খবর অনলাইন ডেস্ক : পরিবেশ নিয়ে রাজ্য সরকারের খুব একটা হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। না হলে, এক সপ্তাহে দু’ দু’বার পরিবেশ আদালতকে রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে হত না। কিছু দিন আগেই আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ে একটি মামলায় রাজ্যকে তুলোধোনা করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চল বেঞ্চ। আদালত বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে ‘জঙ্গল রাজ’ চলছে। এ বার সুন্দরবনের পরিবেশ নিয়ে আরেকটি মামলায় আদালত বলেছে, এ রাজ্যে পরিবেশ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোই আদত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আদিগঙ্গা অধঃপাতে যাওয়া নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন পরিবেশ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী সুভাষ দত্ত। তারই সূত্র ধরে আদিগঙ্গার ধারে থাকা সমস্ত খাটাল উচ্ছেদ করতে বলেছিল পরিবেশ আদালত। এ ছাড়াও আদিগঙ্গার ধারে অস্থায়ী শৌচাগার ও নিকাশিনালার মুখ বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে (কেএমসি) যথাযথ নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। গত ২০ জানুয়ারি কেএমসি’র কমিশনার একটি রিপোর্ট পেশ করে বলেন, আদিগঙ্গার দূষণ ঠেকাতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট পাওয়ার পর আদালত গোটা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে আসতে সুভাষ দত্তকে নির্দেশ দেন।
সুভাষবাবু আদালতকে জানান, তিনি দু’বার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এক বার ব্যক্তিগত ভাবে, আর এক বার পরিবেশ আদালতের নির্দেশমতো অফিসারদের নিয়ে। আদিগঙ্গার অবস্থা কেমন সে সংক্রান্ত ৮০টি ছবি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ওই সব ছবিতে দেখা যাচ্ছে, খাটাল অবাধে বিরাজমান। অস্থায়ী শৌচাগার যথারীতি রয়েছে। নদীর তীরে নানা ধরনের বর্জ্য জমা করা হচ্ছে। নিকাশির নোংরা জল এসে পড়ছে আদিগঙ্গায়।
শুনেই খাপ্পা আদালত। বিচারপতি প্রতাপ রায় প্রশ্ন তোলেন, “গরু-মোষেরও কি ভোটাধিকার রয়েছে ?” তাঁর মন্তব্য, “এ কি পাগলের রাজত্ব ? যেটা করা প্রয়োজন, সেটা করা হচ্ছে না। যেটা প্রয়োজন নয়, সেটা করা হচ্ছে”।
অপরিশোধিত নিকাশি আবর্জনা আদিগঙ্গায় পড়া রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে আদালত জানতে চাইলে, কেএমসি’র তরফে বলা হয়, নিকাশি আবর্জনা পরিশোধন প্রকল্প গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে অর্থের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পরিবেশ আদালতের বেঞ্চ বলেছে, “মনে হচ্ছে রাজ্যে জঙ্গল রাজ চলছে। টাকার জন্য অপেক্ষা না করে থেকে কেএমসি’র কি উচিত নয় নিকাশি আবর্জনা আদিগঙ্গায় পড়া বন্ধ করা ? ছ’ মাসের মধ্যে কেএমসিকে এই কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। যদি তা না হয়, তা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হব।”
আদিগঙ্গার পর সুন্দরবন। কী ভাবে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনে, সেই সংক্রান্ত ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র একটি খবর পড়ে পরিবেশ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সুন্দরবনের অবস্থা সরেজমিনে দেখে এসে সুভাষ দত্তকে একটি রিপোর্ট দিতে বলে। অবৈধ ঘোষণা হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে সুন্দরবনে একটি দোতলা বাড়ি বেআইনি ভাবে তৈরি হচ্ছে তা আদালতের গোচরে আনেন সুভাষবাবু। এ ছাড়াও সুন্দরবনের বাফার জোনে একটি ক্রুজ চালানোর বিষয়টিও পরিবেশ আদালতের গোচরে আনা হয়। ক্রুজটি একটি চারতলা ভাসমান হোটেল। রাজ্য সরকারের মদতে একটি বেসরকারি সংস্থা এই ক্রুজটি চালাচ্ছে। সুভাষবাবু আদালতে জানান, ক্রুজটি চালানোর ব্যাপারে পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও ছাড়পত্র নেই। ক্রুজটি চালানোর ব্যাপারে পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও ছাড়পত্র কেন নেই তা ব্যাখ্যা করতে পরিবেশ আদালত রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। তা ছাড়াও আদালত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছে, কত দিন হল ক্রুজটিকে সুন্দরবন অঞ্চলে চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের পরিবেশ নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও ভাবনাচিন্তা না থাকায় হতাশ পরিবেশ আদালত মন্তব্য করেছে, “পরিবেশ সংক্রান্ত যে সব বিধিনিয়ম রয়েছে তা না মানাই এখন রাজ্য সরকারের দস্তুর হয়ে উঠেছে।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।