ঋদি হক: ঢাকা
শান্তি-সম্প্রীতির ধর্ম ইসলাম কখনও অন্য ধর্মের ওপর আঘাত সমর্থন করে না। হযরত মোহাম্মদ ‘মদীনা সনদ’-এর মাধ্যমে সকল ধর্মের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। এটাই ইসলামের আদর্শ। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হাজার বছরের গৌরবময় ঐতিহ্য। অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান জানালে নিজের ধর্মের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। কুমিল্লার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে সচেষ্ট কোনো কুচক্রী মহলের সুপরিকল্পিত ফাঁদ। বাংলাদেশ যখন অব্যাহত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই এমন ঘটনার সৃষ্টি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজামণ্ডপে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় এই হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাঙালি হিন্দুদের সব চেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা চলার মধ্যেই বুধবার সকালে কুমিল্লায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারা তোপের মুখে পড়ে, বাঁধে সংঘর্ষ। মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা, কক্সবাজারের পেকুয়া, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জেও।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর একাধিক মণ্ডপে দুষ্কৃতীদের আক্রমণ এবং মন্দিরে চড়াও হওয়ার ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে তিন জনের। জখম অন্তত ৬০। শুক্রবার বিকালে এক দল দুষ্কৃতী চট্টগ্রাম শহরে জে এম সেন হলের পুজো মণ্ডপের উপরে হামলা করতে আসে। পুলিশ এবং স্থানীয় মানুষ প্রতিরোধ করে।
বাংলাদেশের এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।
একটি স্বার্থান্বেষী মহল অপতৎপরতা চালিয়েও বাংলাদেশের সম্প্রীতির জোয়ার রুখে দিতে পারেনি। জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীতে এমন চিত্রই দেখা যায়। শুক্রবার বিজয়া দশমীতে সিঁদুরখেলা নিষিদ্ধ করার পরও ছিল বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছাস। অনেকেই নিজেদের সিঁদুরে রাঙিয়ে তোলেন। বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকে জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

কখনোই নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না: হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কুমিল্লার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেখানে যেখানে যারাই এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের খুঁজে বের করা হবে।
হাসিনা বলেন, “আমরা অতীতেও করেছি এবং ভবিষ্যতে আমরা করতে পারব এবং যথাযথ শাস্তি তাদের দিতে হবে, এমন শাস্তি যেন ভবিষ্যতে আর কেউ সাহস না পায়। সেটাই আমরা চাই।”
কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “খুব ব্যাপক ভাবে তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্য আমরা পাচ্ছি এবং অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের আমরা খুঁজে বের করবই। এটা আমরা করতে পারব। এখন প্রযুক্তির যুগ এটা বের করা যাবে এবং সে যে-ই হোক না কেন, যে ধর্মেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমরা তা করেছি এবং করব।”
কিছু মানুষের মধ্যে ‘দুষ্টু বুদ্ধির ব্যাপার আছে’, এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস খুব সুন্দর ভাবে চলছে, সেটা নষ্ট করা, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সেই যাত্রা ব্যাহত করা এবং দেশের ভেতরে সমস্যার সৃষ্টি করা এ ধরনের লোকের কাজ।
হাসিনা বলেন, যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না, রাজনীতি নেই, কোনো আদর্শ নেই, আসলে তারাই এই ধরনের কাজ করে। এটা অনেকটা তাদের এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যদি সকলে সচেতন থাকে, অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা কখনোই নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না। আমরা আপনাদের সংখ্যালঘু নয়, আপনজন হিসেবে মানি। আমাদের এই দেশের নাগরিক হিসেবে মানি। সমঅধিকারে আপনারা বসবাস করবেন, আপনারা সমঅধিকার ভোগ করবেন, সমঅধিকার নিয়ে আপনাদের ধর্ম পালন করবেন, উৎসব করবেন – সেটাই আমরা চাই। আমি চাই যে আমাদের দেশের মানুষ সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করুন এবং সব ধর্মের মানুষই তার ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করুন।”
বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য স্মরণ হাসিনার
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারির এক বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ”এ দেশে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, আপনারা সুখে বাস করবেন, পাশাপাশি বাস করবেন, ভাই ভাই হিসেবে বাস করবেন, কোনোমতে যেন সাম্প্রদায়িকতা বাংলার মাটিতে আর না আসে।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটে, এই মন্তব্য করে হাসিনা বলেন, সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সব সময় জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলে – এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। অর্থাৎ ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার এবং বাংলাদেশে কিন্তু এটা সব সময় ছিল, আছে। প্রত্যেকটা উৎসবে সবাই কিন্তু এক সঙ্গে শামিল হয়ে আনন্দ উপভোগ করত। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু দুষ্টু চক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরের এই চেতনাটাকে নষ্ট করতে চায় -এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

ধৈর্য ধরার আহ্বান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
এ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনার পেছনের কারণ খোঁজা হচ্ছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত খুব শিগগিরই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এ ঘটনার কারণে যাঁরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাঁদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ডকু-ড্রামা ‘দুটি যুদ্ধের একটি গল্প’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পবিত্র কোরআন আমরা মুসলমানরা হৃদয়ে ধারণ করি। কোরআনের অবমাননা যে ভাবে দেখানো হয়েছে আমি বিশ্বাস করি সে রকম ঘটেনি।”
এ ঘটনার পর যারা অহেতুক ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়তে পারেন
বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ: শেখ হাসিনা
সকল সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ পৌঁছোবে স্বপ্নের ঠিকানায়: তথ্যমন্ত্রী
মাদক মামলায় স্থায়ী জামিন পেলেন নায়িকা পরীমণি
পাবনার রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে বসল প্রথম চুল্লি
ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশ-রাষ্ট্রপুঞ্জ মউ স্বাক্ষর
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।