেতু হওয়ার ফলে বাংলাদেশের মংলা বন্দর ব্যবহার করে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্যপরিবহনের ক্ষেত্র এখন অনেক সহজ হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা না হলে বাংলাদেশে কোনো দিন পদ্মাসেতু হত বলে মনে হয় না।
রামগড় পৌরসভার মেয়র কী বলেন
রামগড় পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, রামগড়ে মৈত্রীসেতু ঘিরে এখানে গড়ে উঠছে স্থলবন্দর। এতে করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছোঁয়া লাগবে পাহাড়ে। আয় বাড়বে পৌরসভারও। কানেক্টিভিটি হচ্ছে সভ্যতার প্রতীক এ কথা উল্লেখ মেয়র বলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করলে ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্যপরিবহন সাশ্রয়ী হবে। সব মিলিয়ে আগামী দিনে রামগড়কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যে পাখনা মেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য রামগড়বাসীর তরফে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানান।
সরেজমিন রামগড় ঘুরে দেখা গেল সেতুটি চালুর অপেক্ষায় দিন গুণছেন রামগড় তথা পাশ্ববর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ। সেতুকে ঘিরে সকলেই আবেগাপ্লুত। এরই মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাপান উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) প্রতিনিধি দল মৈত্রী সেতুসহ সড়কে নির্মীয়মাণ সেতু-কালভার্ট পরিদর্শন করেন। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর পরিদর্শন করে গেছেন ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মো. জাবেদ হোসেন।
সেতু নির্মাণের দায়িত্বে এনএইচআইডিসিএল
ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ৮২.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮০ মিটার প্রস্থের আন্তর্জাতিক মানের মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১২টি পিলার সংবলিত সেতুটির বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি পিলার। যাতে স্প্যান রয়েছে ১১টি। এর বাংলাদেশ অংশে সাতটি ও ভারত অংশে চারটি। নদীর অংশে ৮০ মিটারের স্প্যান এবং নদীর দু’পাড়ের ৫০ মিটারের দুটিসহ মোট ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ তিনটি স্প্যানই হচ্ছে সেতুর মেন স্প্যান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধা, যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর করা এবং আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির শিলান্যাস করেন। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুর কাজ শেষ হয়েছে, এখন কেবল উদ্বোধনের পালা। সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন রামগড় ও সাবরুমবাসী।
-
রাজ্য2 days ago
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে সিপিএমের লাইনেই খেলছেন শুভেন্দু অধিকারী
-
দেশ3 days ago
নবম দফার বৈঠকেও কাটল না জট, ফের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কেন্দ্র
-
প্রযুক্তি3 days ago
হোয়াটসঅ্যাপে এ ভাবে সেটিং করলে আপনার আলাপচারিতা কেউ দেখতে পাবে না এবং তথ্যও থাকবে নিরাপদে
-
শরীরস্বাস্থ্য3 days ago
কেন খাবেন মেথি?