ঋদি হক: চট্টগ্রাম থেকে
উত্তর-পূর্ব ভারতের (North East India) ত্রিপুরার (Tripura) বিলোনিয়া থেকে ফেনী রেলপথ (Belonia-Feni Rail Connectivity) নির্মাণে হাত লাগাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। মাত্র ২৭ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি হলেই সরাসরি পণ্যবাহী ট্রেন যাতায়াত শুরু করবে উত্তর-পূর্ব ভারতে। তার ফলে সড়ক পথের চেয়ে তুলনায় কম খরচে পণ্য পরিবাহিত হবে।
তা ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে রামগড়-সাব্রুম মৈত্রী সেতু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। তাতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার উত্তরপূর্ব প্রান্তিক রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠাতে পারবে সাশ্রয়ী মূল্যে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ তথা বিআইডব্লিউটিএ-র (BIWTA) সূত্র বলছে, অচিরেই দাউদকান্দি-সোনামুড়া (Daudkandi-Sonamura) জলপথটিতে খনন কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের আর্থিক বাজেট পাশ হয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরটি মূলত প্রাকৃতিক। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে এর স্থিতিশীলতা এসেছে। এর আগে অনেক সুবিধাভোগী বন্দরটি ব্যবহার করলেও উন্নয়নের কাজে তেমন একটা হাত লাগায়নি।
তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেষ্টায় বন্দরের পরিস্থিতি পালটাতে শুরু করে। শেখ হাসিনার হাত ধরে এই বন্দরটি অর্থনৈতিক ভাবে মজবুত হয় এবং ক্রমশ আলোচনায় উঠে আসে। তিনিই ধারাবাহিক দেশ পরিচালনার পাশাপাশি কানেক্টিভিটির ওপর জোর দিয়েছেন। বিশ্বায়নের পথে হাঁটতে হলে কানেক্টিভিটি তথা সংযোগসাধনের বিকল্প নেই। সংযোগসাধনই সভ্যতার প্রতীক।

এরই মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এবং চট্টগ্রাম নগর-সংলগ্ন সাগর উপকূলে নির্মিত হচ্ছে বে-টার্মিনাল (Chattagram Bay Terminal), যার অবস্থান চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি। এই দু’টো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে কেন্দ্র করে সড়ক ও রেলপথ উন্নয়নের কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান তথা প্রসাশক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাগরতীর বরাবর বিশাল চওড়া কংক্রিটের দৃষ্টিনন্দন সড়কটি প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। চার লেনের এই সড়কটি যুক্ত হবে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে।
তিনি আরও জানালেন, চট্টগ্রাম থেকে রেলপথ যুক্ত হবে খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু পর্যন্ত, যার দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। রামগড় সেতু প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের বারইয়ারহাট পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত করার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
মেরিনড্রাইভ থেকে সীতাকুণ্ডর আংশিক পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমপক্ষে ৩০/৪০ মেট্রিক টন পণ্যবাহী বড়ো আকারের ট্রেলর ত্রিপুরা-সহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে যাতায়াত করবে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই সড়ক প্রশস্ত করার কাজে হাত লাগানো হয়েছে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

রামগড়-সাব্রুম মৈত্রী সেতু এবং ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথের ওপর জোর দিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান তথা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, অতি দ্রুত এই কাজগুলো তাঁরা সম্পন্ন করতে চান। তাঁর ভাষায়, “‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে…’। আমরা সব কিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের চাওয়া কেবল উন্নয়ন। আর সুবিধা না দিলে তো কেউ আমাদের এখানে আসবেন না।”
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন বিশাল এলাকা নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। পতেঙ্গায় সাগরে দেখা গেল শ’ শ’ পণ্যবাহী জাহাজ খালাসের অপেক্ষায়। বন্দর থেকে নির্দেশনা এলেই এ সব জাহাজে পাইলট আসবে এবং জাহাজ নিয়ে বন্দরের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছোবে।

মূলত ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ এবং রামগড়-সাব্রুম মৈত্রী সেতুর কাজ শুরু হয়ে যাবে ২০২১ সালে। তখন দিনে দিনে পণ্যবাহী ট্রেলর ও ট্রেন পৌঁছে যাবে ত্রিপুরা, অসম ও আশপাশের রাজ্যগুলোয়।
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।