ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দেশের পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত রয়েছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ সারির ছাত্রনেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দেখতে চান। মঙ্গলবার প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম একটি ভিডিয়োবার্তায় জানান, ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা গঠন করতে চাইছেন তাঁরা। নাহিদ জানান, ইউনুসের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে এবং তিনি ছাত্রদের আহ্বানে এবং বাংলাদেশকে রক্ষায় দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন।
সোমবারই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা পড়ুয়ারা জানিয়ে দেন, সেনা-সমর্থিত বা রাষ্ট্রপতি শাসিত কোনও সরকারকে তাঁরা সমর্থন করবেন না। প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া অন্য কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন।
‘আরেকটি শেখ হাসিনার জন্ম না হয়’, জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গে বলল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউনুস। তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে তার তৈরি মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাংকের জন্য। এই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইউনুস বাংলাদেশের লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে টেনে তুলেছিলেন। যদিও, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বরাবরই ইউনুসের সমালোচনা করেছেন। এমনকি, তাকে গরিবের রক্ত শোষণকারী বলেও মন্তব্য করেছিলেন।
ইউনুসের সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। জানুয়ারি মাসে ঢাকার আদালত তাকে ছ’মাসের জেলের সাজা শুনিয়েছিল। তবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে ইউনুসের প্রভাব এবং গুরুত্ব বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথম আলো জানায়, সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি টেলিভিশন কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটানো হলো। কেবল ব্যক্তিকে সরালেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য দিয়ে এ ধরনের ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়, সেই কাঠামোরও বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে। এই সরকার হবে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের প্রস্তাবিত এবং এতে নাগরিক সমাজ-সহ নানা পেশার মানুষ ও বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। নাহিদ বলেন, “অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিক দ্বারা সমর্থিত বা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আর কোনও ধরনের সরকারকে আমরা সমর্থন করব না। সেটা হতে পারে সেনা-সমর্থিত সরকার বা জরুরি অবস্থা দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার—এ ধরনের কোনও সরকারকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না।”