ঢাকা: আজ সোমবার ছাত্র-জনতার মিলিত আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়। আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা আজ রাত আটায় কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারায় সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্র-জনতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থান করা হবে। সেখানে ফ্যাসিবাদীদের দোসর–সমর্থক কেউ এই জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশে যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক বা আরেকটি শেখ হাসিনার জন্ম না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, “আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় যেদিন এক দফার ঘোষণা দেওয়া হয়, সেদিনই আমরা বিজয় সুনিশ্চিত ভেবেছিলাম। যত দিন আমাদের সব দাবি পূরণ না হবে, তত দিন আমরা রাজপথে থাকব।”
পদত্যাগ করে বোনকে নিয়ে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তদারকি সরকার গঠনের প্রস্তাব
আসিফ মাহমুদ আরও জানান, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই গত ১৬ বছরে যত রাজনৈতিক নেতা–কর্মীকে জেলবন্দি করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।”
সমন্বয়কেরা জানান, তাঁরা দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চান এবং সবকিছুর পুনর্গঠন করবেন। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দিতে হবে।
আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম আন্দোলনের সফলতার জন্য বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, “আমরা হয়তো শুরু করেছিলাম, কিন্তু সাধারণ মানুষের উপস্থিতি না হলে এটা সম্ভব হতো না।”
আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের ঘটনাগুলো উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, “সকালেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চাঁনখারপুল এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে। সমন্বয়কদের দিকেও গুলি ছোড়া হয়েছে, ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন বলে তাঁরা এখানে আসতে পেরেছেন।”
উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ যেন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ভাঙচুর ও লুটপাট করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থাকতে হবে চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত। রাষ্ট্রীয় সম্পদ জনগণের, তা রক্ষা করতে হবে। কেউ যেন লুটপাটের সুযোগ না পায়।”
সহসমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “এই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের খেলা চলছে, এর সঙ্গে এই দেশের ছাত্রজনতার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের ছাত্র জনতা শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় উদযাপন করেছে। প্রতিটি জায়গায় সব ধর্মবর্ণের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রতিটি জায়গায় অবস্থান নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে এই পরাজিত শক্তিটি আরেকবার এই দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতে না পারে।’’